বন্ধ হোক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় উল্লেখ করেন যুদ্ধ কোনো দেশের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে না, মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। তিনি সম্প্রতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, আপনারা আর যাই করেন যুদ্ধ বন্ধ করেন। এ যুদ্ধ মানুষের মঙ্গল আনে না। এ অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিতা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধ আমরা চাই না।

গত বছরের অক্টোবরের শুরু থেকেই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। হামাসের যোদ্ধারা গাজা থেকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অপ্রত্যাশিতভাবে আক্রমণ করার পর এ যুদ্ধ শুরু হয়। ওইদিন বন্দুকধারীদের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার দাবি করে তেলআবিব।

হামাসের ওই হামলা ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। তারপর থেকে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। চলমান অভিযানে ইতোমধ্যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ এবং ৩৬৪ জন যুবক একটি সংগীত উৎসবে ছিল। এছাড়া ওই অভিযানে হামাসের যোদ্ধারা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। যার মধ্যে বিদেশি নাগরিকও ছিল। হামাসের হামলার সময় ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার প্রমাণও গণমাধ্যমে এসেছে। যদিও ইসরায়েলের এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস।

হামাস ২০০৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হলেও তাদের পুরো ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় বসতে দেয়নি পশ্চিম তীর কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ফাতাহ। মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন দলটি মূলত ইসরায়েল ও পশ্চিমা সমর্থিত। এরপর থেকে গাজা উপত্যকা শাসন করছে হামাস। সংগঠনটির একটি সশস্ত্র শাখা রয়েছে এবং সর্বশেষ যুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত এর ৩০ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে ধারণা করা হয়। ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন শীর্ষক এ দলটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। তাছাড়া হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার প্রত্যাখ্যান করে এবং তার ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত ৭ অক্টোবরের হামলার কারণ হিসেবে হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি অপরাধযজ্ঞকে দায়ী করেছে। অর্থাৎ তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা হামলাকে ন্যায্যতা দিয়েছে।

হামলার কারণের মধ্যে রয়েছে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। কারণ ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থেকে আল-আকসা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হামাস ও ফিলিস্তিনিরা। এছাড়া হামাস ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তি চায়। সেই সঙ্গে ইসরায়েল ও মিশর গাজা উপত্যকার ওপর যে অবরোধ করে রেখেছে তারও অবসান চায় সংগঠনটি। উভয় দেশই নিরাপত্তার অজুহাতে গাজার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে এবং আরও অনেক মারাত্মক হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল ২০০৮ ও ২০১৪ সালে হামাস তথা গাজার ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে সেনা পাঠিয়েছে। ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য হামাসকে, আবার কিছু ক্ষেত্রে শুধু সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ইরান হামাসকে অর্থায়ন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমর্থন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

হামাসের সর্বশেষ হামলার জবাবে ইসরায়েল অনতিবিলম্বে গাজায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক পরিসরে বিমান হামলা শুরু করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো হামাসকে ধ্বংস করা এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা। হামলা শুরুর তিন সপ্তাহ পর ইসরায়েল গাজায় স্থল আগ্রাসন শুরু করে। তাদের বাহিনী সাগর থেকেও গাজায় বোমাবর্ষণ করেছে। আক্রমণগুলো প্রাথমিকভাবে উত্তর গাজা, বিশেষ করে গাজা শহর এবং এর নিচে হামাসের তৈরি টানেলকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। এই টানেলগুলোকে ইসরায়েল হামাসের সামরিক শক্তির কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে।

গত বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান প্রসারিত করছে। এজন্য সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেয় তারা। এছাড়া পশ্চিম তীরেও অনেক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করতে ৮০ বছর সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যয় হতে পারে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার। এমনটি জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি জানায়, গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় যে পরিমাণ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, তা এই শতাব্দীতে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সংস্কারকাজ শেষ করতে পরবর্তী শতাব্দী পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাত মাস ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে কয়েক হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। হামলায় জনাকীর্ণ উপত্যকার অনেক উঁচু কংক্রিটের ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। খবরে প্রকাশ প্রায় ৮০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলি হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিক্ষোভে উত্তাল। কোনো কোনো ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও সংঘর্ষ হয়েছে ইসরায়েলপন্থি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের আইনের শাসন বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বাইডেন এ আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা একটি কর্তৃত্ববাদী জাতি নই, যেখানে জনগণকে চুপ করিয়ে দিই বা ভিন্নমত দমন করি। তবে আমরা আইনহীন দেশও নই। বাইডেন বলেন, একটি সুশীল সমাজ এবং শৃঙ্খলা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে ইসরায়েলপন্থি ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসে পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে দুই হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান বিক্ষোভ আরও দানা বাঁধছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্তত আরও ছয় দেশে।

যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএল ও ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থিরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁবু গেড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউবেক ক্যাম্পাসে। দেশটির মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থিরা বিক্ষোভ করছেন। এছাড়া মিসরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি জন কায়রো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে। এরপর ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো অ্যান্ড সারবোন ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ ক্যাম্পাস এবং ইতালির স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও হয়েছে বিক্ষোভ।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন-বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এ বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী শিবির বসিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে চলা এ বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন। কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এর মধ্যেও ক্যাম্পাসগুলোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দেওয়া ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে অভিযানে গাজায় যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বহু বিক্ষোভকারীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তিকে বর্জনের ডাক দিয়ে চলছে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গেঁড়ে ধারাবাহিক প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় সোমবার বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে শিবির ছেড়ে না গেলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলটিমেটামে কাজ না হওয়ায় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অভিযান চালায়। পুলিশ প্রবেশের পর ২ ঘণ্টার মধ্যে হ্যামিল্টন হল ও ওই তাঁবু শিবির থেকে সবাইকে হটিয়ে দিয়ে সেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এসময় বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে পাহারা দিয়ে পুলিশের বাসগুলোতে তুলে নেওয়া হয়।

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই মিশর সফর করবে। মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেরের সঙ্গে ফোনালাপের পর বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান হামাসপ্রধান। গাজায় যুদ্ধবিরতির ইস্যুতে আলোচনার জন্য মিশর যাচ্ছে একটি প্রতিনিধি দল। কামেলের সঙ্গে ফোনালাপ করে হামাস গোষ্ঠীকে হানিয়াহ নিশ্চিত করেছে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে। সেই বিষয়ে আমাদের অবস্থান জানানোর আগে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কায়রোতে পৌঁছাবে হামাসের প্রতিনিধি দল।

এদিকে সমঝোতার খুব কাছের এক ফিলিস্তিন কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে মিশর সফরে যাবেন হামাস প্রতিনিধি। কায়রোতে অনুষ্ঠাতব্য আলোচনার লক্ষ্য হচ্ছে একটি পরিপক্ব চুক্তি করা, যা ফিলিস্তিন জনগণের দাবি অর্জন এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করবে। হামাসের আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতার মাধ্যমে একটি পরিপক্ব চুক্তি করার জন্য আলোচনা করতে সম্মত হয়েছেন হানিয়াহ ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী। গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে স্থবির আলোচনা পুনরায় শুরু করেছে মিশর।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ইরান-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ কখনো কোনো সমাধান দিতে পারে না। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। নারী-শিশু-সব বয়সী মানুষের শিকার হয়ে জীবন পর্যন্ত দিচ্ছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ইরান-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধের ভয়াবহতা আমি জানি। বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ চায় না। আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যুদ্ধের কারণে যারা এখনো বিভিন্নভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের দিকে দেখে বিশ্বনেতাদের যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ যুদ্ধ নয়, শান্তির পক্ষে এবং আমরা চাই, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা নিরসনে যেসব রাষ্ট্রের ভূমিকা রাখার কথা, তারা কার্যকর ভূমিকা নিক এবং গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং বর্বর উপায়ে এলাকাগুলো উচ্ছেদ করায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে। এ ধরনের জঘন্য কাজের শাস্তি হওয়া উচিত যাতে গাজায় যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা আবারও তাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপে সম্মত হওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনরায় দেখে নেওয়া এবং দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে স্থায়ী শান্তি আনবে।

আমরা চাই যেকোনো সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক। সবার কাছে আমার আবেদন: যুদ্ধ বন্ধ করুন; অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। প্রতিটি দেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিতে বসবাসের অধিকার ফিরে পাক। এতেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *