জীবনের সন্ধানই হোক মুক্তির পথ আত্মহত্যা নয়


হীরেন পণ্ডিত: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এর তিন নম্বর এজেন্ডায় সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বাদ দিয়ে আমরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করতে পারব না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ করে উপশহর, গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ জনবল তৈরিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ জরুরি। জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আরো দায়িত্ব নিতে হবে।

২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, পরে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া এবং এখন মাংকিপক্স এসব বিভিন্ন মহামারি ও অতিমারিতেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং বাংলাদেশেও মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কম নয়, এসকল মহামারি ও অতিমারিতে। অনেক সময় বিভিন্ন রকম মহামারি ও অতিমারির ব্যাপ্তি এতই বেশি থাকে যে, তা শারীরিক স্বাস্থ্যের বিপন্নতাকে অতিক্রম করে মানসিক, সামাজিক আর অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলে।

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, সুতরাং সবাইকে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। আত্মহত্যা শব্দটি শুনলে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া। কাগজ-ধুলাবালু উড়ছে। চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না। নিজেকে যেন আশপাশের পরিবেশ থেকে গুটিয়ে নিতে হয়। কোনো ঝোড়ো হাওয়া থেকে বাঁচতেই কি মানুষ এই পথ বেছে নেয়? পৃথিবীর যে অপরূপ সৌন্দর্য, তাকে কি আর কাছে টানে না? কিন্তু গুটিয়ে নেওয়ার পথ কোনো পথ নয়। জীবনের সন্ধানে খুঁজে নিতে হবে কোনো নিরাপদ স্থান। আত্মহত্যা নয়, জীবনের সন্ধানই তাকে দেয় মুক্তির পথ।

মনোরোগ, মানসিক চাপের কারণে অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। বিষণœতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন হ্যালুসিনেশন, ডিলিউশন এবং নেশার ঘোরে অনেক সময় আত্মহত্যা করে থাকে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মনোরোগ ও চাপ ছাড়াও মান-অভিমান, বিরহ-বেদনা, দারিদ্র্য, যৌতুকপ্রথা, ধর্ষণ, অপমান এসব কারণে অনেকে এই পথ বেছে নেয়। এ ক্ষেত্রে শরীরে সিরোটনিন, ডোপামিন, নন-এড্রেনালিনের ঘাটতি পাওয়া যায় বলে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তরুণদের মধ্যে অধিকাংশই মানসিক বিষন্নতায় ভোগেন। অধিকাংশ সময় মন খারাপ থাকা, পছন্দের কাজ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। অস্বাভাবিক কম বা বেশি ঘুম হওয়া, কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা, সবকিছুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা। এ সমস্যাগুলো তীব্র আকার ধারণ করলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তাদের মানসিক অস্থিরতার বিষয়ে কারও সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে না পারাই মূল কারণ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ‘বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৭ ভাগ মানুষ বিষণœতায় ভোগেন। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে বিষন্নতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ১৫ হাজারেরও বেশি।’ চিকিৎসকদের মতে, বিষন্নতায় একই সাথে মানসিক ও শারীরিক রোগ। এখন এ পরিসংখ্যানের সূত্র ধরেই প্রশ্ন জাগে, এ বিষণœতায় আক্রান্ত রোগী তথা মানসিক রোগীর জন্য দেশের পরিবেশ কতটুকু অনুকূল কিংবা আদৌ অনুকূল কিনা? পরিবেশ বলতে এখানে পারিবারিক, সামাজিক তথা গোটা জাতীয় পরিবেশকে বোঝানো হয়েছে।

সুস্বাস্থ্য হল শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা দু’টোই একে অপরের পরিপূরক। শারীরিক সুস্থ্যতা ব্যতিরেকে মানসিক সুস্থ্যতা অর্জন সম্ভব নয়। অপর পক্ষে মানসিক অসুস্থ্যতা শারীরিক সুস্থ্যতার উপর প্রভাব ফেলে। শারীরিক অসুস্থ্যতা দৃশ্যমান হলেও মানসিক অসুস্থ্যতা প্রাথমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান নয়। এটি দৃশ্যমান হয় যখন এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক এ সমস্যা তার পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার কারণ হিসাবেও প্রতীয়মান হয়। মানসিক সসমস্যার মধ্যে আর একটি হচ্ছে ‘অ্যাংজাইটি অর্থাৎ দুশ্চিন্তা’।

ফলে এই সংকট সমস্যার সমাধান কবে হবে কেউ জানেনা। কঠিন এই বাস্তবতায় কী হবে এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। করোনা সংক্রমণজনিত এ সংকটকালীন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সার্বিক সুরক্ষা ও জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম এবং জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এ সকল পদক্ষেপ অর্থনীতির চাকা চলমান রাখতে অনেক অবদান রেখেছিলো।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই কম বেশি মানসিক চাপের মাঝে থাকেন। এর মধ্যে প্রায় ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ যুব ও যুব নারী বিভিন্ন প্রকার মানসিক চাপে থাকেন। এ ধরনের মানসিক অস্থিরতায় ভুগে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ শারীরিকভাবে নিজের ক্ষতি করছেন। মানসিক বিভিন্ন চাপের ফলে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা যায়। আমাদের দেশে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগের সৃষ্টি করে। মূলত মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা, আত্মহত্যার কারণ চিহ্নিত করা এবং তার সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার জন্যই অনেকে কাজ করছেন। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট ১৪ হাজার ৪৩৬ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিলো। ৩২২টি আত্মহত্যার কেস স্টাডির প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের ৪৯ শতাংশেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আর এর ৫৭ শতাংশই নারী।

মন খারাপ হলে বা বিষণœ হলে বন্ধুদের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা শেয়ার করেন। অধিকাংশই দৈনিক স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করেন যা মানসিকভাবে তাদের বিপর্যস্ত করে তুলছে। অনেকেই দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করেন। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য তাদের দৈনন্দিন কাজগুলোকে বাধাগ্রস্ত করেও বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ৯১ দশমিক ৪ শতাংশই কখনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেননি।

মহমারি ও অতিমারি সময় কিংবা নানা কারণে সময়ে তরুণ ও যুবকরা যে মানসিক চাপজনিত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে- পড়াশোনা ও কাজে মনোযোগ হারানো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, একাকী অনুভব করা, অনাগ্রহ সত্তে¡ও পরিবার থেকে বিয়ের চাপ, আর্থিক সমস্যা, অতিরিক্ত চিন্তা করা, মোবাইল আসক্তি, আচরণগত সমস্যা, চাকরির অভাব, কাজের সুযোগ না পাওয়া, সেশনজট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু ইত্যাদি তরুণ ও যুবকদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

একাধিক গবেষণা বলছে করোনায় সংক্রমিত মানুষের প্রতি পাঁচ জনের একজনের মধ্যে মানসিক সমস্যা যেমন বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা, সাইকোসিস ইত্যাদি দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার অসুখে আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ উদ্বিগ্নতা, বিষণœতা, আতঙ্ক সৃষ্টির হার সাধারণ সময়ের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি অসুস্থ্যতা থেকে সেরে উঠলেও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি থেকে যায়।

সাধারণ সময়ের চেয়ে অসুস্থ্য থাকার সময়ে মানসিক সমস্যা বাংলাদেশেও বাড়ে। বিভিন্ন সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মরে যাবার ভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততা, চাকুরি হারিয়ে বেকারত্ব, এমনকি মহামারি ও অতিমারি নিয়ে ভ্রান্ত-নেতিবাচক সামাজিক বৈষম্যের কারণে বাড়ছে মানসিক সংকট। আর মহামারি ও অতিমারি চিকিৎসায় নিয়োজিত সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি অতিমারি ও মহামারির সময়ে বিশ্বজুড়ে বেড়ে যায় পারিবারিক সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা।

সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু, সংক্রমিত হলে চিকিৎসা নিয়ে আতঙ্ক, পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের ভয়, আইসোলেশনে থাকার সময় একাকিত্ব মনের ওপর চাপ বাড়ায়, পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর আতঙ্ক, গণমাধ্যমে ভীতিকর সংবাদ, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এসব কারণে ঘুমের সমস্যা, ঘুম না আসা, বার বার ঘুম না হওয়ার কারণে সমস্যা তৈরি হয়। এ কারণে মন খারাপ থাকা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অস্থিরবোধ করা, আতঙ্কিত হয়ে মৃত্যুভয়ে ভীত হওয়া।

তবে মনে রাখতে হবে এই সংকটময় মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়া, মানসিক চাপে পড়া বা হতাশবোধ করাই স্বাভাবিক। পুরো বিশ্ব একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে গেলে কিন্তু তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে আতঙ্ক আর মানসিক চাপ তার করোনাকে আরো জটিল করে তুলবে। তাই সকলকে মানসিক চাপ মোকাবিলায় দক্ষতা বাড়াতে হবে।

এ সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি যে কোন বিষয় নিয়ে অত্যধিক দুঃশ্চিন্তা করে। পরিবার পরিজন অথবা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারানোর ভয় তাদের সর্বদা উদ্বিগ্ন করে রাখে। এমনকি একসময় অন্যের ওপর মারাত্মক সন্দেহ প্রবণতা কাজ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাভাবিক মনে হলেও দীর্ঘদিন এ সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির পরবর্তীতে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনযাপন ব্যাহত হতে পারে। মানসিক অসুস্থ্যতার মধ্যে আরেকটি অবস্থা হচ্ছে ‘ডিপ্রেশন বা বিষণœœতা’। এক জরিপে দেখা গেছে বিশ্বে প্রায় ১৯ বিলিয়ন লোক বিষণœতাজনিত মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

যেখানে মনোরোগ বললেই আমরা বুঝে থাকি কোনো এক লজ্জাজনক অসুখ। শরীরের অন্য সকল অসুখের মতো মনেরও অসুখ হতে পারে, এ বিষয়গুলো আমাদের সমাজে সমভাবে স্পষ্টও নয় গ্রহণযোগ্যও নয়। বরং যে মানুষটি এ সমস্যায় ভোগেন তাকে নিয়ে তার পরিবার সহজ হতে পারে না। পরিবার তাকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। যার নানা কুপ্রভাব পড়ে ঐ ব্যক্তির জীবনের ওপর। পরিবর্তিত মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার মধ্যদিয়ে যাওয়া ঐ মানুষটিকে নিয়ে সবসময় পরিবারের সকলে জড়সড় হয়ে থাকে।

আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। জীবনে চলতে হবে সাহসিকতার সঙ্গে, নির্ভয়ে, নির্ভারে। ছোট এই জীবনটাকে নিজ হাতে আরও ছোট করা কেন? কষ্টকর করা কেন? মনের আকাশে যদি কালো মেঘ উঁকি দেয়, তখন আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা জরুরি। চারপাশের সমস্যাগুলোকে ছোট মনে করে নিজের জন্য বাঁচতে হবে। অন্যের জন্য নিজেকে কেন আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আত্মহত্যা কোনো সমাধান দিতে পারে না। তিনিই আসল মানুষ, যিনি সমস্যার মধ্যে থেকে তার মোকাবিলা করেন।

পায়ের তলার মাটি শক্ত করা প্রয়োজন। অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না চেপে নিজের প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেওয়া উচিত ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সকলের। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটানো। আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের মধ্য দেখা যায়, তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

কখনও কি আমরা ভেবে দেখেছি আমাদের আশপাশে থাকা একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা গরিব দিনমজুর মানুষ জীবনের শত প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও খুশি মনে কীভাবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে? অথচ অনেকেই সামান্য কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য আত্মহত্যার কথা ভাবেন! আত্মহত্যা মানেই সবকিছুর সমাধান নয় বরং জীবনযুদ্ধে হার মেনে নেওয়া। আপনার বা আপনার আপনজনের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণ আচরণ দেখা দিলে অবশ্যই কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

সফল, প্রতিভাবান, আপাতদৃষ্টিতে ভীষণ সুখী হাসিখুশি মানুষদেরও কষ্ট থাকতে পারে। এমন ভয়াবহ কষ্ট যা থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষা অস্তিত্বহীনতার ভাবনাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চাইলেও সবার সঙ্গে কথা বলা যায় না। বেশিরভাগ মানুষ নিজের ভেতর সবকিছু চেপে রেখে চলে সম্মানের জন্য, ইমেজ রক্ষার জন্য। এক্ষেত্রে সরকার কি করতে পারে? তবে বয়স্কদের জন্য কি করা যায় সেটি ভেবে বের করতে হবে। সেখানে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবতা কঠিন। অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারকে আরো গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে।

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *