মানবিক মূল্যবোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে

আমাদের সমাজে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় বেড়েই চলছে। নিজেদের প্রাপ্তির জন্য আমরা খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি? সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার কোনো চেষ্টাই আমরা করি না! শুধু দৌড়াচ্ছি। এ নিয়ে ভাবার আমাদের সময় নেই। আমরা কেমন জানি একটা বেড়াজালের
মধ্যেই রয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে কি আমরা খুব একটা এগোতে পারছি? দু-একটি ভালো অর্জন আমাদের আছে! সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায় নৈতিক অবক্ষয়ের কাছে, সামাজিক অবক্ষয়ের কাছে। এই নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সব অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অর্জনকে ধরে রাখতে পারছি না।
এই যে আমাদের নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম আছে, আমরা কি তাদের কথা ভাবি? তারা ভবিষ্যতের হাল ধরবে, তাদের সেভাবেই তৈরি করতে হবে আমাদের। প্রত্যেক মা-বাবা কি তাঁদের সন্তানের খোঁজখবর রাখেন? সন্তানকে কিভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে কি ভাবেন? আমরা শুধু টাকার পেছনে দৌড়াই, এর জন্য আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি! কিন্তু একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে রাষ্ট্রের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে আমরা কি সে দায়িত্ব পালন করছি? সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে!
খাবার, ওষুধ, শিক্ষাসহ সব কিছুতেই এখন ভেজাল, দুর্নীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এই ভেজাল ও দুর্নীতির হাত থেকে আমাদের বের হওয়ার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে কাজ করা এবং মানুষকে সংস্কৃতিবান হিসেবে গড়ে তোলা। নৈতিকতার শিক্ষা ও প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চায় আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমাদের সমাজে মেধা ও মেধাবীর সংখ্যা দিন দিন কি হ্রাস পাচ্ছে? আর সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, এ জন্য আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের প্রয়োজন মেধার বিকাশ এবং নতুন নতুন চিন্তার উন্মেষ ও তার বিকাশ ও প্রসার ঘটানো। আমাদের প্রয়োজন আদর্শনিষ্ঠ ও সর্বজনীন সংস্কৃতিচর্চার।
স্বভাবতই মেধা ও মননের সার্বক্ষণিক চর্চা অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতার পথ ছেড়ে কষ্টকর বিকল্প পথ ধরতে কার মন চায়? প্রয়োজনও বা কী—এটাই মনে করে অনেকে। আর মাদের যেভাবে আগের অবস্থা চলে এসেছে, সে অবস্থা থেকে খুব একটা বের হওয়ার আগ্রহ আমরা প্রকাশ করি না। তাই প্রকৃত মেধাবীর সংখ্যা আমাদের সমাজে ক্রমেই কমে আসছে। তবু নেহাত প্রয়োজনের খাতিরে মেধাবীদের বড় একটি অংশ বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে উন্নত জীবনের আশায়, ভালোভাবে প্রথম শ্রেণির জীবন যাপন করার জন্য। এখানেও লক্ষ্য একটাই। জীবন-জীবিকায় বেশি আয় করে সূর্যের আলোয় নিজেকে উজ্জ্বল করে তোলা। এ দেশের সংস্কৃতি তাদের আকর্ষণ করে না বা উন্নত জীবনের আশায় এগুলো ত্যাগ করা এবং বিদেশে চলে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য। আমাদের সংস্কৃতিচর্চায় ও সংস্কৃতি অঙ্গনে মেধাবীর অভাব রয়েছে?
এমন সব কারণে আমাদের সমাজে মেধাবী কম না হলেও আদর্শনিষ্ঠ এবং সৎ ও নীতিপরায়ণ মেধাবী প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। কমে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী ধারার জনস্বার্থবাদী চিন্তাবাদীদের সংখ্যা। স্বভাবতই হ্রাস পাচ্ছে বা শক্তিহীন হচ্ছে অনুরূপ গুণের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো জনস্বার্থবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অনুরূপ রাজনৈতিক শক্তির অভাবও এই সাংস্কৃতিক শূন্যতার অন্যতম কারণ। অভাব সংস্কৃতি-রাজনীতির পরস্পর নির্ভরতার। আর এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণের পথ দেখাতে পারে প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, যা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়কে দূর করে জাতিকে নতুন যুগের পথ দেখাতে পারে।
মানুষ বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। যখন সে আইন ও বিচারক্ষমতাসম্পন্ন থাকে তখন সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব, আর যখন সে আইন ও বিচারক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন সে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম প্রাণী। নৈতিক ও মাজিক অবক্ষয়ের দিক থেকে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। চলুন, আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াই, নৈতিক শিক্ষায়
শিক্ষিত হয়ে প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চায় মনোনিবেশ করি। আমাদের সুকুমারবৃত্তিগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে, নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে আমাদের মূল্যবোধকে জাগিয়ে বাংলাদেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই, যার জন্য ৩০ লাখ শহীদ আত্মত্যাগ করেছেন, অসংখ্য মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসুন আমরা ব্রতী হই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *