প্রযুক্তির অর্জন ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ


হীরেন পণ্ডিত

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আধুনিক রূপই ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রথমে এ সম্পর্কে মানুষের ধারণা অস্পষ্ট থাকলেও বর্তমানে মানুষের আর্থ-সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তির উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসেন। তিনি ১৯৭২ সালে শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁর সময়ে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তিনি।

এখন বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার বাংলাদেশে। শুধু তথ্যের সুরক্ষাই নয়, বছরে সাশ্রয় হচ্ছে ৩৫৩ কোটি টাকা। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জাতীয় ডাটা সেন্টার। শুধু দেশীয় তথ্যের সুরক্ষা নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশের এই অর্জন এক দিনে আসেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে উপলব্ধি এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে রপ্তানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, কারিগরি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভরতা শুরু হয়। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসের যুক্ততা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উত্পাদনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বে উন্নয়ন দারুণ গতি পায়। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দেশ পরিচালনায় এসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশে গুরুত্ব দেন।

২০১৫ সালে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার শিল্প উত্পাদনকারীদের ভর্তুকি, প্রণোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেণ গ্রহণ করেন। সরকারের বিভিন্ন নীতি সহায়তার ফলে বর্তমানে দেশে হাই-টেক পার্কসহ দেশি-বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ তৈরি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানিসহ দেশের মোবাইল ফোন চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করছে।

বর্তমানে সারা দেশে আট হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তিন শর অধিক ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা জনগণ পাচ্ছে। একসময় প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি এমবিপিএস ৩০০ টাকার নিচে। দেশের ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিস একই নেটওয়ার্কের আওতায়। তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে পৌঁছেছে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট।

দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর্থিকসেবায় মানুষের অন্তর্ভুক্তি রীতিমতো বিস্ময়কর। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার, এটিএম কার্ড ব্যবহার শুধু ক্যাশলেস সোসাইটি গড়াসহ ই-গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে তা নয়, ই-কমার্সেরও ব্যাপক প্রসার ঘটাচ্ছে।

স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে আইডিয়া প্রকল্প ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ কম্পানি লিমিটেডসহ সরকারের নানা উদ্যোগে ভালো সুফল দেখা দিচ্ছে। দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। ই-গভর্নমেন্ট কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। ৫২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত রয়েছে।

২০২৫ সাল নাগাদ যখন শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবে, তখন নাগরিকদের সময়, খরচ ও যাতায়াত সাশ্রয় হবে। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। ৩৯টি হাই-টেক ও আইটি পার্কে এরই মধ্যে নির্মিত ৯টিতে দেশি-বিদেশি ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগ এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ৩২ হাজার। ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে টিকা কার্যক্রম, টিকার তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে টিকা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয় এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে। ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করা এবং সরকারি সেবার শতভাগ অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা, আরো ৩০০ স্কুল অব ফিউচার ও এক লাখ ৯ হাজার ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি, ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার এবং ২৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যে প্রসার ঘটেছে, তাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যেই সরকার বাংলার আধুনিক রূপ জ্ঞানভিত্তিক উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করা হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট উেক্ষপকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এ ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। দেশের সব অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের জলসীমা, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া এর কাভারেজের আওতায় রয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে খুব দ্রুত। প্রযুক্তির এই প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে, আবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। ধনী ও গরিব দেশের পার্থক্য বেড়ে যেতে পারে। কাজগুলো ভাগ হয়ে যাবে অদক্ষ-স্বল্প বেতন ও অতি দক্ষ-অধিক বেতন, এসব শ্রেণিবিভাগে দক্ষ ব্যক্তিরা কাজ পাবে, অদক্ষ ব্যক্তিরা বেকার হয়ে যেতে পারে।

এসব স্মার্ট যন্ত্র বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে পোশাকশিল্প। প্রায় ৬০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন এ খাতে। রোবট ও স্মার্ট যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে এসব শ্রমিকের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যেতে পারেন। শুধু পোশাকশিল্প নয়, আরো অনেক পেশার ওপর নির্ভরতা কমে আসবে, রোবট ও যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। মেধাভিত্তিক পেশার প্রয়োজন বাড়বে, যেমন—প্রগ্রামার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ইত্যাদিতে দক্ষ লোকের চাহিদা বাড়বে। আমাদের দেশে দক্ষ প্রগ্রামারের অনেক অভাব আছে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে আসবে। আমাদের দক্ষ প্রগ্রামার তৈরি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন। ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের জন্যই দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের কারিগরি বিষয়গুলোতে দক্ষ হয়ে যেতে হবে। আর সে জন্যই কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও পরিবর্তন করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পাঁচটি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এগুলো হলো ডিজিটাল সেন্টার, পরিষেবা উদ্ভাবন তহবিল, সহানুভূতি প্রশিক্ষণ, টিসিভি এবং এসডিজি ট্র্যাকার।

তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে তরুণরা ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক পরিষেবা এবং অন্যান্য সংস্থা তৈরি করছে। এ ছাড়া ই-কমার্স, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবর্তিত জীবনব্যবস্থার মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে অগ্রগামী হতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো

20 thoughts on “প্রযুক্তির অর্জন ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

  1. ElitePipe Plastic Factory in Iraq sets the standard for excellence in the plastic industry. From their cutting-edge manufacturing processes to their top-notch customer service, they are the go-to choice for all your plastic needs.” 2. “Looking for durable and reliable plastic products in Iraq? Look no further than ElitePipe Plastic Factory. With their wide range of high-quality pipes and fittings, they have become the trusted partner for businesses and individuals alike.” 3. “ElitePipe Plastic Factory is revolutionizing the plastic manufacturing scene in Iraq. Their commitment to innovation and quality shines through in every product they create. Experience the difference of their superior craftsmanship and attention to detail.” 4. “When it comes to plastic solutions, ElitePipe Plastic Factory in Iraq is the name you can trust. Their extensive industry knowledge and dedication to customer satisfaction make them a leader in the market.” 5. “For all your plastic project needs, ElitePipe Plastic Factory in Iraq has you covered. Their comprehensive range of products, combined with their expertise, ensures that you’ll find the perfect solution for any application.” 6. “Choose ElitePipe Plastic Factory in Iraq and experience the seamless integration of quality, reliability, and affordability. Their competitive prices and exceptional product performance make them the preferred choice for customers across the region.” 7. “ElitePipe Plastic Factory in Iraq goes above and beyond to deliver exceptional customer service. From assisting with product selection to providing timely delivery, they strive to exceed your expectations at every step.” 8. “Trust ElitePipe Plastic Factory in Iraq to provide you with environmentally friendly plastic solutions. Their commitment to sustainability is evident in their manufacturing processes and the materials they use.” 9. “ElitePipe Plastic Factory’s dedication to continuous improvement ensures that you receive the latest advancements in plastic technology. Stay ahead of the curve with their innovative product offerings in Iraq.” 10. “When quality and reliability matter, ElitePipe Plastic Factory in Iraq stands out as the premier choice. Their stringent quality control measures guarantee that you receive products of the highest standards, backed by their solid reputation.”

  2. naturally like your web site however you need to take a look at the spelling on several of your posts. A number of them are rife with spelling problems and I find it very bothersome to tell the truth on the other hand I will surely come again again.

    1. We are facing challenges with Unicode, we did not face any problem with the spelling Bijoy or word version. Many people are working on it hopefully the they will find a solution on it. When we transferred the Bijoy word write-up into Unicode for using for online and website some spelling either broken or you can’t write properly. Around 80% write also posted on the English version after publication in English Newspaper. But Unicode consortium is working to minimize the challenges of spelling mistake. Sorry for you inconvenience.

  3. Normally I do not read article on blogs, but I wish to say that this write-up very forced me to try and do so! Your writing style has been surprised me. Thanks, quite nice article. Woah! I’m really enjoying the template/theme of this website. It’s simple, yet effective. A lot of times it’s challenging to get that “perfect balance” between superb usability and visual appearance. I must say you’ve done a fantastic job with this. Also, the blog loads super quick for me on Opera. Outstanding Blog! I just wish to give a large thumbs up for your wonderful data you’ve got right here on this publish. I’ll be coming back again for your website for a lot more quickly.

    스포츠토토

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *