স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আ’লীগের তরুণ ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে


হীরেন পণ্ডিত

আওয়ামী লীগকে তৃণমূল বিস্তৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত কন্যা শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে হাল ধরেছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তারাই প্রকৃত আওয়ামী লীগার। কারণ তাদের ত্যাগ অনেক বেশি। তারাই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং ওয়ান-ইলেভেনে ভূমিকা রেখেছেন”। এটাই দলের কঠিন বাস্তবতা। সুবিধাবাদীরা যখন যে ক্ষমতায় থাকে সেখানেই ভিড় করে। অনুপ্রবেশকারীদের কারণে রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণ ও দুর্নীতির নেটওয়ার্কে ওরা যেভাবে নিজেদের জড়ায় তাতে দলের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগে বিভিন্ন দল থেকে এসে অনেকেই ক্ষমতা ভোগ করেছেন। তারা কতটা আওয়ামী লীগার হতে পেরেছেন সেটা সময় বলতেও পারেনি এবং প্রমাণিতও হয়নি। তারা কখনোই দলের ত্যাগী কর্মীদেরও হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে পারেননি মনও জয় করতে পারেন নি। সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সকল রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাখছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটে। জন্মকাল থেকে শুরু করে এই ৭৩ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের স্বাক্ষর বহন করে। এখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন। এই অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন। তাই এখন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। সরকার যে ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যেভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে, দল হিসেবে ঠিক ততটা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে কিনা তা সময় বলবে, তবে বলা যায়, দল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এখনো পৌঁছুতে দলের আরো সময় লাগবে। মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় বা অন্তরে স্থান করে নিতে আরো অনেক কাজ করতে হবে। গুণীজনরা বলেন “আওয়ামী লীগ জিতলে একা জেতে, আর হারলে পুরো বাংলাদেশ হেরে যায়,”। এর মর্মার্থ আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা কর্মীদের মনে রাখতে হবে, জনগণ আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে এবং সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে না পারলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এ বিষয়টি নেতা কর্মীরা বিশেষ করে বিপথগামীরা যত মনে রাখবেন ততই দলের জন্য এবং দেশের জন্য মঙ্গল। প্রতিটি নেতা কর্মীর মনে রাখা উচিত দেশ পরিচালনা একটি নৈতিক দায়িত্ব এই দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা দরকার। কিন্তু আমরা কি দেখি দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ, বিরোধ, অন্তকোন্দল এর প্রভাব স্থানীয়ভাবে সাধারণ জনগণকেও স্পর্শ করে। হাটে মাঠে ঘাটে, বাজারে, শহরে বন্দরে, অফিসে, আদালতে, ঘরে-বাইরে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে তারা এমন একটি দলের সাথে জড়িত যে দলটি দেশের উন্নয়নের জন্য এদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
কোথাও কোথাও দলের বিপথগামী নেতা কর্মী ও ছাত্রদের খবরও গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে আসে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে দলের অবস্থান, সরকারের অবস্থান, মনোভাব জানিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দেন, সাংগঠনিকভাবে কখনো কখনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি খুব যে উন্নতি হয়, বা অবস্থান বদলায় তা মনে হয়না। তাই এখন আওয়ামী লীগের সামনে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। একদিকে দলকে সুসংগঠিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা, অন্যদিকে দলের তৃণমূলে যেসব জঞ্জাল আছে, ঝামেলা আছে, সমস্যা আছে তা দ্রুতই পরিষ্কার করা, অন্তকোন্দল, বিবাদ-বিরোধ, বিভক্তি মিটিয়ে সুষ্ঠু ধারায়, নির্বাচনমুখী করে দলকে শক্তিশালী করা। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল সম্পর্কে বিশেষ করে জনগণের উন্নয়নে, কল্যাণে গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরা অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক, বঙ্গবন্ধুপ্রেমী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্যতম কাণ্ডারি, আওয়ামী লীগকে ‘দলের তৃণমূলের কোন্দল, বিরোধ মিটিয়ে স্থানীয় সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সমাজসেবায়, মানবসেবাধর্মী কাজে তাদের সকলকে সম্পৃক্ত করা দরকার। এতে স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন কাজে গতি আসবে, কাজের মান ভালো হবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা-সখত্য বাড়বে, বাড়বে দলের ও সরকারের জনপ্রিয়তা।
আসলে মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই আর আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অন্য যে কোনো দলের চেয়েই বেশি। জনগণ মানবিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার এবং দেশ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছে প্রত্যাশা করে। আসলে, প্রত্যাশা বেশি হলে, হতাশার কিছু কথা থাকে। হতাশা ঘটে যখন প্রত্যাশা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান থাকে। হতাশা কাটিয়ে উঠতে, সবাইকে অবশ্যই মানুষের প্রত্যাশার কাছাকাছি থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং সরকার করোনা মহামারীকে ভালোভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামাল দিয়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক ইতিবাচক অর্জনও রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি রয়েছে। ১৪ বছর ক্ষমতার মধ্যে থেকে দলের অনেক নেতাই তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। আবার অনেকের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা অপবাদ, অপপ্রচার। অপপ্রচারের ডামাডোলের মধ্যে আওয়ামী লীগের বেরিয়ে আসা কিভাবে বা নতুন নেতৃত্ব কি ভাবছেন তা নিয়ে আলোচনা বিস্তর, এ নিয়ে কৌতূহলও কম নয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৪২ বছর এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নানাবিধ সংকট ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে সংগঠিত করেছেন, ক্ষমতায় এনেছেন। কেবল দলই নয়, সারাদেশ ও দেশের মানুষকে তিনি জানেন এবং বুঝেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের রয়েছে তাঁর ওপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। সভাপতি শেখ হাসিনা দলের হাল ধরে আছেন। তিনি দলে থাকবেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা-এটাই।
বিশ্লেষকরা বলেন ত্যাগী নেতারা ব্যাকফুটে রয়েছেন। এখন আধিপত্য রয়েছে ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও নব্য আওয়ামী লীগারদের হাতে। তবে এগুলোতে অনেকের আক্ষেপ থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখেই সব কিছু বিচার করতে হবে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে এবং যারা রাষ্ট্রের প্রশাসনে ভূমিকা রাখায় অভিজ্ঞতা নিয়ে সাবেক সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত আছেন, এটা দেশ পরিচালনায় জন্য একটা ইতবিাচক ভূমিকা রাখছে তা হলফ করেই বলা যায়। তবে এই বিভিন্ন প্রবণতাগুলোর সমন্বয় করতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য আওয়ামী লীগের জন্য ভালো হবে এবং জনসেবায় আওয়ামী লীগ আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “কাজ করলে সমালোচনা আসবে, ষড়যন্ত্র থাকবে, কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐ তুলে ধরে শেখ হাসিনা আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে রাখা ছিল, যা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য তাদের বাজেট থেকে সরাসরি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবিশ্বাস্য বিজয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে একগুচ্ছ নতুন মুখ নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছেন। ২০২৪ সালের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের এক বছর আগে, দেশের মানুষ অবশ্যই তাদের অর্জন-অপ্রাপ্তির তুলনা করতে বসবে। শেখ হাসিনার ১৪ বছরের দেশ পরিচালনায় বাংলাদেশ কী পেল?
মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দু’টিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবেলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। একটি দেশের উন্নয়নে বিদ্যুতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতিদান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারেরই অবদান।
একটি দল টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার উদাহরণ বিশ্বে বিরল। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১৪ বছরে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। নিঃসন্দেহে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়র পেছনে তরুণ ভোটারদের সমর্থন প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের তৈরি নির্বাচনী ইশতেহারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। এখন এই বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, তরুণদের প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারকে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক ভঙ্গুরতা দূর করতে হবে। সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মানসম্মত পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে। সেবাগুলোর নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করা যে কাজগুলো মানসম্মত হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষা সম্প্রসারণের অব্যাহত ধারার বাইরে কারিগরি শিক্ষা এবং উপানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। বিদেশে শ্রমনির্ভর মানবসম্পদ রপ্তানির পাশাপাশি দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
তরুণদের দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের পথ তৈরি না করলে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হবে। উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চ দক্ষ যুবকদের বিদেশে চাকরি সৃষ্টির কথা ভাবতে হবে। বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য মানসম্পন্ন ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য প্রকৌশল, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি শিক্ষার মানকে আরও গতিশীল ও সময়োপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করতে হবে।
ঈর্ষণীয় অগ্রগতির কারণে বিশ্ব আজ বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাংলাদেশকে বলা হয় উন্নয়নের রোল মডেল। বিভিন্ন বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু সূচকে, এটি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২৩ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। স্বভাবতই এই চার বছরসহ টানা তিন মেয়াদের হিসাব তুলনা করে ইতিবাচক ফল পাবে দেশের মানুষ।
দলের নেতা-কর্মীদের নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, আগামী নির্বাচনে দলকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূল নেতাদের মুখে উঠে আসে এই কথাগুলো। তবে জনগণের প্রত্যাশা কতোটা পূরণ করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সেটা জনগণই বলবে। তবে নিরলস প্রচেষ্টা চলুক। সবার প্রত্যাশা এগিয়ে যাক, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠুক।
সরকারের উন্নয়নের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতেও আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমসাময়িক সমস্যা, বাল্যবিয়ে, কুশিক্ষা, সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখা দরকার। বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে তার ব্যাপারেও দল এবং সরকারি মহলকে সোচ্চার এবং সজাগ থাকতে হবে। নতুবা সরকারের অর্জন, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, জনগণের অর্জন সবই ভূলুণ্ঠিত হবে শেখ হাসিনার অর্জনও।’
বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তারপরও কিছু জায়গায় এসে এখন মানুষের অস্বস্তি রয়েছে। ক্ষমতায় থাকার দম্ভ স্থানীয় ও বড় নেতাদের অনেককে পেয়ে বসেছে। এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষদের সঙ্গে তেমন একটা সম্পৃক্ততা তৈরি করতে পারেননি। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি নিজেদের না শুধরে এখনও দাপটে বেড়ান, তবে দুঃস্বপ্নের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্বাচনের মাঠে সবাই থাকবে অনেক বিকল্প প্রার্থী থাকবে অনেক জোট থাকবে। সময়ের বাস্তবতায় মনে হয় অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ভোটারের বড় অংশ যাঁরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে পছন্দ করেন, তাদের অনেকেই দ্বিধান্বিত হতে পারেন। ভুক্তভোগী এবং বিরক্ত মানুষ দল নির্বিশেষে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচনই প্রত্যাশা করেন। ফলে জনগণের কাছে যাওয়ার বিকল্প নেই আওয়ামী লীগের। এ দায়িত্ব দলের ত্যাগী নেতা কমীদেরই নিতে হবে এবং মানুষের আস্থার জায়গাটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই কথাগুলো বিপথগামী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা যত দ্রুত বুঝতে পারবেন এবং এগুলো থেকে বিরত থাকবেন, ততই দেশের জন্য মঙ্গল, এদেশের মানুষেরও মঙ্গল হবে।

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *