হীরেন পণ্ডিত
ডিজিটাল শ্রমবাজারে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ
অনলাইন শ্রমবাজার বা ফ্রিল্যান্সিং খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মোট অনলাইন শ্রমবাজার বাংলাদেশের অংশ প্রায় ১৬ শতাংশ। গত এক বছরে দেশে ই-কমার্স খাতেও প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ইন্টারনেট প্রাপ্তি সহজ হওয়ায় ডিজিটাল অর্থনীতি দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে দেশে ইকমার্স খাতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী এক বছরে আরও পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ভারতের পর বর্তমানে অনলাইন কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বিশ্বে দ্বিতীয়। বিশ্ব অনলাইন ওয়ার্কার্সের (ফ্রিল্যান্সার) ১৬ শতাংশ বাংলাদেশের। করোনার কারণে যারা চাকরি হারিয়ে ছিলেন, তাদের অনেকেই উদ্যোক্তা হিসাবে ই-কমার্সে প্রবেশ করেছেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রধান হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি। এখন যারা বিশ্ব্যব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিবহণ সুবিধা দিচ্ছে, তাদের নিজস্ব কোনো যানবাহন নেই। যারা সবচেয়ে বড় হোটেল নেটওয়ার্ক সুবিধা দিচ্ছে, তাদের নিজস্ব কোনো হোটেল নেই। প্রতিদিন নিত্যনতুন প্ল্যাটফরম তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। দিনে দিনে অনলাইন লেনদেনও ব্যাপক বেড়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে অনলাইন পেমেন্টের পরিমাণ ছিল ১৬৮ কোটি টাকা, তা ২০২০ সালে এক হাজার ৯৭৮ কোটিতে দাঁড়ায়। ২০২১ সালে এটা প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পৌঁছেছে। গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ই-ক্যাব) সদস্য আছে এক হাজার ৩০০ জন। এর বাইরেও অসংখ্য উদ্যোক্তা রয়েছে। দেশের বর্তমানে প্রায় চার কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে। এ খাতেও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা ৫০ হাজার, ওয়েবসাইটভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা দুই হাজার। দেশে এখন ক্রিয়েটিভ ও মালটিমিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১৯ হাজার ৫৫২ জন।
এ খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যে ডিজিটাল ফ্ল্যাটফরমগুলো তৈরি হচ্ছে, তার জন্য রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক আছে কিনা; এখাতের জন্য ইনটেনসিভ আছে কি না; নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো রাজস্ব ছাড় আছে কি না; এরা করজালে আসছেন কি না-তা দেখতে হবে। এটাকে এটা সুষ্ঠু প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ই-কমার্স একটি উদীয়মান খাত। এ খাতে শুধু ভোক্তার স্বার্থই নয়, উদ্যোক্তার সুবিধা নিশ্চিতেও একটি নীতিমালা অপরিহার্য। এ ছাড়া এলডিসি উত্তরণে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ইকোনমি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিতিভাবে কাজ করতে হবে।’
সিপিডির প্রতিবেদনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরা হয়। যেমন-ডিজিটাল অর্থনীতিতে পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করা। সময়মতো সঠিক পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা। রিটার্ন পলিসি এবং ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও বড় চ্যালেঞ্জের।
আর উদ্যোক্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে-ডিজিটাল ডিভাইসের অভাব। দেশে গরিব জনসংখ্যার প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে চারজনের কম্পিউটার রয়েছে। এ ছাড়া, নীতি সহায়তার অভাব, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার অভাব, ইন্টারনেটের ধীর গতি, বিনিয়োগ, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার অভাব, কারিগরি জ্ঞানের অভাব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করতে হলে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও সহজভাবে সেবা দিতে হবে। একই সঙ্গে একটি জাতীয় নীতিমালাও তৈরি করতে হবে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তির অবস্থান
উন্নত প্রযুক্তির প্রভাবে আমাদের চারপাশে প্রায় সবকিছুই দ্রæত পরিবর্তিত হচ্ছে। শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্য, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা খাতে বিগ ডাটা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মেলবন্ধন ঘটানো হচ্ছে। ফলে এসব খাতে পরিবর্তন ঘটছে অত্যন্ত দ্রæত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে নিজ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির দিকে। প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ ও পরিবর্তনের সঙ্গে যেসব দেশ তাল মিলিয়ে চলছে তারা দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। চার দশক ধরে প্রযুক্তির প্রবণতা ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডবিøউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব বলেন, অগ্রসর প্রযুক্তির আবির্ভাবে বিশ্ব সমাজ উন্নয়নের এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে। সর্বব্যাপী মোবাইল সুপার কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আমাদের চারপাশের প্রায় সবকিছুতেই প্রভাব ফেলছে। রাজনীতি, ব্যবসায় এবং সামাজিক পরিবেশ বিবর্তিত হয়ে সুযোগ এবং বিপদ দুই-ই সৃষ্টি করবে।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার ও প্রভাবে ভবিষ্যতে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন। বিশ্বব্যাংক অবশ্য তেমনটি মনে করে না। তারা মনে করে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কিছু অদক্ষ মানুষ চাকরি হারাবে ঠিকই কিন্তু তা শ্রমবাজারে সংকট সৃষ্টি করবে না। পূর্ববর্তী তিনটি শিল্পবিপ্লবের কারণে কোনো ব্যাপক বেকারত্ব দেখা দেয়নি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবেও তেমনটির আশঙ্কা নেই। অগ্রসর প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে যখন চাকরি হারানার ঝুঁকি এবং অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে তখন বাংলাদেশেও এসব প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটছে। একটি প্রযুক্তিবান্ধব ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠার কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচএফএস রিসার্চ-এর ‘বাংলাদেশ ইমার্জেস অ্যাজ এ ডিসটিনক্টিভ ডিজিটাল হাব ফর ইমার্জিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি গতিশীল ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। যারা ডিজিটাল পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করছে এরূপ অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। বিকাশ, পাঠাও, সেবাএক্সওয়াইজেড, ডেটা সফট, বিজেআইটির মতো প্রতিষ্ঠানের রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ), বøকচেইন, স্মার্ট অ্যানালাইটিকস, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, আইওটির ওপর একাধিক উদ্যোগের পাইলটিং ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কাস্টমার অভিজ্ঞতা, বিক্রি ও বিপণন, রিয়েল টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উদ্ভাবনী ব্যবসায় এবং বিজনেস মডেল তৈরিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।
আগামীর প্রযুক্তির প্রবণতা, ব্যবহার ও প্রভাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তারা আগাম প্রস্তুতিও গ্রহণ করছেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ দ্রæত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনছে। ফলে অর্থনৈতিক বিকাশ এবং শিল্পায়ন ঘটছে দ্রæত।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর নীতিমালা ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এ ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া হয়। এটুআই প্রোগাম ও বিসিসির এলআইসিটি প্রকল্প বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আলোচনা করে আইওটি, বøকচেইন, রোবোটিকস স্ট্র্যাটেজির খসড়া প্রণয়ন করা হয়, যা ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিতও হয়। এলআইসিটির প্রকল্পের আওতায় ফাস্ট ট্রাক ফিউচার লিডার (এফটিএফএল) কর্মসূচিতে কয়েক বছর আগে থেকেই এআই, আইওটি, বøকচেইন, রোবোটিকসসহ অগ্রসর প্রযুক্তিতে দক্ষ মানুষ তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে। বিসিসির সব প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট সংরক্ষণ করা হচ্ছে বøকচেইন প্রযুক্তিতে।
প্রযুক্তি কখনো থেমে থাকার জন্য আসে না। সব সময় এর রূপান্তর ঘটছে। প্রযুক্তির এ অগ্রগতির সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আগামী দিনে যে ১০টি অগ্রসর প্রযুক্তি বড় পরিবর্তন ঘটাবে তা চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করেছে সরকার। এই ১০টি প্রযুক্তি হচ্ছে অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস, ক্লাউড টেকনোলজি, অটোনোমাস ভেহিকলস, সিনথেটিক বায়োলজি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, এআই, রোবট, বøকচেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং ও আইওটি।
অগ্রসর প্রযুক্তি কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের তরুণরাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেরা উদ্ভাবনী তৈরি করতে পারে তার উদাহরণ তো রয়েছে। হংকংয়ে আন্তর্জাতিক বøকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২০-এ অংশ গ্রহণের দেশে বøকচেইন অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দল বাছাইয়ে বøকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। ২০২০ সালের জুলাইয়ে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বøকচেইন অলিম্পিয়াড অ্যাওয়ার্ড ২০২০-এর ছয়টি পুরস্কারের মধ্যে বাংলাদেশ দু’টি পুরস্কার অর্জন করে আর ১২টি দলের ১২টি প্রকল্পই পায় অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট। টেক একাডেমি নামে একটি সংস্থার তত্ত¡বাবধানে বাংলাদেশের তরুণদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফার্স্ট গেøাবাল নামের একটি সংস্থার আয়োজনে স্কুল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোবোটিকস অলিম্পিয়াডে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বাংলাদেশের তরুণদের এই সাফল্য এবং অগ্রসর প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ আমাদের আশাবাদী করছে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে কতটা এগিয়েছে দেশ
বাংলাদেশ ৫১ বছর পূর্ণ করল। বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে যাদের জন্ম হয়েছে, তাদের হয়তো ১০০ বছর পূর্তি দেখার সৌভাগ্য হবে না, তবে যদি কারও জীবনে সেটি হয়ে যায়, তাহলে চমৎকার একটি বিষয় ঘটবে। কিংবা এখন যার জন্ম হলো, সে যখন বাংলাদেশের ১০০ বছর নিয়ে লিখবে, তখন পেছনের ৫০ বছর, আর তার নিজের ৫০ বছর নিয়ে দুই জীবন লিখতে পারবে।
ইতিহাসের পরিক্রমায় আমি আমার দেখা গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির পরিবর্তনটুকু লিখে যাচ্ছি। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে মোট তিনটি ভাগ করে দেখা যেতে পারে। তাহলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় আমাদের অবস্থান বুঝতে সহজ হবে।
বাংলাদেশ মূলত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রবেশ করে নব্বইয়ের দশকে। এর আগে বাংলাদেশে আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটার ছিল বিশেষ গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য। সাধারণ মানুষের কিংবা সরকারের বড় কোনো কাজে সেগুলো ব্যবহৃত হতো না। সারা পৃথিবীতে তখন পার্সোনাল কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাংলাদেশেও এর ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। আশির দশকে বাংলাদেশে কম্পিউটার কাউন্সিল গঠিত হলেও এর কাজে কিছুটা গতি আসে নব্বইয়ের দশকে এসে।
বাংলাদেশের মানুষ চড়া দামে খুব স্বল্পমাত্রায় অনলাইন ইন্টারনেট পেতে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ডায়াল করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।
পাশাপাশি পুরো পৃথিবীতে ডাটা এন্ট্রির বিশাল একটি বাজার তৈরি হলো- যা ভারত নিয়ে নিল। বাংলাদেশ ওই বাজারে প্রবেশ করতে পারল না। এর মূল কারণ ছিল- বাংলাদেশ তখনো ওই বাজার ধরার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ভারত আশির দশকেই যেভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল, সেটি বাংলাদেশ পারেনি। ফলে বিলিয়ন ডলারের পুরো ব্যবসাটাই চলে যায় ভারতে।
ওই দশকে বাংলাদেশ বিনামূল্য সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, যা তখনকার সরকার নেয়নি। তারা মনে করেছিল, সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হলে সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। আমরা যে এভাবে ভাবতে পেরেছিলাম, সেটি একটি জাতির অনেক কিছু বলে দেয়। তথ্যপ্রযুক্তিতে যে দেশগুলো ভালো করেছে, তাদের মনস্তত্ত¡ ভিন্ন। তার সঙ্গে আমাদের ফারাক অনেক। এতটাই ফারাক যে, আমরা সেটি বুঝতেই পারব না।
এ দশকে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার কিছুটা বেড়েছিল। পুরো বিশ্বেই তখন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে এবং ইন্টারনেটের উত্থান ওই সময়টাতেই। সিসকোর মতো বিশাল প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছিল শুধু ইন্টারনেটের গ্রোথকে সামনে রেখে। ওই প্রতিষ্ঠানটি তখনই ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এ দশকের সবচে বড় প্রযুক্তি ছিল ভয়েস ওভার আইপি (ভিওআইপি)। পুরো বিশ্ব যখন এ প্রযুক্তিকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশ এ প্রযুক্তিকে নিষিদ্ধ করে দিল। তারা মনে করল, এর ফলে আন্তর্জাতিক ভয়েস কলের মুনাফা কমে যাবে। এ প্রযুক্তিটিকে আটকে দিল বাংলাদেশ এবং এখনো নিষিদ্ধ হয়ে আছে।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এ প্রযুক্তিকে কাছে টেনে নিল; তখন এ প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ যুক্ত হলো না। দেশের মানুষকেও যুক্ত করল না। ইউরোপের একটি ছোট্ট দেশ এস্টোনিয়ার চারজন প্রোগ্রামার মিলে তৈরি করে ফেলল স্কাইপ। প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত রাখলে মানুষ কতটা ক্রিয়েটিভ হতে পারে, মানুষ কতটা জ্ঞানের দিক থেকে এগিয়ে যেতে পারে- এটি একটি বড় উদাহরণ। সেই স্কাইপ আমরা এখনো ব্যবহার করছি। স্কাইপ হলো একটি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু স্কাইপের মতো এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল, যেগুলো পরবর্তী সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশাল অবদান রেখেছে। আমরা এখন যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো, ম্যাসেঞ্জার, সিগন্যাল ইত্যাদি কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম দেখি, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল এ দশকে ভিওআইপি প্রযুক্তির মাধ্যমে। একটি প্রযুক্তিকে আটকে দিলে কী হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এটি।
বিশ্বের অনেক দেশ তার জনসংখ্যাকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেছিল, যার সুবিধা তারা এখনো পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেটি পারেনি। তথ্যপ্রযুক্তিকে বাধা এসেেছ বারবার। একটি জাতিকে কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রস্তুত করতে হয়, সেটি নীতিনির্ধারকবৃন্দ বুঝতে চাননি। প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে রাখলে, বাংলাদেশের জনগণ এখন অনেক বেশি প্রস্তুত থাকত। অনেক বেশি আউটপুট দিতে পারত। বাংলাদেশ সেই ভিশন দেখাতে পারেনি।
গত দশক থেকেই আসলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেছে। সরকার তার অনেক সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি এ খাতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। গত দশকের শুরুতে ইন্টারনেটের ব্যবহার যতটা ছিল, সেটি অনেকাংশে বেড়েছে দশকটির শেষ ভাগে এসে। তবে বাংলাদেশ এ ব্যবহারকারী আগের দশকেই পেতে পারত, যদি সে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারত।
এ দশকে বাংলাদেশের মানুষ প্রাইভেট সেক্টরেও সেবা পেতে শুরু করেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা, ডিজিটাল পেমেন্ট, ই-কমার্সগুলো আসতে শুরু করে- যেগুলো পৃথিবীর অনেক দেশ আরও ২০ বছর আগেই করে ফেলেছে। অর্থাৎ আমরা অন্তত ২০ বছরে পিছিয়ে থাকলাম।
আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা নিজেদের চেষ্টায় ফ্রিল্যান্সিং কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশে বসে বিশ্বের উন্নত দেশের কাজ করতে শুরু করে। তবে বিদেশ থেকে টাকা আনা নিয়ে হাজারও ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল, যেগুলো এখন অনেকটাই ঠিক হয়ে এসেছে। কিন্তু এগুলো আরও ১০ বছর আগেই ঠিক হয়ে যেতে পারত। শুধু নীতিগত কারণে পিছিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে বেশ ভালো একটি জায়গা করে নিয়েছে। এ কাজটিতে বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারত, যদি সে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের ভালো গতি পৌঁছে দিতে পারত এবং ডিজিটাল পেমেন্টটাকে সহজতর করতে পারত।
এ দশকেও বাংলাদেশ তার ইন্টারেনেটের গতি ঠিক করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ দুই উপায়ে ইন্টারনেট পেয়ে থাকে। একটি হলো ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড, আরেকটি হলো মোবাইল ইন্টারনেট। বাংলাদেশে পরিকল্পিত উপায়ে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি। ঢাকার চেয়ে জেলা শহরগুলোতে ইন্টারনেটের গতি কম এবং মূল্য বেশি। সরকারের ঘোষিত এক দেশ এক রেট এর সফল বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকায় কিছু কিছু এলাকা ফাইবারের আওতায় এসেছে। কিন্তু সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের নয়।
আর মোবাইল ইন্টারনেটের অবস্থা পয ভয়াবহ খারাপ, সেটি তো আমরা সবাই জানি। ঢাকা শহরের মানুষ কিছুটা গতি পেলেও ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই নাজুক। এটি মূলত হয়েছে মোবাইল অপারেটররা ঢাকার বাইরে তেমন বিনিয়োগ করেনি, যা তাদের লাইসেন্সের আওতায় করার কথা এবং বাংলাদেশ যেহেতু এটি নিশ্চিত করতে পারেনি, তাই দেশ আরও দশ বছরের বেশি সময় পিছিয়ে গেল। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে মানুষ যেভাবে লাইভ করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ সেটি জেলা শহরেই পারে না।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত প্রাইভেট সেক্টরে প্রসারিত হওয়ার জন্য যেই অবকাঠামোর প্রয়োজন ছিল, তা তৈরি হয়নি। ফলে দেশে বড় কোনো সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ এখনো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। আমাদের কোটি কোটি মোবাইল গ্রাহক আছে বটে; কিন্তু তারা মূলত ভয়েস কল করার জন্যই এটি ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এমন একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি, যেখানে বেশ কয়েকজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আছে। এ সামান্য একটি তথ্যই অনেক কিছু বলে দেয়।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের তিনটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথমটি হলো উন্নত মানের ইন্টারনেট সমস্যা, যার সমাধান আরও ২০ বছর আগেই হওয়া দরকার ছিল। দ্বিতীয়টি হলো উন্নত বুদ্ধির মানুষ। তথ্যপ্রযুক্তি হলো এমন একটি খাত, যেখানে বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। এর জন্য চাই প্রকৃত বুদ্ধিমান মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশ এখন বড় ধরনের ‘ব্রেইন-ড্রেইন’-এর ভেতর পড়ে গেছে। পৃথিবীর বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ভালো লোকগুলোকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে, সেবা তৈরি করার মতো মানুষ এ দেশে থাকছে না। আমরা মূলত কনজ্যুমার হচ্ছি। আমাদের যদি প্রস্তুতকারকের ভূমিকায় আসতে হয়, তাহলে আরও বুদ্ধি লাগবে। আর তৃতীয়টি হলো ইন্টিলেকচুয়াল কপিরাইট প্রটেকশন, যা বাংলাদেশে এখনো বেশ দুর্বল। মেধাস্বত্ব যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না যায়, তাহলে মেধাবীরা এখানে থাকবে না। আর এ শিল্পে মেধার কোনো বিকল্প নেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরো গতিশীল করতে হবে
আমরা জানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ফিউশন অব ফিজিক্যাল, ডিজিটাল এবং বায়োলজিকাল স্ফেয়ার। এখানে ফিজিক্যাল হচ্ছে হিউম্যান, বায়োলজিকাল হচ্ছে প্রকৃতি এবং ডিজিটাল হচ্ছে টেকনোলজি। এই তিনটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে? সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে? এর ফলে ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন হচ্ছে, হিউম্যান মেশিন ইন্টারফেস হচ্ছে এবং রিয়েলটি এবং ভার্চুয়ালিটি এক হয়ে যাচ্ছে। এখন যদি আমরা আমাদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সি, ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্সি, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্সি, কনটেস্ট ইন্টেলিজেন্সির মতো বিষয়গুলো তাদের মাথায় প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আমরা সবাইকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে পারব। তবে ভবিষ্যতে কী কী কাজ তৈরি হবে সেটা অজানা। এই অজানা ভবিষ্যতের জন্য প্রজন্মকে তৈরি করতে আমরা আমাদের কয়েকটা বিষয়ে কাজ পারি। সভ্যতা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপাদান হলো তথ্য। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিল।
বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার, বিদ্যুতের ব্যবহার এবং ট্রানজিস্টর আবিষ্কার ব্যাপক শিল্পায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে মানব সভ্যতার গতিপথ বদলে দিয়েছিল বলে ওই তিন ঘটনাকে তিনটি শিল্পবিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখন বলা হচ্ছে, ডিজিটাল প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে আসছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, যেখানে বহু প্রযুক্তির এক ফিউশনে ভৌতজগৎ, ডিজিটাল-জগৎ আর জীবজগৎ পরস্পরের মধ্যে লীন হয়ে যাচ্ছে।
২০১৫ সালে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার শিল্প উৎপাদনকারীদের ভর্তুকি, প্রণোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেণ গ্রহণ করেন। সরকারের বিভিন্ন নীতি সহায়তার ফলে বর্তমানে দেশে হাই-টেক পার্কসহ দেশি-বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ তৈরি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানিসহ দেশের মোবাইল ফোন চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করছে।
বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০-এর অধিক ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা জনগণ পাচ্ছেন। একসময় প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি এমবিপিএস ৩০০ টাকার নিচে। দেশের ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিস একই নেটওয়ার্কের আওতায়। ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে পৌঁছেছে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট।
দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটি ৩৮ লাখ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১৩ কোটি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এর প্রতিবেদনে যথার্থভাবেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আর্থসামাজিক ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আর্থিক সেবায় মানুষের অন্তর্ভুক্তি রীতিমতো বিস্ময়কর। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার, এটিএম কার্ড ব্যবহার শুধু ক্যাশলেস সোসাইটি গড়াসহ ই-গভর্মেন্ট প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে তা নয়, ই-কমার্সেরও ব্যাপক প্রসার ঘটাচ্ছে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সাইবার নিরাপত্তায় গৃহিত আইনি ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সূচকে আইটিইউ-তে ৫৩তম স্থানে এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা (এনসিএসআই) সূচকে ৩৭তম স্থানে অবস্থান করছে। দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক দেশের মধ্যে প্রথম।
স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে আইডিয়া প্রকল্প ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডসহ সরকারের নানা উদ্যোগে ভালো সুফল হিচ্ছে। দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। ই-গভর্নমেন্ট কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। ৫২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটের জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত রয়েছে।
২০২৫ সাল নাগাদ যখন শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবে তখন নাগরিকদের সময়, খরচ ও যাতায়াত সাশ্রয় হবে। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। ৩৯টি হাই-টেক ও আইটি পার্কের মধ্যে এরই মধ্যে নির্মিত ৯টিতে দেশি-বিদেশি ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ৩২ হাজার। ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা মহামারিতে সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে সহায়তা করেছে। দেশব্যাপী লকডাউনে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়।
করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে টিকা কার্যক্রম, টিকার তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে টিকা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয় এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে। ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করা এবং সরকারি সেবার শতভাগ অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা, আরো ৩০০ স্কুল অব ফিউচার ও ১ লাখ ৯ হাজার ওয়াইফাই কানেক্টিভিটি, ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার এবং ২৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যে প্রসার ঘটেছে তাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যেই সরকার বাংলার আধুনিক রূপ জ্ঞানভিত্তিক উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে-১ এ ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। দেশের সব অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের জলসীমা, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া এর কভারেজের আওতায় রয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও নাগরিক সেবা
জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। এখন দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হলো- সমাজের শ্রেণি, বর্ণ, পেশা ও গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সকল মানুষের দোরগোড়ায় সহজে এবং দ্রæততার সাথে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়া। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সর্বত্র সমন্বিত ই-সেবা কাঠামো গড়ে তুলেছে। এ লক্ষ্যে এটুআই এর সহযোগিতায় বর্তমানে প্রায় সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বৃহৎ পরিসরে ই-সেবা প্রদান করে আসছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে এটুআই এর উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে কিশোর বাতায়ন, ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, ই-নথি, একশপ, এক পে, জাতীয় হেল্পলাইন-৩৩৩, মুক্তপাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, এসডিজি ট্র্যাকার, ই-মিউটেশন, উত্তরাধিকার বাংলা, ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড রুম, মাইগভ অ্যাপ, ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব ও আই ল্যাব এবং ইনোভেশন ল্যাব ইত্যাদি।
জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি দপ্তর থেকে প্রদেয় সেবাসমূহ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ ৫২ হাজারেরও অধিক সরকারি দপ্তরে ওয়েবসাইটের একটি সমন্বিত রূপ বা ওয়েব পোর্টাল হলো জাতীয় তথ্য বাতায়ন। এখানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের এ পর্যন্ত ৬৫৭ টি ই-সেবা এবং ৮৬ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট যুক্ত করা হয়েছে। এই বাতায়নে প্রতিদিন গড়ে এক লাখেরও বেশি নাগরিক তথ্য সেবা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়ন এর জনপ্রিয় সেবা এর মধ্যে রয়েছে-অর্থ ও বাণিজ্য সেবা, অনলাইন আবেদন, শিক্ষা বিষয়ক সেবা, অনলাইন নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন, নিয়োগ সংক্রান্ত সেবা, পরীক্ষার ফলাফল, কৃষি, ইউটিলিটি বিল, টিকিট বুকিং ও ক্রয়, তথ্য ভান্ডার, ভর্তির আবেদন, আয়কর, যানবাহন সেবা, প্রশিক্ষণ এ স্বাস্থ্য বিষয়ক পোর্টাল কুরিয়ার, ফরমস, ট্রেজারি চালানসহ ডিজিটাল সেন্টার। এখানে রয়েছে ৬শ’ এরও বেশি ই-সেবা, ১ হাজার ৬০০ এরও বেশি বিভিন্ন সরকারি ফরম অর্থাৎ সকল সেবার ফরম এক ঠিকানায়। রয়েছে কিশোর বাতায়ন-কানেক্ট, ইমাম বাতায়ন, মুক্তপাঠ, সকল সেবা এক ঠিকানায় সেবাকুঞ্জ, জাতীয় ই-তথ্যকোষ যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময় পাঠ্যপুস্তকের সহজলভ্যতার জন্য তৈরী করা হয়েছে ই-বুক।
জাতীয় তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে জনগণ ঘরে বসে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করেতে পারেন। করোনা মহামারীর সময় মানুষ তাঁর প্রয়োজনীয় কাজ ঘরে বসেই ঝুঁকিমুক্তভাবে করে ফেলতে পারছেন। যে কোনো পাবলিক পরীক্ষা যেমন: প্রাথমিক সমাপনী, এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে পারছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য হালনাগাদ করার জন্য এখন আর নির্বাচন কমিশনের অফিসে ঘোরাঘুরি করতে হয় না। জাতীয় তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে সকল তথ্য হালনাগাদ করা যায়। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং নতুন ভোটার নিবন্ধনের মত কাজও এই তথ্য বাতায়ন থেকে করা সম্ভব। দেশব্যাপী কৃষকের দোরগোড়ায় দ্রæত ও সহজলভ্য কার্যকারী ই-কৃষি সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম “কৃষি বাতায়ন” এর মাধ্যমে কৃষিবিষয়ক যে কোনো পরামর্শ ও সেবা সহজলভ্য করা হয়েছে। বর্তমানে কৃষি বাতায়নে ৮১ লাখ কৃষকের তথ্য মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ১৮ হাজার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং ৬১টি উপজেলার কৃষি বিষয়ক তথ্য এই বাতায়নে সংযুক্ত রয়েছে।
ইমাম বাতায়নের মাধ্যমে দেশের ৩ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মধ্যে ধর্মীয় সচেতনতা তৈরীর পাশাপাশি তাদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইমাম বাতায়নে বর্তমানে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬১ জন সদস্য ও ১৩ হাজার ৭২৪ কন্টেন্ট রয়েছে। কিশোর বাতায়ন কিশোর-কিশোরীদের জন্য নির্মিত একটি শিক্ষামূলক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেখানে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছে এবং ৩১ হাজার ৩৮৩ টিরও বেশি মানসম্মত কনটেন্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছে।
শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষক বাতায়ন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন, চিত্র, ডকুমেন্ট, প্রকাশনা ইত্যাদি কনটেন্ট সংরক্ষিত রয়েছে। এসব কনটেন্ট ব্যবহার করে শিক্ষকগণ মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাসরুমে শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। শিক্ষক বাতায়নের নিবন্ধিত সদস্য প্রায় ৪ লাখ ৪৯ হাজার জন। দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে উচ্চ ও নিম্ন আদালতসহ বিচার বিভাগের তথ্য নিয়ে চালু আছে বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনমুখী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং আদালত ও নাগরিকের মধ্যকার দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে এ উদ্যোগের যাত্রা। বর্তমানে ৬৪টি জেলা আদালত, ৫টি দায়রা আদালত এবং ৮টি ট্রাইব্যুনালে বিচার বিভাগীয় বাতায়ন সক্রিয় রয়েছে।
উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর একটি স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটর। এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মধ্যে প্রাপ্যতা হিসাব করা যায়। মৃত ব্যক্তির সম্পদ বন্টন ব্যবস্থার জটিলতা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার চিন্তা থেকেই উত্তরাধিকার বাতায়ন এবং অ্যাপের যাত্রা। এখন পর্যন্ত ২ লাখের বেশি নাগরিক উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর ব্যবহার করছেন। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে ব্যাপক জনগোষ্ঠী ডিজিটাল সেন্টার থেকে অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা পাঠানো, সঞ্চয় করা, ঋণ গ্রহণ, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স উত্তোলন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা উত্তোলন, বিভিন্ন ধরনের ফি প্রদান ইত্যাদি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে।
জিটুপি সিস্টেমের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক একক আইডি ব্যবহার করে ডিজিটাল সেবা প্রদান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ই-অফিসে কার্যক্রম অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সরকারি দপ্তরে কাজের গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি আনয়নে ই-নথি বাস্তবায়ন চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৮ হাজারেরও বেশি অফিসের প্রায় ১ লাখের অধিক কর্মকর্তা এর সাথে যুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় কোটির বেশি ফাইল ই-নথি সিস্টেমের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।
সকল সেবা একটিমাত্র প্ল্যাটফর্ম সংযুক্ত করার লক্ষ্যে একসেবা প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ১৫১ টি দপ্তরকে একসেবার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং ৩৩৪টি সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে একসেবায় নিবন্ধিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৪ হাজারের বেশি ।
সরকারি সব সেবা এক প্ল্যাটফর্মে আনার অঙ্গীকার নিয়ে ‘আমার সরকার বা মাই গভ’ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। কেউ বিপদে পড়লে অ্যাপটি খুলে মোবাইল ফোন ঝাঁকালে সরাসরি ৯৯৯ নম্বরে চলে যাবে ফোন। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীরা ৩৩৩ নম্বরে কল করেও নানা ধরনের তথ্য ও সেবা নিতে পারবেন । প্রয়োজনীয় তথ্যের মাধ্যমে আবেদন, কাগজপত্র দাখিল, আবেদনের ফি পরিশোধ এবং আবেদন-পরবর্তী আপডেটসহ অন্যান্য বিষয় জানা যাবে। আর আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করা হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সাহায্যে। প্ল্যাটফর্মটিতে বর্তমানে ৩৩৪টি সেবা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই প্ল্যাটফর্মটি রেপিড ডিজিটাইজেশনের আওতায় প্রায় ৬৪১টি সেবা ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের ঘোষণা এখন এটি প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা। তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারে বাঙ্গালি জাতির অগ্রগতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কেড়েছে। নাগরিক সেবায় মানোন্নয়নে বর্তমানে সরকার গৃহিত সামগ্রিক সেবাদান প্রক্রিয়া গতি এনেছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ সত্যিকারের ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে একধাপ এগিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, আমরা হবো সেই গর্বিত রাষ্ট্রের নাগরিক।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমাদের যা করা উচিত
বলা বাহুল্য, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এরই মধ্যে সারা বিশে^ ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আঠারো শতকের শেষর দিকে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, সেটি হলো শিল্প বিপ্লব। শিল্প বিপ্লবের ফলে যুক্তরাজ্য বিশ্বের প্রথম শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়। তাই কখনো কখনো এটিকে পৃথিবীর প্রথম ইন্ডাস্ট্রি বলা হয়ে থাকে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শব্দটি সর্বপ্রথম আসে জার্মানীর কাছ থেকে। একদল বিজ্ঞানী, যারা জার্মান সরকারের জন্য একটি উচ্চ প্রযুক্তিগত কৌশল তৈরি করছিলেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াব ২০১৫ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শব্দটিকে বৃহৎ পরিসরে সামনে নিয়ে আসেন। শোয়াব তখন এমন সব প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করেন, যার মাধ্যমে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও বায়োলজিকে (সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমস) একত্র করে পৃথিবীকে উন্নতির পথে আরো গতিশীল করা যায়।
শোয়াব মনে করেন, যুগটি রোবোটিক্স বুদ্ধিমত্তা, ন্যানোটেকনোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বায়োটেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট অব থিংস, ডিসেন্ট্রালাইজড কনসেনসাস, পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস প্রযুক্তি, থ্রিডি প্রিন্টিং ও সম্পূর্ণ ড্রাইভারবিহীন গাড়ি উদীয়মান প্রযুক্তির যুগান্তকারী যুগ হিসেবে চিহ্নিত হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ওই প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন পর্যায়ে বর্তমানে অবশ্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠনের কৌশলগত টেকসই সমাধান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিগত সময়ের সব হিসাব-নিকাশ বাতিল করে আমাদের দরজায় এখন যে শিল্প বিপ্লবটি কড়া নাড়ছে, সেটি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চতুর্থ শিল্প বিপ্লব; যার গতির দৌড় কল্পনার চেয়েও বেশি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবটির ভিত হচ্ছে ‘জ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ ভিত্তিক কম্পিউটিং প্রযুক্তি। রোবটিক্স, আইওটি, ন্যানো প্রযুক্তি, ডাটা সায়েন্স ইত্যাদি প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে নিয়ে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে কর্মবাজারে। অটোমেশন প্রযুক্তির ফলে ক্রমে শিল্প-কারখানা হয়ে পড়বে যন্ত্রনির্ভর। টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাপলের হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকন এরই মধ্যে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করে তার পরিবর্তে রোবটকে কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
গত বছরগুলোয় চীনের কারখানাগুলোয় রোবট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে রোবটের কারণে বিশ্বজুড়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। এসব আশঙ্কার ভেতরেই রয়েছে আগামী দিনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের বিশেষ সম্ভাবনা। বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ২৯ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগামী ৩০ বছরজুড়ে তরুণ বা উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার এটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। জ্ঞানভিত্তিক এ শিল্প বিপ্লবে প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে দক্ষ মানবসম্পদই হবে বেশি মূল্যবান।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বিপুল পরিমাণ মানুষ চাকরি হারালেও এর বিপরীতে সৃষ্টি হবে নতুন ধারার নানা কর্মক্ষেত্র। নতুন যুগের এসব চাকরির জন্য প্রয়োজন উঁচু স্তরের কারিগরি দক্ষতা। ডাটা সায়েন্টিস্ট, আইওটি এক্সপার্ট, রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারের মতো আগামী দিনের চাকরিগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী তরুণ জনগোষ্ঠী।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, আগামী দুই দশকের মধ্যে মানবজাতির ৪৭ শতাংশ কাজ স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমনির্ভর এবং অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতানির্ভর চাকরি বিলুপ্ত হলেও উচ্চ দক্ষতানির্ভর যে নতুন কর্মবাজার সৃষ্টি হবে, সে বিষয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তার জন্য প্রস্তুত করে তোলার এখনই সেরা সময়। দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করা সম্ভব হলে জনমিতিক লভ্যাংশকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশ থেকে অনেক বেশি উপযুক্ত।
এক্ষেত্রে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আজকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সার্বিক জীবনমানের উত্তরণ ঘটানো যায়। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ অত্যন্ত নগণ্য এবং আবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ১৫ শতাংশ। জাপান তার সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছে জনসংখ্যাকে সুদক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে। জাপানের এ উদাহরণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়।
শিল্প-কারখানায় কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা লাগবে, সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষাক্রমের তেমন সমন্বয় নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিসের ফাইল-নথিপত্র ডিজিটাল ডকুমেন্টে রূপান্তর করতে হবে। আর নতুন ডকুমেন্টও ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি করে সংরক্ষণ ও বিতরণ করতে হবে। এ বিষয়ে বর্তমানে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, তবে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব এখনো অনেকটা অনুপস্থিত মনে হয়। কেবল পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মানবসম্পদকেও যথাযথভাবে প্রস্তুুত করতে হবে এ পরিবর্তনের জন্য। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, বøকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনো তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত।
সত্যিকার অর্থে যেহেতু তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সুফলই আমরা সবার কাছে পৌঁছতে পারিনি, চতুর্থ বিপ্লব মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি কতটকু তা আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। ব্যাপক সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে তা করা সম্ভব। উল্লেখ্য, শুধু আমাদের দক্ষ জনগোষ্ঠী নেই বলে পোশাক শিল্পের প্রযুক্তিগত খাতে কম-বেশি তিন লাখ বিদেশী নাগরিক কাজ করেন। অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় প্রায় এক কোটি শ্রমিক বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমাদের দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠান, আমরা তার প্রায় অর্ধেকই তুলে দিই মাত্র ৩ লাখ বিদেশীর হাতে। তাই শুধু শিক্ষিত নয়, দেশে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শুধু দেশেই নয়, যারা বিদেশে কাজ করছেন তাদেরকেও যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিদেশে আমাদের এক কোটি শ্রমিক আয় করেন ১৫ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ভারতের ১ কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক আয় করেন ৬৮ বিলিয়ন ডলার। কর্মক্ষেত্রে আমাদের শ্রমিকদের অদক্ষতাই তাদের আয়ের ক্ষেত্রে এ বিরাট ব্যবধানের কারণ। সংগত কারণেই আমাদের উচিত কারিগরি দক্ষতার ওপর আরো জোর দেয়া। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনাটাও একান্ত জরুরি। আগামী দিনের সৃজনশীল, সুচিন্তার অধিকারী, সমস্যা সমাধানে পটু জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উপায় হলো শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো, যাতে এ দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীর মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং কাজটি করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে। একই ধরনের পরিবর্তন হতে হবে উচ্চশিক্ষার স্তরে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য টিচিং অ্যান্ড লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গ্র্যাজুয়েট তৈরি করার জন্য স্কিল বিষয়ে নিজেরা প্রশিক্ষিত হবেন। শিক্ষার্থীদের প্রচলিত প্রশ্নোত্তর থেকে বের করে এনে তাদের কেস স্টাডি, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষকদের মূল বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রকাশযোগ্যতা, দলীয় কাজে দক্ষতা তৈরির জন্য ওইসব কেস স্টাডি, অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা প্রজেক্টের উপস্থাপনাকে করতে হবে বাধ্যতামূলক এবং সেটি শুধু নিজ নিজ শ্রেণীকক্ষে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, ছড়িয়ে দিতে হবে নানা অঙ্গনে। উচ্চশিক্ষার সর্বস্তরে শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংযোগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষানবিশী কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের কার্যক্রম সম্পর্ক হাতে-কলমে শিখতে পারেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা করে এটিকে আশঙ্কার পরিবর্তে সম্ভাবনায় পরিণত করতে হলে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
দেশে প্রচলিত সব শিক্ষা ব্যবস্থাকে একীভূত করে বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এক ধারায় নিয়ে আসতে হবে এবং সেই ধারায় বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষকমÐলীর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। চৌকস প্রতিভাবান লোকজনকে শিক্ষকতায় আগ্রহী করার জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চ শিক্ষাস্তরে গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং যারা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ও গবেষণায় নিয়োজিত, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণায় অর্থায়নে এগিয়ে আসতে হবে। প্রচুর বাংলাদেশী গবেষক বিদেশে বেশ ভালো ভালো গবেষণায় নিয়োজিত। প্রয়োজনরোধে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ দেশে এসে কাজ করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়া একত্রে কোলাবরেশনের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের উচিত হবে সব বিভাগ/সেক্টর তাদের নিজস্ব কাজকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি/ভাবনা সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। অতঃপর সব সেক্টরের কর্মপরিকল্পনাকে সুসমন্বিত করে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দৌড়েও চীন নিয়ে মাথাব্যথা মার্কিনদের
গুগলের তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবে চীন সম্ভাব্য সামরিক ব্যবহারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটি অতি উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার প্রযুক্তি তৈরি করছে বলে ধারণা পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, এটি হতে পারে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কম্পিউটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের তৃতীয় ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী রয়েছে চীনের। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উন্নয়ন করতে পারলে তা দেশটির সেনাবাহিনীকে সাহায্য করবে। ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অপর দিকে দীর্ঘ দিন ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালেই মার্কিন প্রতিষ্ঠান গুগল কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
ওই সময় তারা প্রথমবারের মতো ‘কোয়ান্টাম সুপ্রিম্যাসি’ অর্জন করার দাবি করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হলো এমন এক ধরনের কম্পিউটিং যা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রকে এমন সমস্যা সমাধান করে দেয়, যেটা সাধারণ কম্পিউটারের জন্য খুব কঠিন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম্পিউটিং শক্তি (কম্পিউটারের গাণিতিক হিসাব-নিকাশ) ব্যাপকভাবে সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারে আগ্রহ বেড়েছে। এ কম্পিউটার ব্যবহার করে নতুন উপকরণ শনাক্ত, ওষুধের বিকাশ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো দিকগুলো উন্নত করা যেতে পারে।
১৯৮০ সালে মার্কিন পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ধারণা দেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষকেরা ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যবহার রয়েছে। এটি গোপন সামরিক বার্তা বুঝতে পারে এবং সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের ড্যানিয়েল কে ইনোয়া এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টারের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ভুভিং বলেন, তাঁর ধারণা চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ খরচ করেছে। তিনি বলেন, চীন সরকার সামরিক বিকাশের জন্য বেসামরিক লোকজন ও কোম্পানি ব্যবহার করে।
মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক বুজ অ্যালেন হ্যামিল্টন গত মাসে বলেন, আগামী এক দশকে চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে নানা তথ্য বের করতে সক্ষম হবে। এর মধ্যে ওষুধ ও রাসায়নিকের নানা তথ্য থাকতে পারে। তবে চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথে কতটা এগিয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। চীন বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবে চীন সম্ভাব্য সামরিক ব্যবহারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেক ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি রয়েছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির গবেষক হিদার ওয়েস্ট বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং লুকানো সামরিক যানবাহন খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। অন্য দেশের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে এ কম্পিউটার। তবে বিশ্বজুড়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেই জানান ভুভিং। আবার অনেক দেশ এটি তৈরি করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত, জাপান ও জার্মানি এই দৌড়ে রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে যে দেশই প্রথম হোক না কেন, তারা বেশি দিন রাজত্ব করতে পারবে না। কারণ, অন্য দেশগুলো দ্রæত তা নকল করে ফেলবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির অগ্রগতি
২০১৯ সালে কম্পিউটিং হিসাবের দিক থেকে বা পারফরম্যান্স বিবেচনায় প্রচলিত সব কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করে গুগল। যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ জটিল সমস্যার সমাধান অত্যন্ত কম সময়ে করতে পারবে, তখনই বলা যাবে যে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিম্যাসি অর্জন করেছে। ‘নেচার’ সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। গুগল দাবি করে, সেকামোর কোয়ান্টাম প্রসেসর নির্দিষ্ট যে কাজ ২০০ সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে সক্ষম, তা বিশ্বের সেরা সুপার কম্পিউটারের সম্পন্ন করতে ১০ হাজার বছর লাগবে।
তবে দ্রæতগতিসম্পন্ন বা সুপারফাস্ট কম্পিউটার তৈরির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন বা আইবিএম একটি উন্নত কোয়ান্টাম প্রসেসর ‘ঈগল’ উন্মোচন করার ঘোষণা দেয়। আইবিএমের দাবি, কম্পিউটিং জগতে বিপ্লব আনতে পারবে এই যন্ত্র। উন্নত কম্পিউটারের নাগালের বাইরের সমস্যাগুলোও সমাধান করতে সক্ষম হবে এটি। বিবিসির খবরে বলা হয়, ব্যবহারিক কাজের উপযোগী বড় আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এখনো পরীক্ষাগারেই রয়ে গেছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার অদ্ভুত উপায়ে পদার্থের খুব সূ² আচরণও ধরতে পারে। ক্ল্যাসিক বা প্রথাগত কম্পিউটারে তথ্যের একককে বিট বলা হয়। এর মান ধরা হয় ১ বা ০। কিন্তু কোয়ান্টাম ব্যবস্থায় কিউবিট একই সময়ে ১ বা ০ হতে পারে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা অনেক। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রথাগত কম্পিউটার যে অল্পসংখ্যক জটিল সমস্যার সমাধান করতে গলদঘর্ম হয়, সেসব সমস্যার সমাধান এক নিমিষে বের করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ফলে ওষুধশিল্প থেকে শুরু করে তেলশিল্প সবখানেই বিপ্লব আনতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান দ্রæত করে ফেলা যাবে। তৈরি হবে নতুন ওষুধ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক অ্যালগরিদম আরও উন্নত করা যাবে। এমনকি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক রূপ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, সেটিও শিগগির উন্নত করে ফেলা যাবে।
গুগলের তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার
আইবিএমের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গবেষণা পরিচালক দারিও গিল বলেন, ঈগল প্রসেসর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ। প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে প্রথাগত কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যাবে এটি। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রায় প্রতিটি খাতকে রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখে এবং সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।
ঝুঁকিতে অনেক দেশ
চেন ই-ফ্যান তাইওয়ানের তামকাং বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন সহকারী অধ্যাপক। চেন বলেন, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই চীনের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটিং আক্রমণ শুরু করার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু। যতক্ষণ না দেশগুলোর প্রতিরক্ষায় শক্তিশালী কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি তৈরি করা না হচ্ছে, ততক্ষণ ঝুঁকি থেকে যাবে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও জ্বালানি বিভাগ মিলে ৫ বছরে কোয়ান্টাম গবেষণা ও উন্নয়নে ৬২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার খরচের ঘোষণা দেয়।
আইডিসির গবেষক হিদার ওয়েস্ট বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগে প্রচুর গবেষণা ও উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি। তবে সম্ভাবনার বিষয়টি না বুঝলে তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে অর্থ ঢালবে না। কার্ল থায়ার অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি বলেন, ছোট দেশগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারবে না। এ জন্য দরকার প্রকৌশলী, কারিগর ও যথেষ্ট অর্থ।
বাংলাদেশের ডেটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ
ডিজিটালাইজেশনের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তথ্য, অর্থাৎ ডেটা। যোগাযোগ, কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা, অবসরসহ নিত্যদিনের যে কোনো কাজের পুরোটাই নির্ভর করে আছে এই তথ্যের ওপর। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ তথ্যের ঠিকানা কোথায়? ডেটা রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়া সহজতর করে তুলতে মাইক্রোসফট ২০১৮ সালে এক অভিনব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্ত হয়তো ভবিষ্যতের ডেটা স্টোরেজ সিস্টেমই পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নিজেদের বিশাল ডেটা সেন্টার অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার হাত রথকে রক্ষার জন্য বেশ অর্থ খরচ করতে হয় টেক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ওই খরচ কমানোর জন্য দুই বছর আগে মাইক্রোসফট পরীক্ষামূলকভাবে নিজেদের ডেটা সেন্টার সমুদ্রের নিচে রাখার ব্যবস্থা করে। মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ, তাদের চিন্তাধারায় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
স্কটল্যান্ডের উত্তরের দ্বীপ অর্কনি। এ দ্বীপের উপকূলে দুই বছর আগে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট দ্বীপটি থেকে আধা মাইল দূরে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ডেটা সেন্টারকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। ডেটা সেন্টারটি ইস্পাতে ঘেরা একটি কনটেইনারের ভিতরে ছিল। এটি পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি। দুই বছর ধরে এটি সফলভাবে পানিতে ডুবে কাজ করে গেছে। মূলত সমতল ভূমিতে বিশাল বিশাল ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে যে খরচ হয়, তা কমিয়ে আনার এক চেষ্টা ছিল এটি। পানির নিচের এই অবাস্তব চিন্তাধারা বাস্তবে নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফটের প্রজেক্ট ন্যাটিক। তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার।
২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের এক ইভেন্টে কর্মীরা তাদের অভিনব আইডিয়া শেয়ারের সুযোগ পান। সেখানে মার্কিন নেভির সাবেক কর্মকর্তা ও মাইক্রোসফটের গবেষক সান জেমস তার আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার আইডিয়া তুলে ধরেন। একই বছর মাইক্রোসফটও প্রকল্প বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। ডেটা সেন্টারটি প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যেরে। এতে রয়েছে ১২টি র্যাক এবংসখানে সর্বমোট ৮৬৪টি সার্ভার রয়েছে। ২০১৮ সালে সার্ভারটি স্থাপন করা হয় সমুদ্রের ১১৭ ফুট তলদেশে এবং ২ বছর সফলভাবে কাজ করার পর ২০২০ সালে এটি পুনরায় উত্তোলন করা হয়। এটি ছিল প্রজেক্ট ন্যাটিকের ফেজ ২-এর পরিচালনা। প্রজেক্ট ন্যাটিক তিনটি ফেজের সমন্বয়ে তৈরি। প্রথম ফেজ শুরু হয় ২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার শান্ত পানিতে ডেটা সেন্টারটি ডোবানোর মধ্য দিয়ে। ১০৫ দিন ডুবন্ত অবস্থায় রেখে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতা যাচাই করেন গবেষকরা।
এর ফলাফলে আশাবাদী হয়ে ২০১৮ সালে ফেজ-২ শুরু করা হয়। ফেজ ২-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারের ধারণাটি পরিবেশ ও অর্থনৈতিকভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত, তা যাচাই করা। ফেজ ২-এর জন্য মাইক্রোসফট ফ্রান্সের নাভাল গ্রæপ নামক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। সমুদ্রের পানির সঙ্গে তাপ আদান-প্রদানের জন্য সাবমেরিনের কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় এতে। ১২ মাস বিদ্যুৎ ব্যয়, আর্র্দ্রতার মাত্রা, তাপমাত্রা ইত্যাদি পরীক্ষার পর ২০২০ সালের ৯ জুলাই ডেটা সেন্টারটি আরও বিশ্লেষণ করার জন্য আবার উত্তোলন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ফেজ-২ সম্পন্ন হয়। পরবর্তী ফেজের উদ্দেশ্য ডেটা সেন্টারের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা। তা প্রক্রিয়াধীন। মনে করা হচ্ছে, তৃতীয় ফেজের পরীক্ষা সফল হলে বাণিজ্যিকভাবে পানির নিচে শুরু হতে পারে ডেটা সেন্টারের ব্যবহার। ইতোমধ্যে চীনেও এ ধরনের ডেটা সেন্টার নির্মাণ শুরু হয়েছে।
প্রযুুক্তি নিয়ে কয়েকটি বিস্ময়কর ঘটনা
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ সময়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির সুবিধা উপভোগ করছে মানুষ। প্রযুক্তি দুনিয়ায় এমন সব ব্যাপার রয়েছে যা ইতঃপূর্বে হয়তো অনেকে শুনেনি। এগুলো এমনই যে, প্রথম শোনায় ¯্রফে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। পৃথিবীর ১০ টাকার মধ্যে ৯ টাকাই ডিজিটাল। বর্তমানে বিশ্বে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মুদ্রা ডিজিটাল। এর মধ্যে রয়েছে, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, অনলাইন কেনাকাটা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি। কাগুজে নোট আর ধাতব মুদ্রা আকারে আছে শতকরা আট ভাগ। নিনটেন্ডো শুরুতে প্লয়িং কার্ড তৈরি করত। বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও গেম কোম্পানি নিন টেন্ডো। এর প্রধান কার্যালয় জাপানের কিয়োটোতে। ভিডিও গেমের যুগ শুরু হওয়ার অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এটি। প্রতিষ্ঠার শুরুথেকে জাপানি এ প্রতিষ্ঠানটি প্লেয়িং কার্ড বা তাস তৈরি করত। ১৯৮৯ সালে কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ভিডিও গেম তৈরি করে ১৯৭৮ সালে।
বাইনারিতে গুগল প্রথম টুইট করেছিল
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল ২০০৯ সালে প্রথম টুইট করে। আর টুইটটি বাইনারিতে। সে সময় বেশিরভাগ টুইটার ব্যবহারকারীই বুঝতে পারেননি ওই টুইটের অর্থ কি। বাইনারি টুইটটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করলে ওই টুইটের অর্থ দাঁড়ায় ‘আই অ্যাম ফিলিং লাকি!’ গুগলে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ কোটি সার্চ হয়। পুরো বিশ্বের মোট ইন্টারনেট ট্রাফিকের শতকরা ৭.২ ভাগ আসে গুগল সার্চ থেকে। আর সংখ্যার হিসাবে এ অনুসন্ধান মোট সাড়ে তিনশ কোটি।
স্যামসাংয়ের যাত্রা মুদি দোকান হিসাবে
ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট খ্যাত স্যামসাংয়ের যাত্রা ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করা লি বিয়ং চল এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ডেইগ নামক শহর থেকে তিনি ৪০ জন কর্মী নিয়ে একটি নুড্লস তৈরির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তারা নুড্লস তৈরির পাশাপাশি পুরো শহরজুড়ে বিভিন্ন গ্রোসারি পণ্য সরবরাহের কাজ করত। এর পর ষাটের দশকে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে প্রবেশ করে।
নোকিয়া শুরুতে টয়লেট পেপার বিক্রি করত
‘নোকিয়া করপোরেশন’ ফিনল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত কোম্পানি। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। নোকিয়া বহনযোগ্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস প্রস্তুত করে থাকে, প্রধানত মোবাইল ফোন। ১২০টি দেশে নোকিয়াতে ১,৩২,০০০-এরও বেশি লোক কর্মরত। অথচ জনপ্রিয় মোবাইল ফোন কোম্পানি নোকিয়া শুরুতে টয়লেট পেপার বিক্রি করত। এ ছাড়াও টায়ার, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যও ছিল তাদের ব্যবসায়।
বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন মটোরোলা
এটা সর্বজন স্বীকৃত যে বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন নির্মিত হয় মটোরোলা। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ড. মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। তারা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ২ কেজি (৪.৪ পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন। মার্টিন কুপার হ্যান্ডহেল্ড মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করে প্রথম ফোন কল করেছিলেন। কলের অপর প্রান্তে ছিলেন প্রতিদ্ব›দ্বী বেল ল্যাবসের (এখনকার এটিঅ্যান্ডটি) ড. জোয়েল এস এঙ্গেল।
শতকরা ৩৫ ভাগ ওয়েবসাইট চলে ওয়ার্ডপ্রেস
ওয়ার্ডপ্রেস একটি মুক্ত সফটওয়্যার, ডাউনলোড, ইনস্টল, ব্যবহার এবং তা পরিবর্তন করা যায়। আপনি যে কোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ওপেন সোর্স কোড সফটওয়ার, আপনি যে কোনো সময় মোডিফাই/পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন। ২০২০ সালের হিসাবে, সাড়ে ৪৫ কোটিরও বেশি ওয়েবসাইট তাদের কনটেন্ট ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে। এর মানে হচ্ছে, ওয়েবসাইটের বাজারে ওয়ার্ডপ্রেসের দখল শতকরা ৩৫ ভাগ!
সব সময় অতীতে থাকি আমরা
বিচিত্র সব তথ্য জেনে যখন অবাক হচ্ছেন, তখন আসলে আপনি অবাক হচ্ছেন ৮০ মিলিসেকেন্ড আগে জানা তথ্য নিয়ে।
ইন্দ্রিয় থেকে পাওয়া তথ্য আমদের অনুভব করতে সময় লাগে ৮০ মিলিসেকেন্ড এমনটাই জানা গেছে, বেইলোর কলেজ অফ মেডিসিনের এক গবেষণা থেকে।
প্রযুক্তি বদলে দেবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার
সারা বিশ্বে বিজ্ঞানভিত্তিক যত বিস্ময়কর আবিষ্কার হয়েছে তাদের অন্যতম কম্পিউটার আবিষ্কার। এটি একটি প্রোগাম বা সফটওয়্যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা ক্রমান্বয়ে স্বয়ংক্রিয় ও বাধাহীনভাবে উচ্চ গতিতে নির্ধারিত ডাটা গ্রহণ করে। প্রয়োজনীয় অ্যালগরিদম এবং কমান্ড (ইনস্ট্রাকশন) অনুযায়ী গাণিতিক ও যৌক্তিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে এবং সে অনুযায়ী ফলাফল প্রদর্শন করে। কম্পিউটার শব্দটি লাতিন ‘কম্পিউটারে’ থেকে আগত, এর অর্থ গণনা বা গণনাকারী যন্ত্র। শুরুতে অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটার এবং পরে হাইব্রিড তথা ক্লোন কম্পিউটার মানুষের হাতে আসে। ডিজিটাল ও অ্যানালগ শব্দ দু’টি দ্বারা কম্পিউটারের দুই ধরনের কাজের ধারা বোঝায়।
অ্যানালগ কম্পিউটার ডাটাকে বৈদ্যুতিক ভোল্টে পরিণত করে, আর ডিজিটাল কম্পিউটার সংখ্যাকে বৈদ্যুতিক রিদম বা ছন্দে পরিবর্তন করে। আর এই অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যক্রম ও বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হলো হাইব্রিড কম্পিউটার। আছে সুপারকম্পিউটারও, যার গতি আরো বেশি। এসব কম্পিউটারকে পেছনে ফেলে হাজার হাজার গুণ গতিসম্পন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হচ্ছে, যা ২০২৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে আসবে বিশ্ববাজারে। আসবে সুপারফাস্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটার, যা নিয়ন্ত্রণ করবে ভবিষ্যতের কোয়ান্টামজগৎ।
ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে পলিনমিয়াল (বহুপদী সংখ্যামালা), ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন আর জটিল ও যৌগিক সংখ্যার মৌলিক উৎপাদক সমাধান করতে চাইলে অনেক সময় লাগে। কারণ ক্রিপ্টোগ্রাফির অনেক প্রটোকল আছে, যা সাধারণ কম্পিউটার দ্বারা প্রাইম ফ্যাক্টরাইজেশন বা লিনিয়ার সার্চের কমপ্লিক্সিটি স্কয়ার রুট, রাসায়নিক বিক্রিয়া, সিমুলেশন ইত্যাদি খুব দ্রæত করতে পারে না। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম মেকানিকসের বিভিন্ন ধর্ম, যেমন এনট্যাঙ্গলমেন্ট, টেলিপোর্টেশন, সুপারপজিশন ইত্যাদি ব্যবহার করে খুব দ্রæত বিশ্লেষণ করতে পারে। এই কম্পিউটারটি মানুষের আন্দাজ ও অনুভূতি, ইচ্ছা ও অনিচ্ছার সংকেত, দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ ও স্পর্শের অনুভূতি সহজে বুঝতে পারবে, এমনকি আচরণ ও অনুধাবন করবে মানুষের মতো।
ট্র্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ভাষ্য, ট্রান্সক্রিপ্টর নামের জৈব ট্রানজিস্টরটি ডিএনএর মধ্যকার এনজাইমের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে ক্যান্সার বা এইডসের মতো মারণব্যাধির পথ দেখাতেও সাহায্য করবে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আমাদের এই মহাবিশ্বকে বাঁচানোর জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতার সমস্যার প্রকৃতি বোঝা এবং কার্বন ধরে রাখা যাবে কি না তা-ও জানতে পারব এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে। মানবসভ্যতার জন্য কল্যাণকর অথচ এখনো বিজ্ঞানীদের ভাবনায় আসেনি এমন অনেক কিছুই সংযুক্ত হবে আগামী দিনের এই কম্পিউটারে। যেমনটি মানুষ একদিন স্বপ্নেও ভাবেনি টাচস্ক্রিনের কথা, যা এখন মানুষের হাতে হাতে।
সাধারণ বা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যা (০, ১) দিয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে। মূলত সার্কিটে নির্দিষ্ট মাত্রার ভোল্টেজের উপস্থিতি হলো ১ (অন), অনুপস্থিতি হলো ০ (অফ)। এই ০, ১ হলো ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে তথ্যের একক, যাকে বলা হয় ‘বিট’। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ফেনোমেনা’ বা ‘কোয়ান্টাম যান্ত্রিক ঘটনা’র ওপর ভিত্তি করে। এটি হচ্ছে বাইনারি (০, ১) সংখ্যার মিশ্রণ (স্পিন) পদ্ধতি, যাকে বলা হয় সুপারপজিশন (উপরিপাতন)। এই বিটকে বলা হয় ‘কিউবিট’। তাহলে এই মিশ্রণ কিভাবে ঘটে? সেটা অনেকটা কোয়ান্টামতত্তে¡ব বর্ণিত পদার্থের কণা ও তরঙ্গ ধর্মের মতো।
কোয়ান্টাম দুনিয়ায় একই কণা একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় থাকতে পারে এবং তরঙ্গ ও কণাধর্মী আচরণের মধ্যে তার বিচরণও সক্রিয়। আর এটিই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল শক্তি, যা ০ ও ১-এর সহাবস্থানের মাধ্যমে একসঙ্গে বহু তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম। এটি এর গতি ও শক্তিকে দ্বিগুণ বা বহুগুণ নয়, বাড়ায় জ্যামিতিক হারে। যেমন দুই কিউবিটে যদি চারটি সংখ্যা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে তিন কিউবিটে যাবে আটটি, আর চার কিউবিট পারবে ১৬টি সংখ্যা। ফলে তথ্য আদান-প্রদান ও বিশ্লেষণ হবে দ্রæতগতিতে এবং তাতে সময় অনেক কম লাগবে।
গুগলের সিকামোর প্রসেসর সাড়ে তিন মিনিট সময়ে এমন এক হিসাব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রচলিত সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের করতে ১০ হাজার বছর লাগত। গুগলের এআই কোয়ান্টামের গবেষকরা জানান, এক পরীক্ষায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রসেসর জটিল একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান বের করেছে ২০০ সেকেন্ডে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দ্রæতগতির সুপারকম্পিউটারে সমাধানটি বের করতে সময় লাগত ১০ হাজার বছর।
গবেষণায় প্রতীয়মান যে প্রতিদিন আমরা ২.৫ হেক্সাবাইট তথ্য উৎপাদন করছি, যা ৫০ লাখ ল্যাপটপে থাকা কনটেন্টের সমান। আবার প্রতিটি ক্ষদ্র্রাতিক্ষুদ্র যন্ত্র থেকেও প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ডাটা। এত বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণের চাহিদা অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রসেসরে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই ধারা বজায় রাখতে হলে আরো বেশি ট্রানজিস্টর দিতে হবে, ফলে ট্রানজিস্টরকে আরো ছোট করতে হবে।
এভাবে প্রতিনিয়ত ট্রানজিস্টর ছোট করতে করতে অ্যাটমিক পর্যায়ে চলে যাবে। আর তখন আগের মতো ‘অন’, ‘অফ’ করে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা যাবে না। ফলে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর মধ্যে বিদ্যুৎ ইচ্ছামতো থামিয়ে রাখা বা প্রবাহিত করানো যাবে না। এই পরিস্থিতিতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তার সুপারপজিশনের মাধ্যমে (অনবরত ‘অফ’-‘অন’-এর মিশ্রণ পদ্ধতি) বিশাল এই তথ্যভাÐার বিশ্লেষণ করবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে, যা এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্ভব ছিল না। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি, এনক্রিপশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা এবং শক্তিক্ষেত্রের মতো শিল্প বিকাশ তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাফল্য আসবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের হাত ধরেই।
এককথায় পুরো কম্পিউটার-প্রযুক্তি বদলে দেবে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এই কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান হবে আরো উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিময়। তবে নতুন এই কম্পিউটারের যেমন অনেক ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অসদ্ব্যবহারের কারণে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। সন্ত্রাসীদের হাতে এই কম্পিউটার পড়লে এত দিনের ব্যবহৃত পুরো ইন্টারনেটব্যবস্থা নষ্ট করে দিতে পারবে কয়েক সেকেন্ডে। কোটি কোটি মানুষের তথ্য চলে যাবে সন্ত্রাসীদের দখলে। হ্যাকড হয়ে যাবে সব সরকারি তথ্য। ইন্টারনেটভিত্তিক আর্থিক লেনদেনে (ই-কমার্স, ই-পেমেন্ট) দেখা দেবে বিপর্যয়।
নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ কলিন উইলমট বলেন, যে পক্ষ সবার আগে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মালিক হবে, সেই পক্ষই এই অসীম ক্ষমতার অধিকারী হবে। অতএব, যে রাষ্ট্র বা কম্পানি সবার আগে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পারবে, সেই দেশই পরে সারা বিশ্বে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দেবে। তবে প্রথম এই কম্পিউটার যদি কোনো অসৎ ব্যক্তির হাতে পড়ে তাহলে এর রক্ষা নেই। প্রযুক্তিপ্রেমী তথা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা একটাই, যেন কাক্সিক্ষত এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার মানুষ ও প্রকৃতির কল্যাণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
ফ্রিল্যান্সাররা পাচ্ছেন ৪ শতাংশ প্রণোদনা
বিদেশি বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে কাজ করে আয় করায় উৎসাহ বাড়াতে ফ্রিল্যান্সারদের প্রাথমিকভাবে ৫৫টি স্বীকৃত প্ল্যাটফরম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এসব অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে আয় করলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ স্বীকৃত এসব মার্কেটপ্লেসের তালিকা প্রকাশ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সাররা সফটওয়্যার ও আইটিইএস সেবা অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে রপ্তানি করে থাকে। সফটওয়্যার ও আইটিইএস সেবা রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট অনলাইন মার্কেটপ্লেসকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ার শর্ত রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এক সার্কুলারে সফটওয়্যার ও আইটিইএস সেবা রপ্তানির বিপরীতে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের স্বীকৃত হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি আরেকটি সার্কুলারে স্বীকৃত মার্কেটপ্লেসগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি করা সফটওয়্যার ও আইটিইএস সেবার আয় কীভাবে নগদ প্রণোদনাযোগ্য হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মার্কেটপ্লেসের ওই তালিকায় নাম রয়েছে- আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, গুরু, পিপল পার আওয়ার, টপটাল, ফ্লেক্সজব, ৯৯ ডিজাইনস, সিমপ্লি হায়ার্ড, অ্যাকুয়েন্ট, পাবলফট, ডিজাইনহিল, বার্ক, গোলেন্স, ফ্রিআপ, হাবস্টাফ ট্যালেন্ট, সলিড গিগস, উই ওয়ার্ক রিমোটলি, গিগস্টার, ড্রিববল, বিহেন্স, ক্লাউডপিপস, এনভাটো, হ্যাকারন, আমাজান মেকানিকাল টার্ক, শাটারস্টক, অ্যাডোবি স্টক, আই স্টক, ডিপোজিট ফটোসস, ১২৩ আরএফ, পন্ড৫, ড্রিমসটাইম, ক্রিয়েটিভ মার্কেট, ক্যানস্টকফটো, অ্যালামি, ইউনিটি অ্যাসেট স্টোর, স্কেচফ্যাব, ফ্রিপিক, অ্যাউইন, শেয়ারঅ্যাসেল, ফ্লেক্সঅফারস, ম্যাক্সবাউন্টি, ট্রেডডাবলার, সিজে অ্যাফিলিয়েট, ভিগলিংক, জেভিজু, রাকুটেন, ক্লিকব্যাংক, আমাজন অ্যাসোসিয়েটস, ওয়ালমার্ট অ্যাফিলিয়েট, গুগল অ্যাডসেন্স, ফেসবুক মনিটাইজেশন, ইউটিউব মনিটাইজেশন, অ্যাপস্টোর ও প্লেস্টোর।
কর্মপরিবেশের সংস্কৃতিতে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি কোম্পানীগুলে এগিয়ে রয়েছে
কর্মীদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা, কর্মজীবনের ভারসাম্যসহ কর্মপরিবেশের সংস্কৃতি উন্নত হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে কোম্পানির মুনাফা অর্জনে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন এমনটিই বলছে। এতে ২০২১ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৭০ হাজার কোম্পানির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কর্মপরিবেশের সংস্কৃতিতে বিশ্বসেরা কোম্পানিগুলোর নাম তুলে ধরা হয়। অনেক কোম্পানিই তাদের ‘উদার ও মহৎ কাজের পরিবেশ’ নিয়ে বড়াই করতে ভালোবাসে। কিন্তু বাস্তবে কয়টি প্রতিষ্ঠানে তেমন চর্চা রয়েছে? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অনেক প্রতিষ্ঠানেই কথা ও কাজে তেমন মিল নেই। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানে যে সত্যিকার অর্থেই কর্মিবান্ধব কর্মপরিবেশের সংস্কৃতি রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।
একটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি সচরাচর তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, বিবৃতি ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে কোম্পানি তার কর্মীদের কী রকম সুযোগ-সুবিধা দেয় এবং ম্যানেজার তথা ব্যবস্থাপকেরাই-বা কর্মীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, তার মাধ্যমেই বোঝা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ কতটা উদার, কতটা উন্নত। কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনাকারী ওয়েবসাইট কমপেয়ারেবলি সম্প্রতি তার নতুন বার্ষিক প্রতিবেদনে কর্মপরিবেশের সংস্কৃতিতে বিশ্বসেরা কোম্পানিগুলোর নাম প্রকাশ করেছে।
এতে কর্মীদের পাওয়া বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও কর্মজীবনের ভারসাম্য ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, সর্বোত্তম কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতিতে প্রথম স্থান পেয়েছে বিল গেটসের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি মাইক্রোসফট। ২০২১ সালের মার্চ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৭০ হাজার কোম্পানির তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। কমপেয়ারেবলির ওয়েবসাইটে দেওয়া ওই সব কোম্পানির কর্মীদের মতামত ও রেটিংয়ের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
কমপেয়ারেবলি ওয়েবসাইট কোম্পানিগুলোর বেতন, ক্ষতিপূরণ, সুযোগ-সুবিধা, আচার-ব্যবহার, কর্মজীবনের ভারসাম্য, পেশাগত উন্নয়নসহ ২০টি ইতিবাচক বিষয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনার ভিত্তিতে সর্বোত্তম কর্মপরিবেশসম্পন্ন সেরা কোম্পানিগুলোকে বাছাই করেছে। এ পর্যালোচনায় অবশ্য সেই সব কোম্পানিকেই বিবেচনা করা হয়েছে, যাদের কর্মিসংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
কমপেয়ারেবলির পর্যালোচনায় এবারও বিশ্বের সেরা কোম্পানি নির্বাচিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট। বিল গেটস ও পল অ্যালেন ১৯৭৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাইক্রোসফট কম্পিউটার সফটওয়্যার, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, পিসি (পারসোনাল কম্পিউটার) ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন করে। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব পালন করছেন সত্য নাদেলা। আর মাইক্রোসফটের মোট কর্মীসংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজারের বেশি।
দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের শতবর্ষী বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস (আইবিএম) করপোরেশন। চার্লস র্যানলেট ফ্লিন্ট ১৯১১ সালে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন আইবিএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন অরবিন্দ কৃষ্ণ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে মোট চার লাখ কর্মী কাজ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি গুগল রয়েছে তালিকার তৃতীয় স্থানে। এটি মূলত ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন, যেটি ইন্টারনেট-সংক্রান্ত বিভিন্ন পণ্যসেবা বাজারজাত করে থাকে। গুগলের উল্লেখযোগ্য পণ্যসেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অনলাইন বিজ্ঞাপন, ক্লাউড কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সফটওয়্যার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হার্ডওয়্যার ইত্যাদি। ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এ কোম্পানি। এখন সিইও হিসেবে আছেন সুন্দর পিচাই। বর্তমানে গুগলের কর্মীসংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার।
যেভাবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য হলো মোবাইল-ল্যাপটপ
দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি প্রযুক্তি পণ্যকে কী নামে ডাকা হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘মেক ইন বাংলাদেশ’, নাকি ‘অ্যাসেমবিøং ইন বাংলাদেশ’ লেখা হবে এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদকরা বলেছেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-ই হবে। অন্য কোনও কিছু বলার সুযোগ নেই।
তবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য নামে ডাকার জন্য সরকারের মৌলিক শর্ত ছিল মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদিতে স্থানীয়ভাবে ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করতে হবে। দেশের ১৪টি মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগই ৩০ শতাংশের কোটা পূরণ করতে পেরেছে। যারা এখনও পারেনি, তারা একটা প্রক্রিয়ার ভেতর রয়েছে। শিগগিরই বাকি অংশটাও পূরণ হয়ে যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘অবশ্যই মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য বলতে হবে। মেক ইন বাংলাদেশ বা অ্যাসেমবিøং ইন বাংলাদেশ বলার কোনও সুযোগ নেই। দেশে মোবাইল কারখানা তৈরির জন্য আমরা অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। কারখানা-সংশ্লিষ্ট এলাকাকে হাইটেক পার্ক ঘোষণা করছি। সেখানে তারা কর অবকাশ সুবিধাসহ আরও অনেক সুবিধা পাচ্ছে। ৯৪টি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। যারা স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ রফতানি করছে, তারা ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাচ্ছে।’
এ বিষয়ে দেশে স্থাপিত প্রথম মোবাইল ফোন তৈরির কারখানার (স্যামসাং মোবাইল) উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেকট্রনিকস জানায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যের মৌলিক শর্ত হলো স্থানীয়ভাবে ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করতে হবে। স্যামসাংয়ের মোবাইল কারখানা স্থাপনের শুরুর দিকে আমরা প্রায় সব যন্ত্রাংশ আমদানি করতাম। সে সময় আমরা বলতাম মেইড ইন চায়না অ্যাসেমবিøং ইন বাংলাদেশ। পরে আমরা পিসিবি নিজেরা তৈরি করতে শুরু করি। ব্যাটারি, চার্জার, মোবাইলের পর্দা এখানে তৈরি করতে শুরু করে। এখন আমাদের ভ্যালু অ্যাডিশন ৩০ শতাংশের বেশি। ফলে আমরা মেড ইন বাংলাদেশ মোবাইল বলাই যায়।
আমাদের দেশে মোবাইল ফোন তৈরির ১৪টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা মানুফ্যাকচারিং (সিকেডি) এবং অ্যাসেমবিøং (এসকেডি) কাট্যাগরিতে কারখানার অনুমতি পেয়েছে। আমাদের জানা মতে, ১০টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল তৈরি করছে। তারা দেশে পিসিবি, চার্জার, ব্যাটারি, হেডফোন তৈরি করছে। ফলে তারা বলতেই পারে মেড ইন বাংলাদেশ। ৪টির মতো প্রতিষ্ঠান (মোবাইল কারখানা) এখনও সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব মোবাইল ফোন কারখানা প্রায় ২২ থেকে ২৬ শতাংশ স্থানীয়ভাবে ভ্যালু অ্যাড করছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের এই শতাংশ ১৮। তবে ১৮-এর নিচে কারও নেই বলে সবার অভিমত। স্থানীয় শ্রমিক-কর্মী, বিদ্যুৎ, নিজেদের ভবন ইত্যাদিও এই ভ্যালু চেইনের অংশ। ফলে মেড ইন বাংলাদেশ বলাই যায়। মেইড ইন বাংলাদেশ পণ্য বলতে হলে স্থানীয়ভাবে ওই পণ্যে ৩০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাড করতে হবে। ওয়ালটনের পণ্যে এই হার ৩০ শতাংশের বেশি।’ ওয়ালটন পিসিবি, মাদারবোর্ড, মাউস, কি-বোর্ড, পেন ড্রাইভসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করে। উল্লেখ্য, ওয়ালটন, স্যামসাং, নকিয়া, ভিভো, সিম্ফনি, আইটেল, টেকনো, ইনফিনিক্স, লাভা, লিনেক্স, অপো, রিয়েলমি, মাইসেল, ডিটিসি, ফাইভস্টার, উইনস্টার, শাওমি, প্রোটন ইত্যাদি মোবাইল দেশে তৈরি হচ্ছে।
হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক