আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩
হীরেন পণ্ডিত
প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল শিক্ষার অগ্রগতিতে এগিয়ে চলছে পৃথিবী। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য প্রসারিত করার উপর ডিজিটাল লিঙ্গ ব্যবধানের প্রভাব অন্বেষণ করবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের অধিকার রক্ষা এবং অনলাইন এবং আইসিটি-সুবিধাযুক্ত লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলার গুরুত্বকেও আলোকপাত করছে এই বিষয়গুলো।
প্রযুক্তির মধ্যে নারী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীকে আনার ফলে আরও সৃজনশীল সমাধান পাওয়া যায় এবং নারীর চাহিদা পূরণ করে এবং লিঙ্গ সমতাকে উন্নীত করে এমন উদ্ভাবনের সম্ভাবনাই বেশি। বিপরীতে, তাদের অন্তর্ভুক্তির অভাব ব্যাপক খরচের সাথে আসে: ইউএন উইমেনস জেন্ডার স্ন্যাপশট ২০২২ রিপোর্ট অনুসারে, ডিজিটাল বিশ্ব থেকে নারীদের বাদ দেওয়ায় গত এক দশকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির মোট দেশজ উৎপাদন থেকে এক ট্রিলিয়ন কম হয়েছে একটি ক্ষতি যা ২০২৫ সাল নাগাদ ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই প্রবণতাকে উল্টাতে হলে অনলাইন সহিংসতার সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে, যা ৫১টি দেশের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩৮ শতাংশ মহিলা ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেছেন।
উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল শিক্ষার জন্য একটি জেন্ডার-প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি নারীরা তাদের অধিকার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারে। ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতি উনয়ন এবং মানবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য এবং ২০৩০ এজেন্ডার টেকসই উনয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচুর সুযোগ প্রদান করে। দুর্ভাগ্যবশত, ডিজিটাল বিপ্লবের সুযোগগুলি লিঙ্গ বৈষম্যের বিদ্যমান নিদর্শনগুলিকে স্থায়ী করার ঝুঁকিও উপস্থাপন করে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ডিজিটাল দক্ষতা এবং প্রযুক্তির অ্যাক্সেসের প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এই ডিজিটাল লিঙ্গ বিভাজনের ফলে নারীরা পিছিয়ে পড়ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তাই একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা এবং জেন্ডার সমতা কর্মীদের একত্রিত করবে যাতে ডিজিটাল সরঞ্জামগুলিতে অ্যাক্সেসের উন্নতিতে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা হাইলাইট করার সুযোগ প্রদান করা যায় এবং একটি উচ্চ-স্তরের প্যানেল আলোচনা করা হবে।
যে হারে নারীর অগ্রগতি হয়েছে সে হারে কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটলেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি আশানুরূপ। বরং ক্রমান্বয়ে এ সহিংসতা বেড়েই চলেছে। এমনকি করোনাকালে সহিংসতা আরো বেড়েছে। করোনা সংকটের কারণে চলমান অবরুদ্ধ ও আতঙ্কগ্রস্ত পরিস্থিতিতে যেখানে নারীরা অধিক সহানুভূতি পাওয়ার কথা, সেখানে তাদের প্রতি সহিংসতার হার বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমনই প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ডিজিটাল: লিঙ্গ সমতার জন্য উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি। নির্যাতন-নিষ্পেষণ বন্ধসহ নারীদের সব অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯১১ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসের মধ্যে সব সীমাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠিত হয়নি নারীর অধিকার, বন্ধ হয়নি নির্যাতন। তবে কিছু অগ্রগতি হয়েছে মাত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকেও। এ সময়ে পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থা ও অবস্থানেও। বর্তমানে সমাজের প্রায় সব খাতেই নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের উপস্থিতি এখন শতভাগ। পোশাক শিল্পের কৃতিত্বের সিংহভাগই নারীর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই যেখানে নারী, সেখানে অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে খুব অল্পসংখ্যক নারীর মধ্যেই। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার দেশের নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মক্ষেত্রে অবাধ প্রবেশ ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এরপরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই এর ৫ এবং ১০ অভীষ্ট অর্জনে সাফল্য দেখাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। বাংলাদেশের সংবিধানেও এর প্রতিফলন আছে। কিন্তু ৫০ বছরে কি আমরা বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ করতে পেরেছি? সিডও সনদের শর্ত বাস্তবায়ন করতে হলেও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার কোনো বিকল্প নেই।
বিংশ শতাব্দীতে লিঙ্গসমতাভিত্তিক যে সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছিলেন রোকেয়া, সে সমাজ গঠনের পথে আজ ৫০-উত্তীর্ণ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বিশ্বের নারীর ক্ষমতায়নে আজ বাংলাদেশ রোল মডেল। নারী ক্ষমতায়ন মূল্যায়নে যেসব অনুঘটক বা সূচক ব্যবহার করা হয় তার সবকটি সূচকে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে এগিয়ে। এটি সম্ভব হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে। বঙ্গবন্ধু মূলত একজন নারীবাদী চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও লিঙ্গসমতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর নারী শিক্ষা প্রসার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাল্যবিয়ে নির্মূলের জন্য বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ সালে প্রণয়ন করা হয়। মেয়েদের শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে অবৈতনিক, চালু হয়েছে বৃত্তি, উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি। এর মাধ্যমে কমেছে নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার, বেড়েছে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এসব সুরক্ষা বলয় কর্মসূচির ফলে তৃণমূল ও প্রান্তিক নারীরা ভেঙে ফেলতে শুরু করেছেন বহু প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, ট্যাবুর সংস্কার ও বেড়াজাল। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি ও অসাধারণ সাফল্য এ বাস্তবতাকেই তুলে ধরে।
নারীর উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীবান্ধব সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার প্রণয়ন করেছে নারীবান্ধব বাজেট। নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে, স্তরে ও সেক্টরে বর্তমান সরকার নারীকে সম্পৃক্ত করেছে। রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, র্অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সব ক্ষেত্রে আজ রয়েছে নারীদের গর্বিত পদচারণ। রোকেয়ার দৃপ্ত উচ্চারণ ছিল- ‘পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয় তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে লেডী কেরানী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডী ম্যাজিস্ট্রেট, লেডী ব্যারিস্টার, লেডী জজ সবই হইবই’ (স্ত্রী জাতির অবনতি)। শেখ হাসিনা রোকেয়ার সেই আকাক্সক্ষাকেই আজ পূরণ করে চলেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, উপাচার্য, বিচারকসহ সব পদেই নারীর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রই শুধু নয়, আধুনিকায়ন ও গণতন্ত্রায়নের মূল কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। অথচ সেই আমেরিকার বাসিন্দারা শ্বেতকায় ও ক্ষমতাধর নারী হিলারি
দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য এর চেয়ে বড় ইতিবাচক শর্ত আর কী হতে পারে? বাংলাদেশের সংবিধানসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালায় নারীর রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
নারীর প্রতি নানারকম বৈষম্য, তার অধিকারের অস্বীকৃতি কিন্তু এরকম কিছু খুব বাস্তব ও বৈষয়িক কারণেই এসেছে- যা যুগে যুগে নারী জাতিকে কঠিন অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে। অনেক নারী মেধাবী এবং রীতিমতো লড়াই করেই সমাজে নিজের অবস্থান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সমাজের সব নারীর জন্যই এমন সুযোগ কেন আসে না? এসব প্রশ্নের উত্তর সরলীকরণ কঠিন। বলা যায় সমাজে বিদ্যমান নারীর প্রতি নানা ধরনের বৈষম্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি এর পেছনে কাজ করে। নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে সমাজ, মানুষের বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি যেন অদৃশ্য এক কাচের দেয়ালকে প্রতীয়মান করে।
নারী বরাবরের মতোই থেকেছে অধিকারবঞ্চিত, ক্ষেত্রবিশেষে অধিকতর। এর কারণ হলো, আমাদের মননে যা ক্রিয়াশীল তা হলো নারীকে বাঁচিয়ে রাখা, অধিকার দেয়া নয়। এ সমাজে নারীরা শারীরিকভাবে যতটা না নির্যাতিত তার চেয়ে ঢের বেশি হয় মানসিক নির্যাতনের শিকার।
পদে পদে তাকে অপমান সইতে হয়। লজ্জার কথা হলো, এ সমাজ এখনও নারীকে মানুষ হিসেবে যে সম্মান দেয়া প্রয়োজন তা করে না বা নারীর মানবাধিকারকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয় না। তবে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের ফলে নারী উন্নয়ন আজ সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, বিচারবিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্রবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শান্তিরক্ষা মিশনসহ সবক্ষেত্রে নারীর সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর সম অধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেছেন। নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সব অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সম-অংশীদারত্ব। আর তাই সারা বিশ্বে বদলে যাচ্ছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এখন নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল।
জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেটের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য হ্রাস ও সুযোগের সমতা সৃষ্টি। জেন্ডার বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, স্বাস্থ্য ও টিকাদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। নারীর আর্থসামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান হয়। এজন্য দরকার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা ও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরের অর্জন আছে অনেক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন লক্ষ্য ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জন। গত ১৪ বছরে নারী ও শিশুর উন্নয়নে প্রণীত নীতিমালা, আইন ও বিধিমালাগুলোর জন্য সরকার গত ১৪ বছরে নারী ও শিশুর উন্নয়নে বেশকিছু আইন-নীতি ও বিধিমালা তৈরি করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১; জাতীয় শিশু নীতি ২০১১; শিশুর প্রারম্ভিক যতœ ও বিকাশের সমন্বিত নীতি ২০১৩; মনোসামাজিক কাউন্সেলিং নীতিমালা ২০১৬ (খসড়া); জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নকল্পে কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০১৫; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০; ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৪; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩; বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭।
দুস্থ নারীদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তামূলক ভিজিডি কার্যক্রম। দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার (স্তন্যদানকারী মা) সহায়তা, শিক্ষিত বেকার মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে দেশের সবকটি জেলার শিক্ষিত বেকার নারীদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ‘জয়িতা’: দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিপণন এবং বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে জয়িতার মাধ্যমে একটি নারী উদ্যোক্তা বান্ধব আলাদা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে সারা দেশব্যাপী গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশি ও আইনি সহায়তা, মানসিক ও সামাজিক কাউন্সেলিং, আশ্রয়সেবা এবং ডিএনএ পরীক্ষার সুবিধা ওসিসি হতে প্রদান করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার, ১০৯ নম্বরে ফোন করে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু, তাদের পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট সকলে প্রয়োজনীয় তথ্য, পরামর্শসহ দেশে বিরাজমান সেবা এবং সহায়তা সম্পর্কে জানতে পারে। কিশোর-কিশোরী ক্লাব, কর্মরত নারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের আবাসনের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ প্রদান। পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য চা বাগান, সিটি কর্পোরেশনের বস্তি, কেন্দ্রীয় কারাগার, যৌনপল্লীসহ প্রান্তিক শিশুদের জন্য পুরস্কার বিতরণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
জয় মোবাইল অ্যাপস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড নির্যাতনের শিকার কিংবা নির্যাতনের আশংকা রয়েছে এ রকম নারী ও শিশুদের তাৎক্ষণিকভাবে সহয়তা প্রদান করার জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ফরমে বাবার পাশাপাশি মা অথবা ‘আইনগত অভিভাবকের’ও স্বীকৃতি দিয়েছে হাইকোর্ট। এর ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সমাজে নারী পেলো প্রাপ্য স্বীকৃতি৷ হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক- এই তিন বিকল্পের যেকোনো একটি উল্লেখ করেই শিক্ষার্থীরা এখন থেকে ফরম পূরণ করতে পারবে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক