পরিতৃপ্তির চওড়া হাসি শোভা পাচ্ছিল তাসকিন-মিরাজ-সাকিবদের বদনে। সিরিজ জয়ের পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই, সেটাও দোর্দণ্ড প্রতাপে, এমন উপলক্ষে টিম বাংলাদেশ উল্লাসে ভেসে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমন সাফল্য সচরাচর পাওয়া হয় না টাইগারদের। সেই কবে এই সংস্করণে একবার আয়ারল্যান্ড (২০১২ সালে ৩-০ ব্যবধানে) এবং জিম্বাবুয়েকে (২০২০ সালে ২-০ ব্যবধানে) ধবলধোলাই করেছিল তারা। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় ওই সাফল্যে পূর্ণতৃপ্তি মেলেনি, ক্রিকেট জগতের কুলীন বাসিন্দা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এবার তা পাচ্ছে টিম বাংলাদেশ। মাস পাঁচেক আগেই যারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে, প্রথম সিরিজেই তাদের ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার রূপকথা, টাইগারদের ক্রিকেট পুরাণে চিরস্থায়ী জায়গা নিয়েই থাকবে।
আদর্শ মেজাজে টি-টোয়েন্টি খেলতে না পারার যে দুর্নাম দেড় দশক ধরে বয়ে বেড়িয়েছে বাংলাদেশ, নিরঙ্কুশ দাপট দেখিয়ে পরপর তিন ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সেই দুর্নাম কিছুটা হলেও ঘুচিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রামে, ৬ উইকেটের জয়ে। এরপর ঢাকায় ফিরে ৪ উইকেটের জয়ে সিরিজে থাবা বসানো টাইগাররা মঙ্গলবার জয় তুলে নিয়েছে ১৬ রানে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝুলিতে জমা করা ১৫৮ রানকেই জস বাটলারের দলের জন্য অনতিক্রম্য বানিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। যদিও অতিথিদের ইনিংসের ১৩ ওভার পর্যন্ত মনে হয়েছে, হারের হতাশায় ডুবে যাবে স্মরণীয় সিরিজের শেষটা।
ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরুর পরও শেষটা যেমন হতাশার ছিল, হতাশার ছিল বোলিংয়ের শুরুটাও। অভিষিক্ত তানভির ইসলাম দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিল সল্টকে ফিরিয়ে দিলেও ডেভিড মালানের (৫৩) হাফসেঞ্চুরি এবং বাটলারের (৪০) প্রতিঘাতে ১৩ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। তাদের ৯৫ রানের জুটিতে জয়ের পাল্লা তখন পুরোপুরি অতিথিদের দিকে হেলে। অশুভ ভাবনায় মিরপুর শেরেবাংলার পূর্ণ গ্যালারিতে তখন শ্মশানের নীরবতা। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে মালানকে ফিরিয়ে নীরবতা ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। ঠিক এর পরের বলেই মিরাজের সরাসরি থ্রোতে বাটলার রানআউট।
হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া জুটির বিদায়, টাইগার শিবিরের উল্লাস তখন দেখে কে? জয়ের স্বাদটা মূলত তখন থেকেই পেতে শুরু করে স্বাগতিকরা। মইন আলি এবং বেন ডাকেট চেষ্টা চালিয়েছিলেন নতুন করে ভীতি ছড়ানোর। তবে ইনিংসের ১৭তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে চার বলের ব্যবধানে দুজনকেই নিজের শিকার বানান তাসকিন। তবুও শেষ তিন ওভারে ৩৯ রান, অসম্ভব ছিল না। কিন্তু শেষ ওভারে সমীকরণ যখন ২৭, মিরপুরের উইকেটে তা অসম্ভবেরই নামান্তর। ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ যেখানে ছিল ২৭, ওই রানটা এক ওভারেই ইংল্যান্ড করে ফেলবে, তা হয় নাকি!
ব্যাটিংটা শেষবেলায় অমন মলিন ছিল বলেই প্রত্যাশিত মাত্রা পায়নি দলের পুঁজি। রনি তালুকদারকে (২২ বলে ২৪) নিয়ে কৌশলী শুরুর পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন লিটন দাস। ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যাওয়ার পর উইকেটে এসে নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন খুনে মেজাজে। তাতে নবম থেকে পঞ্চদশ- এই সাত ওভারেই ঝুলিতে যোগ হয় ৭৫ রান। ১৫ ওভার শেষে কেবল রনির উইকেটটি খুইয়ে ঝুলিতে যখন ১৩১ রান, তখন স্বাগতিকদের সংগ্রহ ১৮০ ছাড়ানো হবে বলেই ধারণা ছিল। কিন্তু ক্যারিয়ারের নবম হাফসেঞ্চুরিকে ক্যারিয়ারসেরা বানিয়ে ম্যাচসেরা লিটন ৭৩ রানে বিদায় নিতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
সিরিজসেরা শান্ত এবং সাকিবের ব্যাটিং বলছিল মিরপুরের উইকেটে রান করার থেকে কঠিন কাজ আর নেই। ঠিকঠাক বলে-ব্যাটে করতে পারছিলেন না তারা। খুব কাছে গিয়েও শান্তর তাই হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়া হয়নি। ৩৬ বল খেলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন এই বাঁহাতি। তবে এই ম্যাচ জিতে ইংলিশদের দর্পচূর্ণ করে দল যে উচ্চতায় ওঠেছে, তখন আর কোনো কিছুরই আক্ষেপ শান্ত-সাকিবদের নেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি সিরিজ শুরুর আগে তারা বরং প্রাপ্তি-সুখে গা ভাসাচ্ছেন।