সবার জন্য স্বাস্থ্য: শুধু স্লোগান নয় সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন


হীরেন পণ্ডিত: বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক চাহিদা বা প্রয়োজন হিসেবে চিকিৎসাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে; কিন্তু সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য না থাকায় তা বলবৎযোগ্য অধিকার হিসেবে দাবি করা যাচ্ছে না। দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্যকে বলবৎযোগ্য মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া দরকার এবং রোগ প্রতিরোধকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৫,০৫৫টি, যেখানে মোট শয্যার সংখ্যা ৯০,৫৮৭টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে কিছু অর্জন করেছে যা চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে রয়েছে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমানো। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বরাবরই ইস্যুভিত্তিক ছিল। সার্বিক কোন পরিকল্পনা করা হয়নি।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের পর দেখা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী, উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা কিংবা রাজনীতিবিদদের অনেকেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে অনেকে বাংলাদেশে চিকিৎসা করানোর বিষয়টি চিন্তা করতেন না। কিন্তু দুর্যোগের এই সময়ে সরকারি হাসপাতাল হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা।

সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক ও সরকারি বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে দেশ ইতিমধ্যেই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রমে বা ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় পাইলট আকারে হেলথ স্কিমের মাধ্যমেও ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ কার্যক্রম সরাসরি চলছে। পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। যদিও দেশে এখনও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এখনো দলিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, হিজড়া সম্প্রদায়, নরসুন্দর, সুইপার, কামার, যৌনকর্মী, জেলে, মুচি, মেথর, আদিবাসী সম্প্রদায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অনেককে তাদের সাংবিধানিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা নিতে অনেক বিড়ম্বনার সম্মুখিন হতে হয় আমাদের মন-মানসিকতার কারণে। এইসব জনগোষ্ঠি তাদের প্রবেশাধিকারের বিড়ম্বনার কারণে সরকারী হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়।

তবে চিকিৎসা থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে। কিন্তু সবার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও দেশের কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ হয়নি। অন্যদের লকডাউন থাকলেও চিকিৎসা বা চিকিৎসাকর্মীরা মানুষের জন্য সেবা দিয়ে গেছেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও।

মানুষের যখন পকেটের পয়সা খরচ করে স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে না, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে যখন প্রয়োজন তখনই যে কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে গ্রহণ করতে পারবেন তখনই আমাদের দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য আরো লম্বা পথ পাড়ি দিতে হতে পারে। যদিও আমাদের মতো এত জনবহুল দেশের সব মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া কঠিন।

এখন আমরা আছি এসডিজি যুগে। আগে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সবার জন্য স্বাস্থ্য। এখন বলা হচ্ছে, সবার জন্য সহজলভ্য ও মানসম্মত স্বাস্থ্য। সবার জন্য স্বাস্থ্য বলতে যে প্রত্যাশার কথা আমরা বলি তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে দিনবদলের কারণে প্রত্যাশাকেও এখন আমাদের নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। কোভিড-১৯, এর মত নতুন নতুন রোগ মহামারির আকার নিচ্ছে। এখন মহামারি হচ্ছে ক্যানসার, হার্ট এ্যাটাক এবং ডায়াবেটিস এগুলো হচ্ছে নতুন যুগের, মানে এসডিজি যুগের মহামারি।

এখন স্বাস্থ্য খরচ অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। সরকারি হিসাবের তথ্য বলছে, আমাদের স্বাস্থ্যের পেছনে যত খরচ হয়, তার ৭৩ শতাংশই মানুষ নিজের পকেট থেকে খরচ করছে। অথচ বৈশ্বিক মান হচ্ছে ৩৪ শতাংশের মতো। তার প্রায় দ্বিগুণ আমরা খরচ করছি। আমাদের কাছে স্বাস্থ্য খরচ একটা বড় বোঝা। স্বাস্থ্যসেবার খরচের বিষয়টি আমরা ঠিকমতো স্বীকার করি না বলে। স্বাস্থ্য খরচ নির্বাহ করতে গিয়ে শুধু দরিদ্র নয়, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও নিঃস্ব হয়ে যায়। কারণ, এখন অসুখের ধরনও পাল্টে গেছে। ক্যানসার অথবা ক্রনিক অসুখের কারণে অনেককে ওষুধ খেয়ে যেতেই হচ্ছে। কিছু উদ্যোগ অবশ্য সরকারের আছে। অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিলি করার বড় ধরনের প্রোগ্রাম আছে। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। প্রান্তিক, দলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারে বিড়ম্বনার বিষয়টি বিষয়টি সামনে এসেছে।

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কোভিড-১৯ নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের নানা অভিজ্ঞতা যেন আমাদেরকে একটা কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয় সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে কমিউনিটির সকলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতা, সকল সেক্টরের সমন্বয়, যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ন্যায্যতার-ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়টিও সেখানে উল্লেখিত হয়েছিল। দেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিট ক্লিনিক রয়েছে যে গুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করছে। তবু তা যথেষ্ট নয়।

এছাড়া অধিকারভিত্তিক একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্থানীয় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবদান রাখতে পারে। দেড়শ বছরের পুরোনো এ প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় মানুষকে সাথে নিয়ে কোভিড-১৯ কিংবা এ ধরনের বড় দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে স্থানীয় অনেক সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে।

স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের যে কোন আলোচনাতেই প্রাধান্য পায় কোথায় ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, হাসপাতাল নেই, সিট নেই, হাসপাতালের দুরবস্থা, দুর্নীতি, অনিয়ম, বাজেটে বরাদ্দ কম, দালালদের উপদ্রব ইত্যাদি অনেক বিষয়। এর প্রতিটি বিষয়ই চিকিৎসাকেন্দ্রিক। এ বিষয়গুলোরও আলোচনা ও সমাধান প্রয়োজন। কিন্তু এ সকল আলোচনার ভিড়ে হারিয়ে যায়, আমরা কীভাবে রোগ হ্রাস বা প্রতিরোধ করতে পারি।

স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের অধিকার, কারো দয়া বা করুণার বিষয় নয়, এটাও সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে বোঝানো এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যারা সেবা প্রদানকারীর ভূমিকায় আছেন তাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। অধিকারভিত্তিক একটি স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলেই এইসব ক্ষেত্রে অর্জন, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করা এবং সর্বোপরি কোভিড-১৯ কিংবা এ ধরনের মহামারি আরও সুদৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করা সহজতর হবে। পাশাপশি প্রান্তিক, দলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিড়ম্বনা দূর করে স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

এসডিজি বাস্তবায়নে সকলের জন্য, অভীষ্ট এসডিজি ৩ স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা ও এসডিজি ১০ বৈষম্য হ্রাস করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। অভীষ্ট ১০ এর সব লক্ষ্য অসমতা কমানোর বিষয়ে। সুতরাং, এটি বলা যেতে পারে যে, প্রত্যেকের চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো অভীষ্ট বাস্তবায়িত হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। তাই ‘কাউকে পেছনে না ফেলে’ উন্নয়ন সব অভীষ্টের জন্যই প্রযোজ্য। অতএব, পেছনে কাউকে ফেলে না যাওয়া মানে প্রতিটি একক ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো এবং এটি ২০৩০-এর এজেন্ডার অন্যতম সুন্দর বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে প্রায় মিল আছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের, সেখানে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবীমার ক্ষেত্রে গত দশকে খুব অল্প কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বরাদ্দ অর্থের বর্তমানে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য সরকারের তরফ থেকে একটি ঘোষণা আসা দরকার। পাশাপাশি চাকরিজীবীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা প্রদানকারী চাকরিদাতাদের সরাসরি কর সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বিমার ব্যাপ্তি বাড়ানো যেতে পারে। চাকরিদাতা ও চাকরিজীবী উভয়ের অবদানের ভিত্তিতে একটা কর্মচারী স্বাস্থ্যবীমা ফান্ড গঠন করার লক্ষ্যে উপযোগী বিধিমালা প্রণয়ন করা যায়। একইভাবে সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা শুধু চিকিৎসা ভাতার বদলে চালু করতে পারে সরকার, এতে অন্যরাও এটি অনুসরণ করতে উৎসাহিত হবে। আবার, বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় স্বাস্থ্যবিমার কোনো স্কিম গ্রহণ করবে তাদের আয়করে বিশেষ অর্থসুবিধা প্রদান একটি ভালো পদ্ধতি হতে পারে।

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে জনপ্রতি স্বাস্থ্যসেবা বাবদ কত শতাংশ আউট-অব-পকেট ব্যয় হয়, এই জরিপে ৭৩ শতাংশ ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করছে, যা প্রতিবেশী দেশ ভারত (৫৫ শতাংশ) ও পাকিস্তানের (৫৪ শতাংশ) চাইতেও বেশি। উন্নত দেশগুলোতে অথবা যেসব দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিকাশ ঘটেছে সেসব দেশে এই হার ২০ শতাংশের নিচে। একইভাবে, স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় জিডিপির কত শতাংশ সেদিকে নজর দিলেও আমরা দেখি এখানেও মাত্র ২ শতাংশ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে নিচে (উভয় দেশের হার ৩ শতাংশ)। অর্থাৎ, সরকারি এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় আমাদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই শূন্যস্থান পূরণ করে সর্বজনীন স্বাস্হ্যব্যবস্হার পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। বিষয়টিকে আরো ভালোভাবে দেখা যাক।

সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমার বিষয়টি নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যবীমা হচ্ছে একজন ব্যক্তির চিকিৎসা খরচের সম্পূর্ণ বা কিয়দংশ বহন করাকে বোঝায়। বাংলাদেশে এটি একেবারেই উদীয়মান পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে প্রায় ১৭ কোটি জনগণের দেশে স্বাস্থ্যবীমা পায়, এমন সংখ্যা কয়েক হাজার মাত্র। বাংলাদেশে শুধু নন-লাইফ ইনসিওরেন্স-সম্পন্ন ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যবিমার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়, আর বিপুল জনগোষ্ঠী এ ব্যাপারে অবহিত নয় এবং এর আওতার বাইরে। যেসব দেশ এই ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে তাদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মডেল। এই ধারার এক পিঠে রয়েছে তারা, যেসব দেশের জাতীয় সরকার ও কেন্দ্রীয়ভাবে জনগণের চিকিৎসাব্যয়ের এই বিশাল ভার বহন করে থাকে, উদাহরণস্বরূপ : যুক্তরাজ্য, অথবা কিউবার সামাজিক স্বাস্থ্যবীমা-ব্যবস্থা।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যেও কোনো কোনো দেশ তাদের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ ভালো ব্যয়ভার বহন করে। ২০০২ সালে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালু করার পর থাইল্যান্ড তার দেশের পাবলিক হাসপাতালগুলোর নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে সরকারের তিনটি স্কিমের মাধ্যমে সব থাই নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করে; বেসামরিক কর্মচারী ও তাদের পরিবারের জন্য সিভিল সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ব্যবস্থা, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য সোশ্যাল সিকিউরিটি, সব থাই নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা। কিউবান সিস্টেমে সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিচালিত হয় সরকার দ্বারা। বেশ কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত এই সিস্টেম; ফ্যামিলি ডক্টর অ্যান্ড নার্স টিম, বেসিক ওয়ার্ক টিম, কমিউনিটি পলিক্লিনিক, হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পেছনে থাকতে পারে ভূমিহীন মানুষ, গৃহহীন মানুষ, চর, হাওর, পার্বত্য ও দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, দুস্থ নারী, বয়স্ক মানুষ এবং অবিবাহিত মা, কিশোরী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, উপকূলীয় অঞ্চল এবং জলবায়ুতে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন, ক্ষদ্র কৃষক, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এবং জেলেরা আরও যারা পেছনে থাকতে পারেন তারা হলেন এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত, সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত, মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত, মাদকাসক্ত যুবক, সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে আহত ব্যক্তি, স্কুল থেকে ঝরেপড়া শিশু, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি। সহিংসতার শিকার মহিলা ও শিক্ষার্থী, গৃহকর্মী এবং হিজড়াদের ঝুঁকির মধ্যে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্রান্তিক মানুষ, চা বাগানের শ্রমিক, মালি, ড্রামবাদক, ধোপা, বাজনদার, দাই, হাজং, রবিদাস, চামড়া শ্রমিক, মুচি, নাপিত, সাপুড়ে ইত্যাদি পেশার মানুষ এসডিজিতে পেছনে থাকতে পারে। করোনার কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহন কর্মী, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে কর্মরত, অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত মানুষ, সরকারি ক্ষেত্র ছাড়া প্রায় সকল পেশার মানুষ এই তালিকাটি দীর্ঘায়িত করেছে। তাই সবার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্রান্তিক মানুষ, চা বাগানের শ্রমিক, মালি, সুইপার, ড্রামবাদক, ধোপা, বাজনদার, দাই, হাজং, রবিদাস, চামড়া শ্রমিক, মুচি, নাপিত, সাপুড়ে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষেকে স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দিতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *