Togel Online

Situs Bandar

Situs Togel Terpercaya

Togel Online Hadiah 4D 10 Juta

Bandar Togel

দক্ষ মানবসম্পদ ও স্মার্ট বাংলাদেশ


হীরেন পণ্ডিত: বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা সামনে আসছে। এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দক্ষ কর্মজ্ঞান সম্পন্ন লোকবল সৃষ্টি করছে সরকার।
দেশের মানুষকে কারিগরি ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে হবে। যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে চলতে পারে। দক্ষ জনশক্তি আমাদের দেশের উন্নয়ন খাতে অবদান রাখতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। আমরা বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি যাতে পাঠাতে পারি সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ কর্মরত আছেন। যাদের ৮৮ শতাংশই কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া অর্থাৎ প্রায় ৭৬ লাখ প্রবাসীর কাজের প্রশিক্ষণ নেই। আর বাকি ১২ শতাংশ প্রবাসী কারিগরি শিক্ষা, ভাষা, কম্পিউটার ও ড্রাইভিং-এ চারটির কোন একটির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রবাসীদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুবই কম।

প্রযুক্তির নানা বিকাশ, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির রাজত্ব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কাঠামোয় এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এখন বিশ্বব্যাপী কারিগরি জ্ঞানের কদর খুব সহজেই চোখে পড়ে। জনশক্তি খাত থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে বর্তমানে তা আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে প্রয়োজন শিক্ষা। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে উচ্চশিক্ষাকে নতুন করে সাজানোর কথা বলা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনপূর্বক যথাযথভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো প্রয়োজন এবং তা শুরু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রমাগত বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম চারটি রফতানি, আমদানি, বিনিয়োগ ও সাময়িক অভিবাসন। বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ রফতানির চেয়ে অনেক বেশি। তাই দেশে বিনিয়োগ (বিদেশি) বৃদ্ধি ও জনশক্তি রফতানি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রধান উপায়। বিদেশি বিনিয়োগ দেশে বাড়বে তখনই, যখন দেশে থাকবে পর্যাপ্ত উপকরণ, যেমন খনি বা জমি, পুঁজি কিংবা জনশক্তি। অদক্ষ জনশক্তি বিদেশি বিনিয়োগ ততটা উৎসাহিত করে না। এক্ষেত্রে শুধু শ্রমনির্ভর খাতে বিনিয়োগ হবে। বাংলাদেশ কেবল একটি পণ্যই রফতানি করছে। অথচ যেসব দেশে শ্রমিকের দক্ষতা বেশি, সেসব দেশে বাড়ে বিদেশি বিনিয়োগ। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিদেশে শ্রমিক প্রয়োজন। তবে ক্রমাগত দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে দক্ষ শ্রমিক প্রাায় ১০ গুণ বেশি আয় করেন। আর শ্রমিকের দক্ষতা নির্ভর করে শিক্ষার মানের ওপর। তাই শিক্ষার মান পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। গতানুগতিক চিন্তার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।

বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নিরলস কাজ করছেন।

আমরা জানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ফিউশন অব ফিজিক্যাল, ডিজিটাল এবং বায়োলজিকাল স্ফেয়ার। এখানে ফিজিক্যাল হচ্ছে হিউমেন, বায়োলজিকাল হচ্ছে প্রকৃতি এবং ডিজিটাল হচ্ছে টেকনোলজি। এই তিনটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে? সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে? এর ফলে ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন হচ্ছে, হিউমেন মেশিন ইন্টারফেস হচ্ছে এবং রিয়েলটি এবং ভার্চুয়ালিটি এক হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্স, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স, কনটেস্ট ইন্টেলিজেন্সর মতো বিষয়গুলো মাথায় প্রবেশ করাতে হবে।

তাহলে ভবিষ্যতে আমরা সবাইকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে পারব। তবে ভবিষ্যতে কী কী কাজ তৈরি হবে সেটা অজানা। এই অজানা ভবিষ্যতের জন্য প্রজন্মকে তৈরি করতে আমরা আমাদের কয়েকটা বিষয়ে কাজ পারি। সভ্যতা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপাদান হলো তথ্য। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিল।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। জৈবিক, পার্থিব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যেকার পার্থক্যের দেয়ালে চির ধরিয়েছে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি মিলেই এ বিপ্লব। এ বিপ্লবের ব্যাপকতা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতা ও এ সংশ্লিষ্ট জটিল ব্যবস্থা বিশ্বের সরকারগুলোর সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীনও করেছে।

বিশেষত যখন সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম।

দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের ৫টি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেগুলো হলো ডিজিটাল সেন্টার, সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড, অ্যাম্পেথি ট্রেনিং, টিসিভি (টাইম, কস্ট ও ভিজিট) ও এসডিজি ট্রেকার। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

ডাটা প্রটেকশন আইনটি পাস হলে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিদেশি কর্তৃপক্ষগুলো এ দেশে অফিস করতে এবং দেশের তথ্য দেশের ডাটা সেন্টারে রাখতে বাধ্য হবে। মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে কাজ চলছে। মানুষের তথ্য প্রসারের তীব্র বাসনাকে গতিময়তা দেয় টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, বেতার, টেলিভিশন এসবের আবিষ্কার। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কম্পিউটার ও পরবর্তীতে তারবিহীন নানা প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণ ও বিস্তারে বিপ্লবের সূচনা করে। আজকের এই ডটকমের যুগে আক্ষরিক অর্থেই সারা বিশ্ব একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এ পরিণত হয়েছে।

রিস্কিলিং, আপস্কিলিং ও ডিস্কিলিং পদ্ধতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিদ্যমান শিখন কার্যক্রমের সঙ্গে ডিজিটালনির্ভর অন্যান্য ব্যবস্থা, যেমন ই-লার্নিং ও অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানিতে এখনো যেমন অদক্ষ ক্যাটাগরিতে রয়েছে, তেমনি দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। এজন্য জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কারিগরি শিক্ষার মডেল আমাদের অনুসরণ করতে হবে। জার্মানিতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশে এ শিক্ষার হার অন্তত ৬০ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার স্কুলের পাঠ্যসূচিতে কোডিং শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় স্কুলে কম্পিউটার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গ্রামীণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো আমাদের শিশু ও তরুণদের তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের উপযোগীই করতে পারেনি। শিক্ষার অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের হার বেড়েছে কিন্তু মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

এ রকম একটি ভঙ্গুর সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে একচ্ছত্র প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিনিয়োগ টেকসই হওয়া কঠিন। এতে সামাজিক অসমতা আরো বাড়বে। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য সব খাতে সর্বজনীন প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিনিয়োগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে আরো ধাবিত করছে। করোনাকালীন প্রযুক্তিগত সংস্কার মাত্র এক বছরের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে মালয়েশিয়া।

প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন প্রাথমিক দক্ষতা সবার মধ্যে থাকা এখন ভীষণ জরুরি। কেবল পরিকল্পনা করলেই তো হবে না, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মানবসম্পদকেও যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে এ পরিবর্তনের জন্য। তবে আশার কথা, সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্ট্র্যাটেজি’ নিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু গোড়ার সমস্যার সমাধান না করে এসব পরিকল্পনায় তেমন সুফল মিলবে না।

বাংলাদেশে উদ্ভাবনী জ্ঞান, উচ্চদক্ষতা, গভীর চিন্তাভাবনা ও সমস্যা সমাধান করার মতো দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয়নি। তাই সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোয় প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশ থেকে বাধ্য হয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষতাসম্পন্ন পরামর্শক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ খরচ বাবদ ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা যে কার্যকরী নয়, তা সাম্প্রতিক সময়ের এই পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ থেকেই বোঝা যায়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও সফলতা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে শিল্প ও সেবাচালিত অর্থনীতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যদিকে সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে প্রযুক্তি খাতে।

আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হতে পারে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আজকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক এবং সার্বিক জীবনমানের উত্তরণ ঘটানো যায়। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ অত্যন্ত নগণ্য এবং আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ মাত্র ১৫%।

জাপান সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেছে তার জনসংখ্যাকে সুদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর করার মাধ্যমে। জাপানের এই উদাহরণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়।

শিল্প-কারখানায় কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা লাগবে সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষাক্রমের তেমন সমন্বয় নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনও তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত।

আশার কথা, শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে তিনটি বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো- অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়েনর জন্য প্রয়োজন ব্যাপকহারে সরকারী বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ। তাই সবাই মিলে আমাদের এখন থেকেই একটি সুপরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব, গড়তে পারব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

তাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও হাইটেক পার্কসহ সবাইকে এক হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি মনেপ্রাণে অনুধাবনপূর্বক কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ খাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখে পড়তে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। দক্ষভাবেই চলছে কাজগুলো। এভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

slot qris

slot bet 100 rupiah

slot spaceman

mahjong ways

spaceman slot

situs togel

aplikasi togel

togel online sydney