হীরেন পণ্ডিত: নির্মলেন্দু গুণ স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক; সাধারণ মানুষের জীবনের সপক্ষে তাঁর কণ্ঠ নিরন্তর উচ্চকিত। বিচিত্র বিষয়ে পূর্ণ তাঁর কবিতাভুবন। বিষয়বৈচিত্র্য, স্বতঃস্ফূর্ততা, আবেগের সাথে মানবিকতার যোগ তাঁর কবিতার লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য। এ কারণে সম্ভবত তাঁর কবিতা বহুল পঠিত, জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। তাঁর কবিতা শিল্পময়তার অনন্য সম্ভার, যা তাঁকে বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে অভিষিক্ত করেছে এবং তার স্বীকৃতি রাষ্ট্র ও সমাজ দিয়েছে অনেক আগেই।
নির্মুলেন্দু গুণ বাংলা কবিতায় বহুল আলোচিত, নন্দিত কবি। কবিতায় তিনি বহুবর্ণে শোভিত ও প্রসারিত। ষাটের দশকের ঘটনাবহুল এক অস্থির সময়ের জাতক তিনি। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতা সে সময়ে এক অসহ্য, বিরূপ পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতির বলয়কে অবরুদ্ধ করে রাখার অপপ্রয়াস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
স্বাধীনতার আগে থেকেই কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা পেশ করার ফলে শেখ মুজিব যখন কারাগারে বন্দি, পাক সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তখন মাত্র ২২ বছর বয়সেই কবি ‘প্রচ্ছদের জন্য’ কবিতাটি লেখেন। ১৯৬৭ সালের ১২ নভেম্বর দৈনিক সংবাদে কবিতাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ সালে নির্মলেন্দু গুণ ‘হুলিয়া’ কবিতায় লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর কথা।
সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘লোক’ কবি নির্মলেন্দু গুণকে ‘পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিশেষ সাহিত্যে অবদানের জন্য সম্প্র্রতি এক অনুষ্ঠানে কবিকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিশেষ সাহিত্যে অবদানের জন্য কবিকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। এ সময় তরুণ কবিদের বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা সংকলন ‘তারুণ্যের স্পর্ধিত উচ্চারণ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় বঙ্গবন্ধুকে সম্পৃক্ত করে তাঁকে যে পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু খেতাব দেওয়া হলো, এটা তাঁর প্রাপ্য। কবিতা লেখার সেই কৈশোরকাল থেকেই তিনি ধারণ করেন। পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর কবি হিসেবে আখ্যা পেলেও আওয়ামী লীগ থেকে কোনো উপাধি না পাওয়ায় আক্ষেপ জানিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
তিনি জানান একটি সাহিত্য পত্রিকা তাঁকে ‘পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু’ খেতাব দিয়েছে। এতে তিনি অত্যন্ত গৌরবান্বিত বোধ করেছেন। তবে তাঁ তনে হয়েছে এই খেতাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া উচিত ছিল সেই কাজটি একটি পত্রিকা দায়িত্ব পালন করেছে।
কবি নির্মলেন্দু গুণের স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে- কখন আসবে কবি? এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না, এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না। অথচ তখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেছে যখন গম্ভীর মুখে কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তা’হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি? তা’হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে-বৃক্ষে, ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি? জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ, বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান, মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ। হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি শিশুপার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি একদিন সব জানতে পারবে-আমি তোমাদের কথা ভেবে লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প। সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর, না পার্ক না ফুলের বাগান-এসবের কিছুই ছিল না, শুধু একখÐ অখÐ আকাশ যে-রকম, সে-রকম দিগন্ত প্লাবিত ধু-ধু মাঠ ছিল দুর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়। আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক, হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, করুণ কেরানি, নারী বৃদ্ধ বেশ্যা ভবঘুরে আর তোমাদের মতো শিশু পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে। একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের। ‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা- কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি: “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সারা দেশে সৃষ্টি করা হয়েছিল ভীতিকর পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল ঘাতকচক্র ও তৎকালীন সামরিক সরকার। ফলে সেই পৈশাচিক হত্যাকাÐে হতবিহ্বল মানুষ শোক প্রকাশ করতেও ভয় পেত, প্রতিবাদ করতেও ভয় পেত।
পঁচাত্তরের পর হাতে গোনা কয়েকজন কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেছিলেন তাঁদের সৃষ্টিকর্মে। প্রকাশ করেছিলেন তাকে নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের নানা রচনাকর্ম। সাহসিকতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশ করেছিলেন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সংকলনও। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট-পরবর্তী দুঃসময়েও শিল্প-সাহিত্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা উচ্চারিত হয়েছে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে। শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় প্রতিবাদ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অন্ধকার সময়ে ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমির একুশের কবিতা পাঠের আসরে প্রথম সাহস দেখান কবি নির্মলেন্দু গুণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম আবৃত্তি করেন স্বরচিত কবিতা ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’। কবিতায় তিনি লিখেছিলেন- ‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,/রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেই সব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল/আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।/আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।’ কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতাটি বাংলা একাডেমিতে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। অন্ধকারে এক বিন্দু আলোকরশ্মি দেখা গিয়েছিল। উৎফুল্ল দর্শক-শ্রোতা হয়ে সেই কবিতা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। শুধু সর্বাধিক কবিতা লেখার খেতাবটি নয়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম কবিতা রচনার গৌরবটিও নির্মলেন্দু গুণ অর্জন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি লিখেছেন পূর্ণাঙ্গ একটি কাব্যগ্রন্থ।
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার কবি জীবনের জন্ম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখার জন্যই। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচি যখন পড়ে দেখলাম এটি দেশের মুক্তির জন্য আশীর্বাদ, তখন থেকেই আমার কবিতা লেখার শুরুর।’
১৯৭৮ সালে কবির জন্মদিনে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম সাজেদা চৌধুরী কবিকে জীবনানন্দের কাব্যসমগ্র উপহার দিয়েছিলেন। ওই বইটিতে তিনি কবিকে ‘বঙ্গবন্ধুর কবি’ বলেছিলেন। তার কথা মনে পড়ছে। বঙ্গবন্ধুকে ‘পোয়েট অব পলিটিকস’ বলেছিল সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকা (৫ মে ১৯৭১ সংখ্যা)। ‘পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু’ বঙ্গবন্ধুর জীবনের সেই ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করেছে।”
৭ মার্চ ভাষণের অনুপ্রেরণা থেকেই নির্মলেন্দু গুণ রচনা করেছেন তাঁর অন্যতম সমাদৃত কবিতা ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হল’। কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে ‘কবি’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি’।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কোথাও লেখা ছিল না। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। মনে হচ্ছিল, বঙ্গবন্ধুর ভেতর থেকে কেউ একজন শব্দের পর শব্দ সাঁজিয়ে তাঁর কণ্ঠে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর এ কারণেই কবিতায় আমি বঙ্গবন্ধুকে ‘কবি’ সম্বোধন করেছেন। লিখেটো পড়ে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে জানতে পারে, ওই ভাষণটি উপলব্ধি করতে পারে।’ নেত্রকোণার বাড়িতে বসে বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণকে কবিতাটি প্রথম শুনিয়েছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। ‘বাবা বলেছিল, কবিতাটি শুনে তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে পারছেন। তখনই আমি বুঝতে পারলাম যে কবিতাটি স্বার্থক, আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।’ ১৯৮০ সালে কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানী পত্রিকায় । পরে, ১৯৮১ সালে চাষাভূষার কাব্য -এ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।
আওয়ামী লীগ ‘পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু’ খেতাব না দেওয়ায় আক্ষেপ কবি নির্মলেন্দু গুণের। পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর কবি হিসেবে আখ্যা পেলেও আওয়ামী লীগ থেকে উপাধি না পাওয়ায় আক্ষেপ জানিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তার স্বপ্ন ছিল স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। এটিই ছিল বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে “শিল্প-সাহিত্য ও বঙ্গবন্ধু” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব বলেন প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রথম কবিতা লিখেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে শেখ মুজিব ও তাঁর কবিতার অজানা সব ঘটনা ও পটভূমি। মানুষের মৃত্যু এবং মৃত্যুতে জীবিতরা শোকার্ত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর যাঁরা সমস্ত শোকের উৎস, তাঁরা কখনো জননন্দিত দেশনায়ক, কখনো খ্যাতনামা কবি-লেখক-শিল্পী, দার্শনিক; কখনো অরাজনৈতিক মানবতাবাদী, কখনো বা নিতান্তই অখ্যাত কোনো প্রিয়জন। রাজনীতির মাঠে সরব না হয়েও নীরবে অন্তরালে রাজনীতিকে যাপিত জীবনের অংশ করে কবি নির্মলেন্দু গুণ বুঝেছিলেন ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু’ কোনো বিপরীত বিষয় নয়, বরং একে অপরের পরিপূরক, দুটি সমার্থক শব্দ।
কবি নির্মলেন্দু গুণ মা, মাটি, মাতৃভূমিকে ভালোবাসেন নিজের চেয়েও বেশি। তিনি দেশপ্রেমের যে-দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে আত্মিকভাবে জড়িত ছিলেন তিনি; এরপর বাদ পড়েনি স্বাধীনতার পূর্বের ও পরের কোনো বিপর্যয়, যতবার এ রাষ্ট্র বিপথগামী হয়েছে-কলম ধরেছেন তিনি, লিখেছেন একের পর এক শ্রেণীসংগ্রাম এবং স্বৈরাচার-বিরোধী কবিতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে যে-ক’জন কবি ও লেখক সোচ্চার থেকেছেন, তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।
কবি নির্মলেন্দু গুণ স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক; কখনো বিপ্লবী, কখনো প্রেমিক। সাধারণ মানুষের জীবনের সপক্ষে তাঁর কণ্ঠ নিরন্তর উচ্চকিত। নানা ব্যঞ্জনে বিস্তৃৃত, বহুত্ববাদ, সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বরূপে চিত্রিত, বিচিত্র বিষয়ে পূর্ণ তাঁর কবিতাভুবন। বিষয়বৈচিত্র্য, স্বতঃস্ফূর্ততা, আবেগের সাথে মানবিকতার যোগ তাঁর কবিতার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। এ কারণে সম্ভবত তাঁর কবিতা বহুল পঠিত, জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। তাঁর কবিতা শিল্পময়তার অনন্য সম্ভার, যা তাঁকে বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে অভিষিক্ত করেছে এবং তার স্বীকৃতি রাষ্ট্র ও সমাজ দিয়েছে অনেক আগেই।