জনশুমারিতে দারিদ্র্যের অবস্থান


হীরেন পণ্ডিত

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যানুযায়ী দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ আছে ১২ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ঢাকা বিভাগে ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন। সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বরিশাল বিভাগে ৯১ লাখ ১০২ জন। সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জন)। সর্বনিম্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা রংপুর সিটি করপোরেশন (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩ হাজার ৪৪৪ জন)। দেশে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৮ জন। লিঙ্গানুপাতে সর্বোচ্চ ঢাকায় ১০ হাজার ৩৪০ এবং সর্বনিম্ন চট্টগ্রামে (৯৩ দশমিক ৩৮) জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধির হার কমেছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী এ হার ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০২২ সালের শুমারিতে যা রেকর্ড হারে কমে ১ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল ঢাকা বিভাগে (১ দশমিক ৭৪ শতাংশ) এবং বরিশালে সর্বনিম্ন (শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ)। তবে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব। ২০১১ সালে যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসবাস ছিল ৯৭৬ জন, ২০২২ সালে সেটি বেড়ে উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ১১৯ জনে। সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব ঢাকা বিভাগে (২ হাজার ১৫৬ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে) এবং সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে (৬৮৮ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে)।

জরিপের ফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ হারের সর্বোচ্চ ঢাকায় (৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ বিভাগে (৬৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ)। ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে মোট ৫৫ দশমিক ৮৯ এবং ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষের নিজ ব্যবহারের সেলফোন রয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে উল্লেখিত বয়সসীমায় যথাক্রমে ৩০ দশমিক ৬৮ এবং ৩৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ গত তিন মাসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। উভয় শ্রেণীর বয়সীদের মধ্যে গত তিন মাসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে—এমন জনসংখ্যা সর্বাধিক ঢাকা এবং সর্বনিম্ন রংপুর বিভাগে।

প্রকাশিত প্রাথমিক প্রতিবেদন মোতাবেক দেশে বস্তি খানা ও ভাসমান খানায় বসবাসরত জনসংখ্যা যথাক্রমে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন ও ২২ হাজার ১৮৫ জন এবং বস্তি খানা ও ভাসমান খানা ব্যতীত অন্যান্য খানায় বসবাসরত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৫ জন। বস্তিতে বসবাসরত জনসংখ্যা এবং ভাসমান লোকের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (যথাক্রমে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯ ও ৯ হাজার ৪৭০ জন)। পক্ষান্তরে ময়মনসিংহ বিভাগে বস্তিতে বসবাসরত জনসংখ্যা এবং ভাসমান লোকের সংখ্যা সর্বনিম্ন (যথাক্রমে ৩৬ হাজার ৪৯১ ও ৬৯৬ জন)। দেশে মোট ভাসমান জনসংখ্যা ২২ হাজার ১১৯ জন, এর মধ্যে পুরুষ ১৬ হাজার ৭৮৪ ও মহিলা ৫ হাজার ৩৩৫ জন। বিভাগভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভাসমান জনসংখ্যা ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (৯ হাজার ৪৩৯ জন) এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বনিম্ন (৬৯২ জন)। দেশের সর্বমোট বাসগৃহের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৫১টি।

অবশ্য এবারের এ জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ যথাযথ হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি পরিকল্পনা এমএ মান্নান স্বীকার করেছিলেন, ‘এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে’। জনসংখ্যা ও গৃহগণনার এবারের প্রক্রিয়াকে ‘ডিজিটাল জনশুমারি’ কেন বলা হচ্ছে। কারণ অন্য বছরের তুলনায় এবার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ কার্যক্রম করা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। সাধারণত প্রতি ১০ বছর পরপর বাংলাদেশে আদমশুমারি হয়ে থাকে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছর আদমশুমারি হতে পারেনি।

এবারের জনশুমারিতে মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহকারীরা আইটি অবকাঠামো ব্যবহার করে এ কাজটি করছেন। শুধু তথ্য সংগ্রহের কাজটিতে মানুষের সংশ্লিষ্টতা আছে। কিন্তু সে তথ্য প্রক্রিয়া করা, যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনার সব কাজ ডিজিটাল অবকাঠামো, সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা হয়েছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে সাড়ে ৩ লাখের বেশি যে তথ্য সংগ্রহকারীরা কাজ করছেন, তাদের ট্যাব দেয়া হয়েছিল। তথ্য সংগ্রহের সময় তারা সে ট্যাবে তথ্য প্রবেশ করিয়েছেন। এরপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেটি মূল সার্ভারে চলে যায়। দাবি করা হয়, এভাবে করার মাধ্যমে একই ব্যক্তি বা বাড়তি দুবার গণনা হওয়ার সুযোগ হবে না বলে জানানো হয়েছে। ওয়েবভিত্তিক ইন্টিগ্রেটেড সেনসাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) প্রস্তুতসহ জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমে (জিআইএস) এ কাজটি করা হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ের এসব তথ্য সংরক্ষণে গাজীপুরে বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানির সার্ভার ব্যবহার করা হয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সার্ভারে এসব তথ্য আসে। এসব তথ্য সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট অবস্থায় থাকায় প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য শতভাগ নিরাপদ থাকবে। জনশুমারির পাশাপাশি গৃহগণনা ও আর্থিক অবস্থাসহ ৩৫ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। জনশুমারিতে উঠে আসা এসব তথ্য পর্যালোচনার পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা, তাদের আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক অবস্থার একটি চিত্র পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে কতগুলো বাড়ি আছে, সেসব বাড়িতে কতজন বসবাস করেন তাও সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ির ধরন, টয়লেটের সুবিধা, বিদ্যুৎ, পানি ও রান্নার জ্বালানির উৎস ইত্যাদি তথ্যও সংগ্রহ করছেন। জনশুমারি ও গৃহগণনার এসব তথ্য গবেষণা, জাতীয় নির্বাচন, দেশের উন্নয়নে পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ ইত্যাদি কাজে সহায়তা করবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে গিয়ে সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে ওই বাড়ির অবস্থা সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

দেশে বিবাহ কমছে, তরুণরা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, বেকারদের কেউ করছেন না, বেশি বয়সে বিয়ের হার বাড়ছে, ডিভোর্সের হার বাড়ছে, তার পরও ৮০ ভাগ মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে, গত ১০ বছরে প্রবাসী হয়েছে অনেক। বাংলাদেশে ২০২২ সালের জনশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দেশে জন্মহার কমেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩০ বছর বাংলাদেশে জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল ২ দশমিক ১৭, যেটি ২০০১ সালে নেমে আসে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশে। এরপর ২০১১ সালে আদমশুমারির প্রতিবেদনে দেখা যায়, জন্মহার আরো কমে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ।

বাংলাদেশের জন্য এটি এখন ভালো খবর হিসেবেই দেখা যেতে পারে। আমরা এখন যে অবস্থায় আছি সেটি আদর্শ অবস্থা। এখানে দেখা যাচ্ছে, জন্মহার এবং মৃত্যুহার দুটিই কমে আসে। একটি দেশ যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হয় এবং নারীর শিক্ষা, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ে, তখন এ ধরনের পরিস্থিতির তৈরি হয়। এর সঙ্গে নগরায়ণের একটি বড় ভূমিকা আছে। তবে এর কিছু ভবিষ্যৎ ঝুঁকিও রয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫-৬৪ বছর পর্যন্ত জনগোষ্ঠী ৬৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ জনগোষ্ঠী বেশি হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল থাকবে বেশি। অর্থাৎ তাদের ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি ইতিবাচক এ অর্থে, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে পারবে। মাত্র ১৮ ডলার দিয়ে যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের কৃষিতে পালাবদলের নেপথ্যের দুই তারকা। যদি জন্মহার বাড়তেই থাকত তাহলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো সম্ভব হতো না। ফলে বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে বেকারত্ব রয়েছে সেটি কমে আসবে যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া অব্যাহত থাকে।

আগামী ১৭-১৮ বছরের মধ্যে সে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করবে। কারণ তখন ৬৫ বছরের বেশি জনগোষ্ঠী আরো বেড়ে যাবে। ২০৩৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকবে। এরপর প্রবীণ জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকবে। ২০২২ সালের জনশুমারিতে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। ২০২২ সালের জনশুমারিতে দেখা যাচ্ছে, ৬৫ বছর থেকে শুরু করে তার ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এটি যদি ৭ শতাংশে পৌঁছে, তখন সেটিকে বয়স্কদের সমাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মহার কমলেও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ২০ কোটি ৪০ লাখ। ২০৫৭-৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল থাকবে। কারণ তখন জন্ম ও মৃত্যুহার সমান হবে। এর পরও মোট জনসংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস প্রকাশিত বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্রে বলা হচ্ছে, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা। বাংলাদেশের ৫৭৭টি উপজেলার দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্যের এ মানচিত্র তৈরি করেছে বিবিএস। কুড়িগ্রামের রাজিবপুর এলাকায় ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি দারিদ্র্যসীমার হার কেন চর রাজিবপুরে? উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের যে নয়টি উপজেলা রয়েছে তার মধ্যে চর রাজিবপুর একটি। এ উপজেলাটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভক্ত। অর্থাৎ ভৌগোলিকভাবে এ উপজেলাটি কুড়িগ্রাম সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলার তিন দিকে নদী। একদিকে রৌমারী উপজেলা। মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বাস রাজধানীর গুলশানে। অভিজাত এলাকাটির মাত্র দশমিক চার শতাংশ মানুষ দরিদ্র। বাংলাদেশে গড় দারিদ্র্য হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক হলিস বি. শনারি ১৯৭৩ সালে বলেছিলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯০০ ডলারে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১২৫ বছর। এর অর্ধেক সময়ও অপেক্ষা করতে হয়নি। স্বাধীনতার ৫২ বছরে ২০২২ সালে এ দেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলার।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৮ ডলার। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর অন্যতম দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ। বিশ্বব্যাংকের শ্রেণীকরণে ২০১৫ সালে নিম্ন-আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর সম্প্রতি জাতিসংঘের কাছ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার সুপারিশ পেয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনন্য সব অর্জন নিয়ে স্বাধীনতার ৫১ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। শতবাধার মুখেও উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সম্মান জানাতে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে বাংলাদেশে আসেন বিশ্বব্যাংকের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির প্রথম হিসাব করা হয়। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮২ শতাংশ। তবে প্রাক্কলন ২০১৮-১৯-এর এক প্রাক্কলনে দেখা যায় ২০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র এবং ১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ এখনো হতদরিদ্র।

মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সামাজিক সূচকে উন্নতি এবং অর্থনীতির টিকে থাকার সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য মনে করছে জাতিসংঘ। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে ভারত, চীন, মালয়েশিয়ার মতো এলডিসি নয়—এমন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে বাংলাদেশ।

হীরেন পণ্ডিত: রিসার্চ ফেলো, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন, (বিএনএনআরসি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *