ঢাকাকে পাশে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র


চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় কয়েক ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীনের সঙ্গে নতুন করে রাজনৈতিক দ্বৈরথ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বাণিজ্যিক লড়াই তো রয়েছেই। অন্যদিকে, রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ইউক্রেনকে সহযোগিতার পাল্লা দিন দিন ভারি করছে জো বাইডেন সরকার। এ অবস্থায় মার্কিন অর্থনীতি নিজেই কিছুটা নাজুক অবস্থায়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপে থাকা যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষিত বন্ধুদের পাশে চায়। আবার বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মধ্যবর্তী নির্বাচনে কিছুটা ধরাশায়ী রিপাবলিকানদের কাছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৌশলগতভাবে ঢাকাকে পাশে রাখতে মরিয়া ওয়াশিংটন। পাশাপাশি মন্দার এই সময়ে বাণিজ্যিক ইস্যুও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষেই জো বাইডেন সরকারের সমর্থন থাকবে বলে মনে করেন প্রবাসী রাজনীতিবিদরা।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা রুশ জাহাজ গ্রহণে বাংলাদেশ অস্বীকৃতি জানায়। দেশের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক যায় আমেরিকা মহাদেশে। ডোনাল্ড লু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক গুমের অভিযোগের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাসে বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছেন। তাই র‌্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে বলে আশা প্রবাসী রাজনীতিবিদদের।
যে বিরোধ গুলো হয়েছে সেই বিরোধ গুলোকে আগামীতে আর বাড়িয়ে নিতে চায় না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনটি জানি গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে।
এই উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেনি। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য এবং অন্যান্য সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। বিশ্ব ফোরামে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারত কখনোই জোরালো অবস্থান গ্রহণ করছে না। আর ভারত এমন একটি বড় শক্তিধর দেশ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা এখন আর রাখেনা। চীন রাশিয়ার সঙ্গে একটি সম্পর্ক রেখেই চলেছে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের ভূমিকা সুস্পষ্টভাবে রাশিয়ার পক্ষে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা টলটলায়মান এবং পাকিস্তান এই উপমহাদেশে এখন প্রভাব বিস্তার করার মতো শক্তি এবং ক্ষমতা রাখেনা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ এবং বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার বলয়ে চলে যায় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই উপমহাদেশে অর্থনৈতিক, সামরিক এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রণগুলো কঠিন এবং দুরহ হয়ে পড়বে, সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *