Togel Online

Situs Bandar

Situs Togel Terpercaya

Togel Online Hadiah 4D 10 Juta

Bandar Togel

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে


হীরেন পণ্ডিত
বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ব্যাপক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয় রেল রাস্তা, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার ও উৎপাদনে যন্ত্রের ব্যবহার এ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য ছিলো। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব শুরু হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন দিয়ে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব যাকে কম্পিউটার বা ডিজিটাল বিপ্লবও বলা যায়। ক্ষুদ্র ও শক্তিশালী সেন্সর, মোবাইল ইন্টারনেট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং চতুর্থ বিপ্লবের মূল শক্তি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুণগত পার্থক্য আছে, এ বিপ্লবে মেশিনকে বুদ্ধিমান করা হয়েছে। অন্য বিপ্লবে যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে মানুষ আর এ বিপ্লবে যন্ত্র নিজেই নিজেকে চালানোর সক্ষমতা অর্জন করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে যন্ত্রকে বুদ্ধিমান করা হচ্ছে। মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে যন্ত্রের ধারণক্ষমতা অনেক বেশি এবং প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা অনেক দ্রæত। ইন্টারনেটের কারণে এর কার্যক্রমের আওতা অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে বসে একটি বুদ্ধিমান কম্পিউটার যে কোন দেশের একটা যন্ত্রকে আদেশ দিতে পারে, একটা ঘরের তাপমাত্রা মেপে আদেশ দিতে পারে তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানোর।
তবে যেসব সেবায় মানবিক ছোঁয়া আছে সেসব সেবা দিতে মানুষের প্রয়োজন ফুরাবে না। অন্যদিকে মেধাভিত্তিক পেশার প্রয়োজন বাড়বে যেমন প্রোগ্রামার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি ইত্যাদিতে দক্ষ লোকের চাহিদা বাড়ছে। আমাদেও দেশে দক্ষ প্রোগ্রামের অনেক অভাব।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে খুব দ্রæতগতিতে। নতুন প্রযুক্তি বয়ে আনছে আরো নতুন প্রযুক্তি। বিভিন্ন প্রযুক্তিকে সংযুক্ত করে পরিবর্তন আনছে অর্থনীতি, সমাজ, ব্যবসা ও ব্যক্তিজীবনে। যন্ত্রগুলো পরস্পর কথা বলবে, জানবে পরিস্থিতি কী, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। মানুষ সরলরেখায় চিন্তা করতে অভ্যস্ত।
আজকাল শরীরে পরিধেয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা শরীরের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করে; যেমন তাপমাত্রা, রক্তচাপ, পালস, রক্তে শর্করা ইত্যাদি। এ উপাত্তগুলো কম্পিউটার ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
গুগল গøাস সীমিত আকারে কম্পিউটারের মনিটরের কাজ করছে। উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদেও রোগীর সঙ্গে কথোপকথন লিপিবদ্ধ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। ডাক্তাররা নিজে সেই কথোপকথন কম্পিউটারে লিখতেন। অগমেডিক্স নামীয় সিলিকন ভ্যালির একটি প্রতিষ্ঠান গুগল গøাসের মাধ্যমে ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর কথোপকথন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটে পাঠিয়ে দেয়; যা এখানে বসে ইংরেজি জানা কোনো যুবক বা যুবতী লিপিবদ্ধ করছেন। এই চশমা ধীরে ধীরে মনিটরের স্থান দখল করে নিচ্ছে।
থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, স্টিল ইত্যাদি তৈরি করা যাচ্ছে। একটা কারখানার কাজ এখন একটা প্রিন্টিং মেশিনে তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প থ্রিডি প্রিন্টারে অনেক জিনিস নিজেরা তৈরি করতে পারবে, এতে পরিবহন ব্যয় কমে যাবে, যা পরিবেশ দূষণ কমাবে।
পোশাকে আজকাল যন্ত্রপাতিতে চিপস ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় ফলে শরীরের স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা পাওয়া যায়। মানুষও পোশাকে ঘষা দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে বা পেতে পারে। কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বাড়ছে আর দাম কমছে। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে সেন্সর বা চিপস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে বার্তা পাঠানো যায় এটা ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি।
উন্নত বিশ্বে আইওটি নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। ইনটারনেটের মাধ্যমে আপনার গাড়ি, বাসার এসি, ফ্রিজ নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে, ঘরে পছন্দসই তাপমাত্রা ঠিক করছে। রোবট ফ্রিজ থেকে নাশতা মাইক্রোওভেনে গরম করে রাখতে পারবে। ফ্রিজ তার ভেতরে সংরক্ষিত খাদ্যসামগ্রী স্ক্যান করে, খাদ্যাভ্যাস বিবেচনা করে, অনলাইনে ই-কমার্সে অর্ডার প্রদান করতে পারবে। এমনকি পশুর শরীরে চিপস স্থাপন করা যাচ্ছে এতে গবাদিপশুর শারীরিক অবস্থা, রোগ, প্রজননকাল ইত্যাদি আগেভাগে জেনে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে।
ডিজিটাইজেশনের কারণে এখন প্রচুর ডাটা তৈরি হচ্ছে, আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কোথায় কতক্ষণ সময় ব্যয় করছেন, তার উপাত্ত আপনার স্মার্ট গাড়ি পাচ্ছে। আপনার ব্যাংক হিসাব, মোবাইল মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড মিলে আপনার খরচের হিসাব দিতে পারছে। আমরা দেখছি তা স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভির কাছে উপাত্ত আছে। এসব উপাত্ত আগে সংরক্ষণ করা যেত না। এখন ক্লাউডে সংরক্ষণ করা সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে। দ্রæত প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার কারণে কম্পিউটার এসব ডাটা সহজে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে।
ড্রাইভারবিহীন গাড়ি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও দক্ষ হবে। এছাড়া এরা ট্রাফিক জ্যাম ও দূষণ কমাবে। কিন্তু ড্রাইভারের প্রয়োনীয়তা কমে যাবে।
কম্পিউটারকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেয়া হচ্ছে। পূর্ববর্তী পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ডাটা বিশ্লেষণ করে এআই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। কম্পিউটারকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যেমন একটি বস্তু দেখতে কেমন। সে বস্তুর অনেক ছবি দেখানো। কম্পিউটার একটা প্যাটার্ন আন্দাজ করে নেয়। ফলে পরবর্তীতে রঙ, সাইজ, ভঙ্গিভেদে কম্পিউটার সেই বস্তুটি চিনতে পারে।
বর্তমানে কোনো লেনদেন হলে তা লেজার বা খতিয়ানে লিপিবদ্ধ থাকে। এ লেজার কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। বøক চেইনে লেজারটি ছড়িয়ে দেয়া হয় সব অংশগ্রহণকারীর মধ্যে। ফলে কেউ জালিয়াতি করতে পারবে না, কারণ সবার কাছে লেজার আছে। একেকটা লেনদেন একটা বøক তৈরি করে। সেটা আগের বøকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে একটা চেইন তৈরি করে। বøক চেইনে শুধু আর্থিক লেনদেন নয়; চুক্তি, জমির দলিলসহ বিনিময়ের রেকর্ড থাকতে পারবে। বøকচেইন প্রবর্তিত হওয়ার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের অনেক কাজ কমে যাবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে।
আমাদের এজন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামার, ডাটা অ্যানালিস্টসহ কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন লোকের চাহিদা বাড়ছে। আশার কথা হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বøকচেইন ও রোবটিকস স্ট্র্যাটেজি দ্রæত প্রণয়নের উদ্যোগ নেন এবং খসড়া প্রণয়নের পর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। যে ১০টি প্রযুক্তি আমাদের চারপাশের প্রায় সব কিছুতেই দ্রæত পরিবর্তন আনবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন। ২০১৯ সালে এটুআই প্রোগ্রাম ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ সমীক্ষায় ছয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতির রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনী, গবেষণা ও উন্নয়ন বিকশিত করা, সরকারি নীতিমালা সহজ করা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা কাজে লাগানো এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা। এই সমীক্ষার আলোকে স্কুল পর্যায়ে উদ্ভাবনে সহযোগিতা, প্রোগ্রামের শেখানোসহ নানা উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্প ১০টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর দক্ষ মানুষ তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু করে। এসব উদ্যোগ আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝুঁকিকে সম্ভাবনায় পরিণত করার জন্য আশাবাদী করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ জনশক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছেন। আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। আর সে কারণেই আমরা কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের জন্যই দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের কারিগরি বিষয়গুলোয় দক্ষ হয়ে যেতে হবে। আর সে জন্যই কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সরকার তাদের সহায়তা করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটি দেশ গঠনের জন্য দক্ষ জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা আমরা সব সময় মনে করি এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনশক্তিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায়, যাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় প্রতিযোগিতা করতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ: কোভিড-১৯ মহামারিতে সবকিছুই সচল রেখেছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার অন্যতম মাধ্যম তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ। গত এক যুগের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে। দেশের তরুণরা এখন কেবল স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে জানে। বাংলাদেশের অদম্য যাত্রায় অচিরেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।
তথ্যপ্রযুক্তি সেবা কৃষি বাতায়ন ও কৃষক বন্ধু কলসেন্টার চালু করা হয়েছে। ‘কৃষক বন্ধু’-৩৩৩১ কলসেন্টার এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ‘কোভিড-১৯’-এ বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ। জাতীয় হেল্প লাইন ৩৩৩-এর মতো একটি ফোনসেবার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, নিত্যপণ্য সরবরাহসহ সরকারি তথ্য ও সেবা প্রদান করছে। গর্ভবতী নারী, মা ও শিশুর নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মা টেলিহেলথ সেন্টার সার্ভিস তৈরি করা হয়েছে, করোনা ট্রেসার বিডি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিতকরণের কাজ করছে। এছাড়া মিসইনফরশেন, ডিসইনফরমেশন ও ম্যালইনফরমেশন রোধে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নিরলস কাজ করছেন। আমরা জানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ফিউশন অব ফিজিক্যাল, ডিজিটাল এবং বায়োলজিকাল স্ফেয়ার। এখানে ফিজিক্যাল হচ্ছে হিউমেন, বায়োলজিকাল হচ্ছে প্রকৃতি এবং ডিজিটাল হচ্ছে টেকনোলজি। এই তিনটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে? সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে? এর ফলে ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন হচ্ছে, হিউমেন মেশিন ইন্টারফেস হচ্ছে এবং রিয়েলটি এবং ভার্চুয়ালিটি এক হয়ে যাচ্ছে। এখন যদি আমরা আমাদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সি, ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্সি, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্সি, কনটেস্ট ইন্টেলিজেন্সির মতো বিষয়গুলো তাদের মাথায় প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আমরা সবাইকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে পারব। তবে ভবিষ্যতে কী কী কাজ তৈরি হবে সেটা অজানা। এই অজানা ভবিষ্যতের জন্য প্রজন্মকে তৈরি করতে আমরা আমাদের কয়েকটা বিষয়ে কাজ পারি। সভ্যতা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপাদান হলো তথ্য। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিল।
বিচারিক কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিচার বিভাগীয় বাতায়ন উচ্চ ও অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগের সব কার্যক্রম নথিভুক্ত করছে। এছাড়া ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৮৭টি নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি সুরক্ষিত ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে।
হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এর কাজ চলছে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে তিন লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিকস, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চ প্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হবে। প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর প্রজন্ম বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্যই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিতকে আরো শক্তিশালী করা।
কাগজ ও কালির আবিষ্কার এবং পরবর্তীতে ছাপাখানার উদ্ভব মানুষের তথ্য বিস্তারের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। জৈবিক, পার্থিব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যেকার পার্থক্যের দেয়ালে চির ধরিয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি মিলেই এ বিপ্লব। এ বিপ্লবের ব্যাপকতা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতা ও এ সংশ্লিষ্ট জটিল ব্যবস্থা বিশ্বের সরকারগুলোর সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীনও করেছে। বিশেষত যখন সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পিছিয়ে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ।
ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথডের মূল্য হ্রাস, ইন্টারনেট ব্যবহারে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির অধিক। সারা দেশে ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সংযোগের মাধ্যমে ৩,৮০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং ১৮,৫০০টি সরকারি অফিস নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে।
দেশের ৫১,০০০ এর বেশি সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটের একটি সমন্বিত রূপ বা ওয়েবপোর্টাল হচ্ছে জাতীয় তথ্য বাতায়ন। এ বাতায়নে প্রতিদিন গড়ে এক লাখেরও বেশি জনগণ তথ্য ও সেবা গ্রহণ করতে পারছে। ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া। আন্তর্জাতিক পরিসরে ফ্রিল্যান্সিং করেও তরুণরা উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা।
শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্ট নিত্যনতুন জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ‘মুক্তপাঠ’ বাংলা ভাষায় সর্ববৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে যা দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হচ্ছে।
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিক সেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ৫টি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেগুলো হলো ডিজিটাল সেন্টার, সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড, অ্যাম্পেথি ট্রেনিং, টিসিভি ও এসডিজি ট্রেকার।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
লেখক: প্রাবন্ধিক, রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

slot qris

slot bet 100 rupiah

slot spaceman

mahjong ways

spaceman slot

slot olympus slot deposit 10 ribu slot bet 100 rupiah scatter pink slot deposit pulsa slot gacor slot princess slot server thailand super gacor slot server thailand slot depo 10k slot777 online slot bet 100 rupiah deposit 25 bonus 25 slot joker123 situs slot gacor slot deposit qris slot joker123 mahjong scatter hitam

sicbo

roulette

pusathoki slot

orbit4d slot

pusatmenang slot

https://www.firstwokchinesefood.com/

orbit4d

https://www.mycolonialcafe.com/

https://www.chicagotattooremovalexpert.com/

fokuswin

slot bet 200

pusatmenang

pusatplay

https://partnersfoods.com/

https://www.tica2023.com/

https://dronesafeespana.com/

https://mrzrestaurants.com/

slot server luar