হীরেন পণ্ডিত: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চারটি ভিত্তির কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। সরকার আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে। সবাই প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি, যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করা সক্ষম হব এবং সেটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে।
আমাদের তরুণ সম্প্রদায় যত বেশি এই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা শিখবে, তারা তত দ্রæত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে তরুণদের প্রশিক্ষিত কওে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ধরনের ৫৭টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপন এবং ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ৯২টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণ করা হচ্ছে। সারা দেশে ছয় হাজার ৬৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ১৩ হাজারের বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সকলেই শেখ হাসিনার প্রতি আস্থার কথা জানান। তাঁরা জানান, শেখ হাসিনাই দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন। সামনের স্মার্ট বাংলাদেশও শেখ হাসিনার সরকার করতে পারবে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ দেবেন। আজ সত্যিই বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নেত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেটি শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে। আর্থ-সামাজিক জরিপ, আবহাওয়ার তথ্য আদান-প্রদানে আর্থ-রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয় তাঁরই নির্দেশে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইটের আর্থ-স্টেশনের উদ্বোধন করেন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদার মতো একজন বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন এবং শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করার লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা ছিল তাঁর অত্যন্ত সুচিন্তিত ও দূরদর্শী উদ্যোগ। শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশে গৃহীত নানা উদ্যোগ ও কার্যক্রমের দিকে তাকালে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি, যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিপ্লবে অংশগ্রহণের পথ দেখায়।
ডিজিটাল বিপ্লবের পেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, কারিগরি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত যাঁর হাত ধরে রচিত হয়েছিল, তা তুলে ধরাও আজ প্রাসঙ্গিক। ডিজিটাল বিপ্লবের শুরু ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসের যুক্ততা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বে উন্নয়ন দারুণ গতি পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। কারণ তিনি গড়তে চেয়েছিলেন সোনার বাংলা। তাঁর এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সময় পান মাত্র সাড়ে তিন বছর। এই সময়ে প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করেননি।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ দার্শনিক প্রত্যয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১২ ডিসেম্বর ২০০৮, যখন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা গড়ার’ দৃঢ় অঙ্গীকারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনী অঙ্গীকারে বলা হয়, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ আজ বিপ্লব সাধন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতায় পরিপূর্ণতা পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার জন্য কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন এই চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে। সততা, সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এনেছেন। যেখানে এ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর যুগোপযোগী পরিকল্পনায় কোটি কল্পনা ও সুপরামর্শে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬০ লাখের ওপরে।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় আট হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে প্রায় ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন, যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে একদিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অন্যদিকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর হচ্ছে। দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে ও স্টার্টআপদের উদ্ভাবনী সুযোগ কাজে লাগানোর পথ সুগম করতে সরকার আগামী পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তাদের সুদ ও জামানতবিহীন ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট এবং ট্রেনিং, ইনকিউবেশন, মেন্টরিং এবং কোচিংসহ নানা সুবিধা দেওয়ার ফলে দশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। বিকাশ, পাঠাও, চালডাল, শিওর ক্যাশ, সহজ, পেপারফ্লাইসহ দুই হাজার ৫০০ স্টার্টআপ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। যারা প্রায় আরো ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ১০ বছর আগেও এই কালচারের সঙ্গে আমাদের তরুণরা পরিচিত ছিল না। মাত্র সাত বছরে এই খাতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।
বিশ্বে অনলাইন শ্রমশক্তিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশে সরকারি কোনো সেবাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সরকারি সব দপ্তরের প্রাথমিক সব তথ্য ও সেবা মিলছে ওয়েবসাইটে। সেই সঙ্গে সরকারি সব তথ্য যাচাই-বাছাই ও সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন পরিষেবা ও আবেদনের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ইন্টার-অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফরম ‘বিনিময়’ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে প্রত্যেক গ্রাহকের হাতের মুঠোয়। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং থেকে আসা অর্থ আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এ সব কিছুই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।
নারী-পরুষের সমান অংশগ্রহণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা, শহর ও গ্রামের সেবা প্রাপ্তিতে দূরত্ব হ্রাস করার সবই ছিল আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ফলে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করা গেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গ্রামে বসেই যে কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে পারছে। এ সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতির ফলে। সে কারণেই এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি’।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর আমরা এখন নতুন কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। সেটি হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ।
চলছে চতুর্থ বিপ্লবের সময়কাল। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের বুদ্ধি ও ইচ্ছা শক্তি, কারখানার উৎপাদন, কৃষিকাজসহ যাবতীয় দৈনন্দিন কাজকর্ম ও বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রস্তুতি চলছে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে তৈরির। কিন্তু স্মার্ট যন্ত্র ও প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদেরও চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ ও সংস্কৃতিতে হতে হবে স্মার্ট। প্রতিনিয়তই আমরা আমাদের অজান্তে অনেক ভুল-ত্রæটি, অনিয়ম, অন্যায় ও অবিচার করে থাকি, যা একটু ইচ্ছা করলেই সংশোধন করা যায়। অবদান রাখতে পারি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে। যেমন-অনেকেই রাস্তার ওপর যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’ এর মূল ভিত্তি হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন। তাঁর ওপর বার বার হামলা এবং ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে দেশের উন্নয়নের একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, “২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো,পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ব-দ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে। সেই ব্যবস্থাও করছি। এখন সব নির্ভর করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশন ও যুব সমাজের উপর। ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতি। এটাই ছিল আমাদের ২০১৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি প্রেরণাদায়ী অঙ্গীকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ তথ্য-প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেন। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশ বিপ্লব সাধন করেছে। যে গতিতে বিশ্বে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে, তা সত্যি অভাবনীয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত¡াবধানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ডিজিটাল অগ্রগতি থেকে একটুও পিছিয়ে নেই। অদম্য গতিতে আমরা চলছি তথ্য-প্রযুক্তির এক মহাসড়ক ধরে। আমাদের সাফল্যগাথা রয়েছে এ খাতে, যা সত্যি গৌরব ও আনন্দের। ডিজিটাল দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন বা স্বপ্নকে দেখতে পেরেছেন বলেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের এক যুগের অভিযাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন, নাগরিক সেবা এবং সরকারি- বেসরকারি খাতের সমৃদ্ধিসহ বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে অবিস্মরণীয় বিপ্লব।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম এ ঘোষণা দেন গত বছর এপ্রিলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর তৃতীয় সভায়। পরবর্তীতে গত বছর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের। অর্থাৎ আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ যার স্তম্ভ হবে চারটি (১) স্মার্ট সিটিজেন, (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট, (৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট সোসাইটি।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলাকে বোঝানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর, সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নে দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি’ গঠন ও এসব কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এটুআইসহ সরকারের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্ত—বায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। এটুআই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় ‘স্মার্ট ভিলেজ’, ‘স্মার্ট সিটি’ এবং ‘স্মার্ট অফিস’ কনসেপ্টের পাইলটিং শুরু করেছে। যথার্থ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে এটুআই পরিচালনা করছে ‘সিভিল সার্ভিস ২০৪১ : ডিজিটাল লিডারশিপ জার্নি’।
একটি সময়োপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘জাতীয় বেøন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতাবিষয়ক মহাপরিকল্পনা’-এর খসড়া প্রণয়নে বেøন্ডেড শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে এটুআই। এটুআইর সহযোগিতায় বিচারিক ব্যবস্থাকে সহজ করতে চালু হয়েছে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) অ্যাপ যা আগামীর স্মার্ট বিচারিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
পাশাপাশি স্মার্ট ইকোনমি গড়ে তুলতে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রবাসী হেল্পডেস্ক চালু, সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ত্বরান্বিতকরণে ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ‘সাথী’ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, দেশের সব পরিষেবা বিল প্রদানের পদ্ধতি সহজীকরণে সমন্বিত পেমেন্ট প্ল্যাটফরম ‘একপে’-তে আটটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন পেমেন্ট চ্যানেল যুক্ত করা হয়েছে।
স্মার্ট গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টারভিত্তিক ওয়ানস্টপ সেবাকেন্দ্র এবং প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পিপিএস ও আরএমএস সফটওয়্যার এবং অনলাইন রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট (আরএমএস) সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
বিশে^র তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগামী দেশগুলোর উত্তম পদক্ষেপগুলো যাচাই করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১’ তৈরি করা হয়েছে যার মূল কথা হচ্ছে, আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি), রোবটিকস, ব্লকচেইন, ন্যানোটেকনোলজি, থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের মতো আধুনিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য, পরিবহন, পরিবেশ, শক্তি ও সম্পদ, অবকাঠামো, অর্থনীতি, বাণিজ্য, গভর্ন্যান্স, আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই চেইন, নিরাপত্তা, এন্টারপ্রেনারশিপ, কমিউনিটিসহ নানা খাত অধিকতর দক্ষতার দ্বারা পরিচালনা করা হবে। এই আইসিটি মাস্টারপ্ল্যানে মোট ৪০টি মেগা প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে যেসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশবান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করার লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তবে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ ¯েøাগানকে আমরা এভাবেই ব্যক্ত করতে পারি : ‘তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাব, স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ গড়ব’। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব বলে আমরা আশাবাদী।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে চলমান ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের মাধ্যম হবে প্রযুক্তি। স্মার্ট বাংলাদেশের সব কাজ হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা হবে, যা হবে ক্যাশলেস। মোটকথা, সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তোলা হবে, যার বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছে সরকার।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মযজ্ঞ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই আওতায় দেশের প্রায় সব খাতে লেগেছে স্মার্টালাইজেশনের ছোঁয়া। এতে আমূল বদলে গেছে এসব খাতের।
শুরুতেই দেশজুড়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলার মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারের উপায় গড়ে তোলে সরকার, যার সুফল পাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষরাও।
প্রযুক্তির মধ্যস্থতায় গ্রামের কৃষকের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে উঠেছে শহুরে নাগরিকদেরও। অনলাইনেই বিক্রি করা যাচ্ছে ফসল। সেটার পেমেন্টও নেওয়া যাচ্ছে অনলাইনেই। মোবাইল ব্যাংকিং ছড়িয়ে পড়েছে আনাচে-কানাচে। শুধু তা-ই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিটি সেক্টর এখন পরিচালিত হচ্ছে স্মার্ট পদ্ধতিতে। যেখানে গৃহিণীরাও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ভূমিকা রাখতে পারছেন জাতীয় অর্থনীতিতে। ঘরে বসেই ঘরোয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচা করছেন নারীরা। ডিজিটাল পদ্ধতিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা উদ্যোক্তা।
ঢাকায় বসেই সামুদ্রিক মাছ কিংবা পাহাড়ি সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও ব্যবসা খাত, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, যেমনÑটেলিমেডিসিন, ভিডিও পরামর্শ এবং অন্যান্য সেবা প্রদানের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যম। যেখানে ব্যবহারকারী সেবাদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন।
স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের প্রথম ধাপেই দেশের পুরো অর্থনীতিকে করা হয়েছিল প্রযুক্তিভিত্তিক। অনলাইন চেকের মাধ্যমে একই চেকে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে যেমন টাকা তোলা যাচ্ছে, তেমনি ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোনে। মোবাইলের অ্যাপে নিজে নিজেই করা যাচ্ছে ব্যাংকিং। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে মোবাইল ব্যাংকিং।
একসময় আমাদের এই পৃথিবীর সব দেশই ছিল কৃষিভিত্তিক। তারপর কৃষিভিত্তিক সমাজ ভেঙে হলো শিল্পভিত্তিক। শিল্পভিত্তিক সমাজ থেকে সেবা ও তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ হলো। সমাজ বিকাশের ধারায় উৎপাদনশীলতা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উৎপাদনশীলতার কারণে সমাজব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে যন্ত্র, তারপর বিদ্যুৎ এবং তারও পর ইন্টারনেট উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে। এরপর উৎপাদনব্যবস্থায় আসছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল একটি অর্থনীতি, যার ভিত্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি।
এর মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে, এটিএম ব্যবহার করে টাকা তোলা যাচ্ছে। পুরো অর্থনীতি যুক্ত হয়েছে এক ধারায়। প্রভাব ফেলছে সামগ্রিক জিডিপির হিসাবে। স্মার্ট অর্থনীতি বা স্মার্ট ব্যাংকিং খাতের প্রমাণ এটাই। যেখানে ধীরে ধীরে দেশের প্রতিটি মানুষ যুক্ত হবেন। গড়ে উঠবে অর্থনীতির একটি জাল। যার অনেকটা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে দেশে। নগদ টাকার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা সহজ হয়েছে। গ্রাহককে লেনদেনের জন্য ব্যাংকে যেতে হচ্ছে না। এতে অর্থপ্রবাহের ব্যয় কমেছে, সময় কম লাগছে। নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ট্রানজেকশন হওয়ায় আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি কমে এসেছে। ফলে স্মার্ট অর্থনীতির অনেক সুবিধাই ইতিমধ্যে পাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।
অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টালাইজেশনের ছোঁয়ায় বদলে গেছে শিল্প খাতও। সামনে আসছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এটিতে জয়ী হতে তিনটি শর্ত পূরণের কথা বলেছেন শিল্প বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে, ১. যে জাতির একটা অভিজাত শ্রেণি আছে, যারা নতুন প্রযুক্তি বোঝেন, ২. যে জাতির মধ্যে নতুন প্রযুক্তির বিরোধিতাকারী কোনো দল নেই এবং ৩. যে জাতির দৃঢ়চেতা একজন নেতা আছেন, যিনি নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে চান। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রায় এ তিনটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অভিজাত শ্রেণি এখন নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ও তার প্রয়োগ নিয়ে ভাবছেন। দ্বিতীয়ত, বিগত ১২ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং প্রান্তিক জনগণও এর সুফল ভোগ করায় বর্তমানে দেশে কোনো প্রযুক্তির বিরোধিতাকারী কোনো দল বা গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। ১৯৯২ সালে যারা বিনা অর্থে আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল তাদের জীবন চলার পথের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দৃঢ়চেতা, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক, যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
আশার কথা হলো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং অভিঘাত মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট অব থিঙ্কস (আইওটি), বøক চেইন ও রোবটিকস স্ট্র্যাটেজি দ্রæত প্রণয়নের উদ্যোগ নেন এবং খসড়া প্রণয়নের পর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনও পেয়েছে। যে ১০টি প্রযুক্তি আমাদের চারপাশের প্রায় সবকিছুতেই দ্রæত পরিবর্তন আনবে তা ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে তুলে ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ওই সভায়ই প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতির জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
২০১৯ সালে এটুআই প্রোগ্রাম ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ সমীক্ষায় ছয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে : ১. সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতির রূপান্তর ২. অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনী ৩. গবেষণা ও উন্নয়ন বিকশিত করা ৪. সরকারি নীতিমালা সহজ করা ৫. প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা কাজে লাগানো এবং ৬. উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা।
এই সমীক্ষার আলোকে স্কুল পর্যায়ে উদ্ভাবনে সহযোগিতা, প্রোগ্রাামিং শেখানোসহ নানা উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্প ১০টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর দক্ষ মানুষ তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু করে। এসব উদ্যোগ আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝুঁকিকে সম্ভাবনায় পরিণত করেছে। ফলে শিল্প খাতে স্মার্ট পদ্ধতির পূর্ণ বাস্তবায়ন শুধু বাকি। কিন্তু এর প্রাথমিক ধাপ আমরা এরই মধ্যে পার করেছি।
দেশের রফতানিতে বস্ত্র ও পোশাক খাত ছাড়াও নতুন নতুন পণ্য যোগ দিয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কৌশলগত উন্নয়ন ও সেবা বাণিজ্যের প্রচারের কারণে দেশের প্রান্তিক এলাকার উৎপাদিত পণ্যও ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন কোণে। তারা দেখছে, যাচাই করছে বাংলাদেশের পণ্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), তথ্য বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিং এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সেবা গ্রহণের পদ্ধতি হয়েছে ভীষণ সবল। করোনা মহামারি বাংলাদেশের গ্রাহকদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে।
ফলে দেশে বসে বিদেশে পণ্য বিক্রি তথা রফতানি যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশে বিদেশি পণ্য এনে ব্যবসাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তির কারণে বাণিজ্য খাতেও লেগেছে বড় ধাক্কা। আর এটি এই খাতকে এগিয়ে যেমন দিয়েছে, তেমনি এটিকে করেছে গতিশীল। এই বাণিজ্য এখন প্রভাব রাখছে জাতীয় পর্যায়েও।
আর্থিক বিশেষজ্ঞরা ক্ষুদ্রঋণে প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জাদুকরী পথ হিসেবে বিবেচনা করছেন। ইউএনসিডিএফ ২০১৭-১৮ সালে তাদের এক সমীক্ষা রিপোর্টে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল সিস্টেমের সূচনা এবং অপারেশনাল কাজে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির ব্যবহারকে বৃহৎ সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বৈশ্বিক অর্থায়ন কার্যক্রমে যে প্রযুক্তিগুলো বাঁকবদল করছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও ডিজিটাল মানি ট্রান্সফারিং সিস্টেম। এ ছাড়া ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও সহজতর করতে বøকচেইন, এসএমএস পদ্ধতি, এমপ্লয়ি ট্র্যাকিং সিস্টেম, ডিজিটাল কাস্টমার সলিউশনসহ নিত্যনতুন প্রযুক্তি যুক্ত করছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঋণ প্রদান থেকে শুরু করে আদায় এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সেবা সক্ষমতা বৃদ্ধিও ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি এখন অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
অন্যদিকে ডিজিটাল মানি ট্রান্সফার সিস্টেম শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। পূর্বে ঋণ প্রদান করতে গ্রাহকের ক্রেডিট হিস্ট্রি জানতে হিউম্যান টাচের প্রয়োজন হতো, যা অতিরিক্ত শ্রম ও ব্যাপক ব্যয়সাপেক্ষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির প্রয়াস প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলত। প্রযুক্তির সাহায্যে এখন গ্রাহকের ডিজিটাল হিস্ট্রি পরীক্ষা করে খুব সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এই খাতের স্মার্টালাইজেশনের ক্ষেত্র বড় ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি। ধীরে ধীরে পুরো খাতেই ছড়িয়ে পড়ছে এই পদ্ধতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একসময় কৃষির অবদান ছিল ৮০ ভাগ। এখন দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৯ ভাগ। তারপরও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তর হয়েছে। মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে খাদ্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আবার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে এখন ব্যাপকভাবে ডিজিটাল মাধ্যম, মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমেও হাজার হাজার তরুণ গড়ে তুলছেন নিজেদের কর্মসংস্থান। দেশের ১০ কোটির মতো মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আর এটি ডিজিটাল অর্থনীতির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দিক। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রæতগতিতে ডিজিটাল হচ্ছে।
বাংলাদেশের আইসিটি রফতানি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অচিরেই এ খাতের রফতানি গার্মেন্টস খাতকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন নবগঠিত সরকারের যাত্রা শুরু হয়, তখন আইসিটি রফতানি ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশসহ ১০০টিরও বেশি দেশে আইসিটি পণ্য রফতানি হচ্ছে।
স্মার্ট দেশ গড়ে তুলতে আইসিটিই হলো প্রথম অগ্রাধিকার। সেখানে তরতর করে উন্নতি ঘটছে বাংলাদেশের। এই অগ্রগতিকে ধওে রেখেই স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণ ঘটবে। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন কতটা দ্রæততর করা যায় এবং ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি উপহার দেওয়ার যে লক্ষ্যে সরকার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এখন শুধু দেখার অপেক্ষা মহাপরিকল্পনার আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুরু ও অগ্রগতি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সহজসাধ্য হবে না।
তবে সরকার চারটি মাইলস্টোন লক্ষ্যমাত্রা ধরে এগোনোর পরিকল্পনা করেছে। প্রথম ২০২১ সালের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা আজ অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দ্বিতীয় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তৃতীয় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালের জন্য। সরকারের প্রতিটি অঙ্গ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্তরিকভাবে ও সততার সঙ্গে কাজ করলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হবে না।
দুই হাজার একুশ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে যথার্থ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এগুলো হচ্ছে- ‘স্মার্ট সিটিজেন’, ‘স্মার্ট ইকোনমি’, ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’ ও ‘স্মার্ট সোসাইটি’।
বিরাজমান তথ্যপ্রযুক্তির আবহে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে আমাদেও দেশের জন্য অত্যন্ত সময়োচিত এবং অনন্য মাইলফলক। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের যে চারটি স্তম্ভের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে ‘স্মার্ট সিটিজেন’ শনাক্তকরণের একটি অনন্য বিষয় নিয়ে মুখ্যত এখানে আলোচনা করা হচ্ছে, আর তা হচ্ছে ব্যক্তি শনাক্তকরণে একটি ‘অনন্য নম্বর’ বরাদ্দ করা। কী এই ‘অনন্য নম্বর’ এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে বাংলাদেশেই অবস্থিত একটি বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা কাজের জন্য ব্যবহৃত তথ্যভান্ডারের জুতসই উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ এর গবেষণা পরিচালনার জন্য মূল ক্ষেত্রভূমি হচ্ছে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলা। বিশ্বখ্যাত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অনেক আবিস্কার, সেবা ও অর্জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতলব উপজেলাভিত্তিক বৃহদাকারের একটি জনসংখ্যাগত অনুদৈর্ঘ্য তথ্যভান্ডার স্থাপন, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ। এই তথ্যভান্ডারে শিশুর জন্ম ও তার বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, পেশা, বিয়ে, সন্তান, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, শারীরিক বা অসুখ-বিসুখ, এলাকা বা দেশত্যাগ ও পুনরাগমন, মৃত্যু অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এখান থেকে মতলব এলাকার যে কোনো ব্যক্তিকে মুহূর্তেই শনাক্ত করে তার সম্পর্কিত সব তথ্য পাওয়া যায়। ব্যক্তি শনাক্তকরণে আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ কোডিং ও ম্যাপিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মতলবের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি অনন্য শনাক্তকরণ নম্বর বরাদ্দ করে থাকে। ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলে বা বর্তমানে এ ধরনের তথ্যভান্ডার পরিচালনার নজির আমাদের দেশের অন্যত্র তো নয়ই, বিশ্বের সিংহভাগ দেশেও চলমান নেই। তবে বাংলাদেশে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ একটি ভোটার তালিকা প্রণয়নে ২০০৮ সালে জাতীয়ভিত্তিক একটি তথ্যভান্ডার প্রস্তুত প্রকল্প হাতে নিয়ে তা ওই বছর ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই সম্পন্ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি অনন্য শনাক্তকরণ নম্বর বরাদ্দপূর্বক প্রত্যেককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়, যা মূলত নির্বাচনকালে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে এ সংক্রান্ত কমবেশি ১১ কোটি মানুষের তথ্যসংবলিত একটি বিশাল ভান্ডার রয়েছে।
এই তথ্যভান্ডারটি অনুদৈর্ঘ্য নয়। কারণ এতে কোনো ব্যক্তিরই জীবনব্যাপী চলমান ঘটনার তথ্যাদি হালনাগাদ করা হয় না। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরকে একটি অনন্য নম্বর হিসেবে সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী কওে তোলা হয়নি। তাই শিশুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, নাগরিকত্ব, শিক্ষা, পেশা, বিয়ে, সন্তান, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়কর ও ভ্যাট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, পারিবারিক, শারীরিক বা অসুখ-বিসুখ, এলাকা বা দেশত্যাগ ও পুনরাগমন ইত্যাদি সম্পর্কিত একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট সব দপ্তর ও তথ্যভান্ডাওে যোগসূত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরকে এখনও এককভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত ১৮ বছরের নিচে কাউকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের আওতায় আনা হয়নি বিধায় দেশের প্রায় ছয় কোটি বাসিন্দাকে শনাক্তকরণের কোনো অনন্য নম্বর নেই। অথচ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অন্যতম স্তম্ভ ‘স্মার্ট সিটিজেন’ হওয়া একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার।
এ ব্যাপারে আশার কথা, এখন থেকে শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যে জন্মনিবন্ধন নম্বরটি বরাদ্দ করা হবে, সেটিই হবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর- এমন বিধান রেখে সম্প্রতি ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২২’-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘স্মার্ট সিটিজেন’ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে শনাক্তকরণে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর’ হবে ‘একক শনাক্তকরণ নম্বর’। এটিই হবে একজন ‘স্মার্ট সিটিজেন’ সৃষ্টির প্রাথমিক ভিত্তি।
স্মার্ট বাংলাদেশ কী এবং কিভাবে অর্জিত হতে পারে
ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত, কেননা উন্নত বিশ্বেও দেশগুলোতো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, তাই দেশের উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে অনেকটাই উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে
ভবিষ্যতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের মতোই আজ থেকে দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশের শতভাগ সফলতা এখনো অর্জিত হতে পারেনি, কিন্তু যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাতেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারি বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের চেয়েও যে কম ক্ষয়ক্ষতি মেনে সুন্দরভাবে সামাল দিতে পেরেছে তার অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল। ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, দেশের সব কিছু উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর কওে তোলা, যাকে এককথায় ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে, বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি, একসময় আমাদের দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক দেশেই কম ছিল, সেই পাসপোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে রূপান্তর করা হলো তখন এর গ্রহণযোগ্যতাও অনেক গুণ বেড়ে গেল। ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে সরকার দেশের সব নাগরিকের জন্য ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) চালু করেছে, যেহেতু এনআইডি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর একটি ডকুমেন্ট, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, দেশের বাইরেও অনেক বেশি।
আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা হলেও আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত সেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি, বিচ্ছিন্নভাবে একেক ব্যাংক একেক রকম প্রযুক্তির ব্যবহার করছে ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকৃত ডিজিটাল ব্যাংকিং থেকে আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত অনেক দূরে, আজ বিশ্বের নামকরা সব ব্যাংক যে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে তার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের ব্যাংকগুলোর পিছিয়ে থাকা ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উন্নত হতে হবে এবং সেই উদ্যোগ সফল করতে হলে স্মার্ট বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা, অনেকেই হয়তো বলার চেষ্টা করবেন যে দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ নামের ¯েøাগানের কী প্রয়োজন, প্রয়োজন অবশ্যই আছে, স্মার্ট বাংলাদেশ তো শুধু একটি ¯েøাগান নয়, আগামী দুই যুগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে সাধারণ মানুষ কী বুঝবে এবং এটি অর্জিতই বা হবে কিভাবে, এই নতুন কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে মাত্র, ফলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, সরকার যখন স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তুলে ধরে কোনো পুস্তিকা বা প্রকাশনা বের করবে, তখনই হয়তো এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে, তবে প্রধানমন্ত্রী যে অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে তিনি স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি, বর্তমান সরকার তাদেও ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ দ্রæত এগিয়ে নিয়ে চলেছে এবং এই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলেই ধারণা করা যায়, তবে সরকারপ্রধান স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে যে চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে দেশের এই চারটি খাতকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট খাত হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, এ কথা সত্যি যে স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থ এই নয় যে স্মার্টফোন হাতে স্মার্টলি ঘুরে বেড়ানো বা সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা খুশি তাই মন্তব্য করা, স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ দেশের যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমতার ভিত্তিতে পেতে পারবে, তখন শহর এবং গ্রামের মানুষের মধ্যে জীবনযাপন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না, ঢাকা শহরের নাগরিক যেমন ঘরে বসেই সব কিছু করতে পারবে, তেমনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও তাই করতে পারবে, যেমন প্রত্যন্ত গ্রামের একজন নাগরিককে তার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কোনো অবস্থায়ই অন্য কারো দারস্থ হতে হবে না, সে তার গ্রামে বসেই আবেদন করবে, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে আবেদনকারীর নতুন পাসপোর্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে তার কাছে পৌঁছে যাবে, এখানে ডাক বিভাগের ডেলিভারিম্যান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমিকা রাখার প্রয়োজন হবে না, তেমনি আয়কর রিটার্ন দাখিলব্যবস্থা এমন হবে যে মানুষ তার এলাকায় বসে নিজেই রিটার্ন জমা দেবে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়িত হয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমেই অ্যাসেসমেন্ট নোটিশ করদাতার কাছে পৌঁছে যাবে, আয়কর কর্মকর্তার তেমন কোনো ভূমিকার প্রয়োজন এখানে হবে না, তাঁরা অবশ্য স্পষ্টই বুঝতে পারবেন যে কারা আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি, বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশেও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেউ চাইলেও কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না, কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা একেবারে শুরুতেই আটকে যায়, কিন্তু সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশে খুব সহজেই এটি সম্ভব হবে, যেমনটা উন্নত বিশ্বে হয়ে থাকে, কেননা এসব দেশ সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়ে গেছে,
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিলেই তো আর স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটবে না, এটি হবে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ, যেখানে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের এবং উপযুক্ত লোকবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেই সঙ্গে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে থাকা চাই সঠিক এবং বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার কোনো কমতি থাকবে না, কিন্তু এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত থাকবেন তাঁদের দক্ষতা, দূরদৃষ্টি এবং মুনশিয়ানার ওপরই নির্ভর করবে ২০৪১ সাল নাগাদ সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, নাকি না সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর, না ম্যানুয়াল পদ্ধতির এক স্মার্ট বাংলদেশ হবে, যেমনটা হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল আজ থেকে ১৫ বছর আগে, দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক দূর এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে যা বোঝায় তা থেকে দেশ এখনো অনেক দূরে, তাই সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিপূর্ণতা দিতে হবে সবার আগে এবং এর ওপর ভিত্তি করেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অনেকে ভাবতে পারেন যে ২০৪১ সাল অনেক দেরি আছে, কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আগামী দুই দশক মোটেও কোনো দীর্ঘ সময় নয়, কেননা এ জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছরব্যাপী এক মহাকর্মপরিকল্পনা, প্রযুক্তিনির্ভর সফল ব্যবস্থা, তা সে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশই হোক, তা নির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্ভুল ডাটাবেইস, ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশের সব বিষয়ের নির্ভুল ডাটাবেইস তৈরি করতেই লেগে যাবে প্রায় ১০ বছর, তা-ও যদি পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়, এ কাজটিই সবচেয়ে কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু এটি করতে হবে নিখুঁতভাবে, সবার আগে, নির্ভুল ডাটাবেইস নিশ্চিত না করায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কী অবস্থায় এসেছে তা অনেকেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, তাই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে না হয় সেই দিকটা খেয়াল রাখতে হবে, নির্ভুল এবং পরিপূর্ণ ডাটাবেইস নির্মাণের পর কমপক্ষে পাঁচ বছর লেগে যাবে প্রয়োজনীয় সব ইন্টিগ্রেটেড এবং কমপ্রিহেনসিভ সফটওয়্যার তৈরি করতে, অনেকেই বলার চেষ্টা করবেন যে ডাটাবেইস তৈরি এবং সফটওয়্যার নির্মাণের কাজ পাশাপাশি চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে, সেটা করা যেতে পারে, কিন্তু তাতে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না, কারণ ডাটাবেইসের ধরনের ওপর ভিত্তি করেই মানসম্পন্ন সফটওয়্যার নির্মাণ করা হয়, এরপর সেই সফটওয়্যারের ভুল সংশোধন, প্রয়োগ এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এর পরিপূর্ণতা দিতে গেলে আরো পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যাবে, এ কারণেই আগামী ২৫ বছরের মতো সময় লেগে যাবে সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তি ব্যবহারে আজ যে পর্যায়ে এসেছে তার কাজটা শুরু করেছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে, তার পরও এসব দেশ যে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছে এমন দাবি করার সময় এখনো আসেনি, সেই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়েই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, এখন প্রয়োজন এর কাজ শুরু করে এই উদ্যোগকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া।
হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক