বাহান্ন বছর পর মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি


হীরেন পণ্ডিত
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গীকার ছিলো দেশবাসীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার পূরণ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর বিতরণ করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ জন্মের ৫২ বছর অতিক্রম করলো। বাংলাদেশ নানা দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অগগ্রতির মধ্যদিয়েই একটি দেশ সমৃদ্ধ হয়। যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি দেয় এবং প্রশংসা করে, তবে তা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং অনুপ্রেরণার। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে এবং এই অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫২ বছর উপলক্ষে সম্প্রতি এই বিল উত্থাপন করা হয়। জানা যায়, মার্কিন কংগ্রেসে বিলটি উত্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জো উইলসন। তিনি কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককাসের কো-চেয়ার। বিলটি উত্থাপনের সময় কংগ্রেসম্যান জো উইলসন- ৫২ বছর আগের পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির লালন, শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।
এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন বাঙালিরা। এরপর ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এ ছাড়া বিলে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্র দেশ থেকে দ্রæতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের গত পাঁচ দশকের যাত্রা ছিল অভাবনীয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫৭ ডলারে, যা এখন প্রতিবেশী অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। যখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উত্থাপন করা হয়েছে, তখন সেটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুখকর এবং আশাব্যঞ্জক। একইসঙ্গে এই প্রশংসা অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করবে। বাংলাদেশ নানা দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আলোচনায় এসেছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ দশকে তা বেড়ে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। শিক্ষার হারও ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আর এসব অর্জনকে অভাবনীয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলটিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য উৎপাদন, দুর্যোগ সহনশীলতা, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতের উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন খাতে নজরকাড়া অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটি সহজ ছিল না। নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দেশের অগ্রগতি অব্যাহত আছে। ফলে যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ ও দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে উদ্যোগী হওয়া। আমলে নেওয়া দরকার, বিলে এটিও উঠে এসেছে, একটি উদারনৈতিক দেশ হিসেবে উগ্রবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়। দেশটির জনগণ বরাবরই স্বৈরাচারী শাসন না মেনে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখতে চেয়েছে। অন্যদিকে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। সর্বোপরি বিলে নানা বিষয় উঠে এসেছে। যেখানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতার মাধ্যমে দেশটি মার্কিন অর্থনীতির বিকাশে ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিলে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে গণহত্যার মুখে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য আমেরিকার জনগণের প্রশংসা কুড়ানোর বিষয়ও উঠে এসেছে। আর এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের মানবিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে এমনটিও সামনে এসেছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেতৃত্বের আসনে থাকা করোনা মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে টিকা সহায়তা দেওয়ায় মার্কিন জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। যে বিষয়গুলো বিলে উঠে এসেছে এবং বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং আরো সুদূর প্রসারী উন্নয়ন নিয়ে ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
অনেক পরিবর্তন ও অনেক উন্নয়ন! অবকাঠামোসহ অনেক বিষয়ে দেশ এগিয়েছে। চোখের সামনে যা দৃশ্যমান তা অস্বীকার করা নিছক বোকামি। আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ও নাগরিক সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে, সহজ করে দিয়েছে এবং এতে সরকার প্রধানের কঠোর নির্দেশনা আছে এটা মানতেই হবে। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সড়ক কাঠামো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে, এসব অঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকাকে কতটা সহজভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন, অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনার স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের মানুষকে উন্নয়নের স্বাদ পাইয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা, বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্থান দিয়ে যথাযথ মর্যাদার আসনে বসানোই ছিলো মূল লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও অন্য দেশগুলোর মতো বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত অবস্থানে নিতে পেরেছেন। তা না হলে ১৭ কোটি মানুষের দেশটাকে এই সংকটকালেও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা বেশ কঠিন হতো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সেটিকে আলাদা করে দেখার কোনো উপায় নেই। কংগ্রেসের বিলেও তারই প্রতিধ্বনি ঘটেছে। বিলটি উত্থাপনের সময় জো উইলসন ৫২ বছর আগে ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি সামনে আনেন। বাংলাদেশের জনগণ আশা করছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, জঙ্গিমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে বিরাজমান সমস্যাকে অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদানে কোনো ধরনের কার্পণ্য করবে না। কারণ বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে তার অন্যতম কাÐারি হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা।
শুধু মার্কিন কংগ্রেসই নয়, ৩০ মার্চ নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থা বøুমবার্গ ‘বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অব ইন পোলস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এই নিবন্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে অন্য দেশের নেতাদের থেকে তার অবস্থান পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়ই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন। নিবন্ধে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার জয়ী হওয়ার ব্যাপারেও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। টানা চতুর্থবারের মতো তিনি বিজয়ী হয়ে আসবেন বলে সংস্থাটি নিবন্ধে আশাবাদ প্রকাশ করেছে। তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘ শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে, তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
বøুমবার্গের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কংগ্রেসে আনীত বিলটিও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সংকট এবং সমস্যার উত্তরণ ঘটানোর ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভিশনারি-মিশনারি অবস্থান সবচেয়ে প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বের যোগ্যতা বারবার প্রমাণ করতে পেরেছেন। আমাদের আরো নেতা দেশের অগ্রযাত্রাতে সামনের দিনগুলোতে সঠিক নেতৃত্ব দিবেন মানুষ তাই আশা করে তিনি ভবিষ্যতেও হাল ধরবেন। বিশ্ব সে ধরনের নেতৃত্বকেই প্রশংসা করে। সুতরাং বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, জনগণও এই ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত স্বস্তিতে থাকতে পারবে, অন্তত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে না। সেই চেষ্টাই প্রধানমন্ত্রী শখ হাসিনা করে যাচ্ছেন।
আমাদের রাজস্ব, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রফতানি। ব্যক্তি মালিকানায় শুরু হলেও সরকারের আগ্রহেই এ দুই খাত যথেষ্ট গতি অর্জন করেছে। যার ফলে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি গতি পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ও মেট্রোরেল ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারি থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। একটানা বেশি সময় দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তার স্বীকৃতি জাতিসংঘের এই এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার ২০২১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন অনেক স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। এর আগে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে অন্যতম সফল এবং অনুকরণীয় তিনজন নারী সরকার প্রধানের একজন নির্বাচিত হয়েছেন আমাদেও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে। শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। গত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করছে। এ জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। সরকারের সময়ে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত জুন মাসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে। গত অক্টোবর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু। গত নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেকগুলো মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এখন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ এর জন্য কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমানো গেছে, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সকল প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি উর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমাদের প্রতিটি ইঞ্চি জমি পতিত না রেখে কাজে লাগাতে হবে। সংকট আসবে। সংকটে ভয় পেলে চলবে না। সবার সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বৈশি^ক মন্দাও বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবিলা করছে।
পরিবহন ও যোগাযোগ খাত উন্নয়নের বড় ধরনের একটি বিপ্লব হয়েছে ২০২২ সালে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চলতি বছরের ২৫ জুন খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে চলেছে রেল চলেছে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা-মাওয়া রুটে । এ ছাড়া প্রযুক্তি-নির্ভর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়েছে গত বছর ২৮ ডিসেম্বর। এ ছাড়া সারাদেশের সড়ক ও মহাসড়ক নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চলতি বছরে একসঙ্গে চালু হয় ১০০টি সেতু ও দুই হাজার কিলোমিটারের ১০০ সড়ক। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অন্যান্য মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)।
আন্তর্জাতিক পরিমÐলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন রীতিমতো বিস্ময়কর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় সংস্থা থেকে তিনি পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি। শান্তির প্রচার, অনুসন্ধান ও সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো থেকে পেয়েছেন ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার। অর্জন করেছেন ‘মেডেল অব ডিস্টিনকশন’ ও ‘হেড অব স্টেট’ পদক। বিশ্ব শান্তির দূত হিসাবে সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে পেয়েছেন ‘মাদার তেরেসা পুরস্কার’। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী ভূমিকার জন্য বিশ্বের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেছেন। খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রæতি তাকে এনে দিয়েছে ‘দ্য সিরিস মেডেল’। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে। অর্জন করেছেন জাতিসংঘের ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’। নারী রাজনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করেছে ‘রিজিওনাল লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘স্টেটম্যান’। বিশ্বনেতৃত্ব শেখ হাসিনা বলে ‘স্টার অব ইস্ট’। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক তাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ দিয়ে ‘মুকুট মণি’ অভিধায় ভূষিত করেছে।
বাংলাদেশে এখনো শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। তিনি জাতির পিতার রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, নেতৃত্বের দক্ষতায়, দল ও দেশ পরিচালনায় আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও সততা, সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এনেছেন। যেখানে ৫৬ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও সুপরামর্শে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬০ লাখে ওপরে। অবাক বিস্ময়ে সারা পৃথিবী তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় আট হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে প্রায় ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন, যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে একদিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অন্যদিকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার সাধারণ মানুষের জীবনমান সহজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, ঘরের কাছেই সব ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলায় সবচেয়ে বড় পাওয়া।
নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা, শহর ও গ্রামের সেবা প্রাপ্তিতে দূরত্ব হ্রাস করা সবই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গ্রামে বসেই যে কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে পারছে। এ সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতির ফলে।
নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা, শহর ও গ্রামের সেবা প্রাপ্তিতে দূরত্ব হ্রাস করা সবই ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গ্রামে বসেই যে কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে পারছে। এ সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতির ফলে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর এখন নতুন কর্মসূচি এসেছে। সেটি হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ।
হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *