পদ্মাসেতু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে


হীরেন পণ্ডিত

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর প্রভাব হবে সুদূর প্রসারী। সামাজিক উন্নয়নেও এর বড় প্রভাব থাকছে প্রতিদিনই। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফ লাইন রূপে কাজ করবে। বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিলো। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে শিল্প এখন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।

গত এক বছরে পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার তিন কোটি মানুষের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে। নিজের টাকায় নিজেদের পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মার বুক চিরে। স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুর পথচলার এক বছর পূর্ণ হলো আজ ২৫ জুন। গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুতে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দিয়ে যান চলাচলের শুভযাত্রা শুরু করেছিলেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর একবছর পূর্ণ হলো। বদলে গেছে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চালচিত্র। খুলনা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ অঞ্চল থেকে বিদেশে রপ্তানিকৃত পণ্য থেকে আয় বেড়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতুর কারণে এ অঞ্চলে যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে চাঙা হয়েছে। সেইসঙ্গে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দর এখন কর্মচাঞ্চল্যে মুখর। এছাড়া পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ১৮টি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। যশোর-খুলনা মোংলা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করাসহ আরো সাতটি প্রকল্পের কাজের প্রস্তুতিও চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু দিয়ে গত এক বছরে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৫৩ লাখেরও বেশি। এসব যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকারও বেশি। শুধু তাই নয়, এক বছরের মধ্যেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বাসিন্দা পদ্মা সেতুর সুফল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। এই সেতুর কল্যাণে বাঁচছে সময়, বাঁচছে কর্মঘণ্টা, বাড়ছে বিনিয়োগ, বাড়ছে কর্মসংস্থান এবং যোগাযোগ খাতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। তাই এই এক বছরে পদ্মা সেতুতে প্রত্যাশার চেয়েও প্রাপ্তি ঘটেছে অনেক বেশি। টোল থেকে প্রথম বছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪২ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সেতু বিভাগ। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ হারে সরকারকে ভ্যাট দেওয়া হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। অবশ্য উদ্বোধনের পর প্রায় ১০ মাস পর গত ২০ এপ্রিল থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের অনুমতি দেওয়া হয়। পদ্মা সেতু দেশের জিডিপিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখার কথা। তবে মাত্র এক বছরে জিডিপিতে অবদানের চিত্র দৃশ্যমান হবে না। সবচেয়ে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাহস নিয়ে দেশের টাকায় এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং এটি বাস্তবে রূপ দিয়েছে-এটি অনেক বড় অর্জন।

এ সেতু শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, উন্নয়নের প্রবেশদ্বারও। শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষি, পর্যটন, শিল্পসহ নানা ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এই সেতুর মাধ্যমে। এ সেতুর ফলে বদলে গেছে দক্ষিণের ২১ জেলার কৃষি ভিত্তিক অর্থনিতির চিত্র। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণাঞ্চলের সবজি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরের পদ্মা পাড়ের সবজির সবজির চাহিদা। শুধু তাই নয়, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে গত কয়েক মাসে ইউরোপের বাজারে প্রচুর সবজি রপ্তানি করার সুযোগ এসেছে। তাই মান সম্মত সবজি উৎপাদনে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হাজার হাজার কৃষককে। ন্যায্য মূল্যে সবজি বিক্রির ফলে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষকরা জানান, আগে ফেরি পার হতে সময় লাগায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সময় মত বাজারজাত করা যেত না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মাটির ধরন অনুযায়ী অনাবাদী জমিতে রপ্তানিমুখী সবজি উৎপাদনে কাজ চলছে। আর রপ্তানিকে আরও সহজ করতে প্যাকেজিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে কাজ হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর কল্যাণে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আগে ওইসব এলাকা থেকে কেউ ঢাকায় কোনো কাজ সারতে আসল কমপক্ষে দুই রাত ও এক দিন অবস্থান করতে হতো। অথচ এখন দিনে এসে কাজ সেরে দিনের মধ্যেই চলে যেতে পারছে। এটি যে কত বড় পাওয়া ওইসব এলাকার মানুষের সেটি বলে বোঝানো যাবে না। তা ছাড়া বাণিজ্য বেড়েছে, বাড়ছে বিনিয়োগ, পর্যটন খাতের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, জমির মূল্য বেড়েছে অনেক, যার সুফল পাচ্ছেন ওইসব এলাকার মানুষ। পদ্মা সেতু অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং কৃষি বিপ্লব ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল, মংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। রাজধানী এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সময় এক-চতুর্থাংশ কমে এসেছে। আগে যেখানে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেতে, সেখানে এখন যেতে সময় লাগছে আড়াই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর কল্যাণে পর্যটন খাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হওয়ায় পদ্মা সেতু আঞ্চলিক সংযোগকে সহজতর করবে। নির্মাণ খাতে ২৯ শতাংশ, কৃষি খাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও পরিবহনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর প্রভাবে এই অঞ্চলে দারিদ্র্য ১ শতাংশ কমেছে এবং জাতীয়ভাবে কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং জাতীয়ভাবে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে। পদ্মা সেতুর জন্য করা নদী শাসনের ফলে ৯ হাজার হেক্টর জমি খরা ও বন্যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাওয়া-জাজিরা রুটে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেরি সার্ভিস খরচ সাশ্রয় হচ্ছে।

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসহ এই এলাকার অন্যান্য পর্যটন এলাকায় পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে গেছে। এখন প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি গাড়িতে করে কুয়াকাটায় যাচ্ছেন পর্যটকরা। ঢাকা থেকে এখন বরিশালে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় চলে আসা যাচ্ছে। এই সুফলটি মিলছে এই পদ্মা সেতুর কল্যাণে। উদ্যোক্তারা এই এলাকায় ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য আসছেন। তারা প্রচুর জমি কিনছেন শিল্প কারখানা গড়ার জন্য। এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা পদ্মা সেতুর কল্যাণে বরিশাল বিভাগের কৃষি, প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। আগে পণ্য আনা-নেওয়া করতে লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে পথেই অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যেত। এখন আর এমনটি হয় না। সুতরাং পদ্মা সেতুর কল্যাণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মনুষের জীবনে আমূল পবির্তন এসেছে। বদলে গেছে ২১ জেলার অর্থনীতি। পদ্মা সেতুর কারণে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে গতি বেড়েছে বেনাপোল স্থলবন্দরে। কম খরচে ও অল্প সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরাও। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবাদে আরও গতিশীল হয়ে উঠছে এই বন্দর। এর আগে ফেরির সিরিয়াল পাওয়া, আবার অন্য রোড দিয়ে ঘুরে যাওয়াতে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়ত। এখন পদ্মা সেতুর কল্যাণে সময় আর খরচ দুটিই কমেছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটছে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে।

পায়রা থেকে কুয়াকাটার বিস্তৃত এলাকা ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার। এই মাস্টার প্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ন, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাভিত্তিক কার্যক্রম। পদ্মা সেতু এসব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করছে। রেললাইন চালু হলে জিডিপিতে আরও ১ শতাংশ যুক্ত হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৬ হাজার ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৫ হাজার ৮১৫ টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৭ হাজার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৫ টাকা। এক বছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯৫৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬০ টাকা। অর্থাৎ রপ্তানি আয় বৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে একটি দেশের সবকিছুর মাপকাঠি। পদ্মা সেতু বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। গত এক বছরে এ অঞ্চলে প্রচুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা খুলনা, মোংলা, ভোমরা ও বেনাপোলকে রপ্তানির রুট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৯২৫ ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে ৬৪ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৫৬ ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর এখন ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করতে পারছে। পদ্মা সেতু শুধু মানুষের যাতায়াত আর পণ্য পরিবহনের সমাধান করেনি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য আমূল বদলে দিয়েছে। মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে সচল করে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছে পদ্মা সেতু। এ কথায় বলা যায় নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। চ্যালেঞ্জের মুখে এই পদ্মা সেতু নির্মাণ একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করছেন। তারা কম খরচের জন্য চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার না করে বর্তমানে মোংলা পোর্ট থেকে তাদের গাড়ি ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। যে কারণে গত বছরের ২৫ জুনের পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা পোর্ট হয়ে বেশি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বেড়েছে। দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প থেকে রপ্তানির মাধ্যমে আয় অধিকাংশ খুলনা থেকে হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই খাত তার হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে, আয়ও বেড়েছে। এর পাশাপাশি কমে গেছে পণ্য পরিবহনের খরচও। পদ্মা সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে দিয়েছে।

এদিকে পদ্মা সেতু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন এই অঞ্চলের হিমায়িত পণ্য রপ্তানিকারকরা। পদ্মা সেতুর কারণে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশের হিমায়িত মৎস্য খাত। এই সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যথাসময়ে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ বিদেশে রপ্তানি করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রপ্তানিকারকরা অনেক বেশি সুফল ভোগ করছেন।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালীর অংশবিশেষ নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ৬৫১৭ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এই বনের এলাকা। দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ায় ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় একসময় সুন্দরবন ভ্রমণে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। পদ্মা সেতু হওয়ার পরে সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। গত এক বছরে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটছে সুন্দরবনে। এতে একদিকে স্থানীয় অধিবাসীরা যেমন সুফল ভোগ করছে, তেমনি সরকার পাচ্ছে রাজস্ব।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলছে। এছাড়া কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এক বছরে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরির্বতনসহ পণ্য পরিবহনের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে এ অঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *