Togel Online

Situs Bandar

Situs Togel Terpercaya

Togel Online Hadiah 4D 10 Juta

Bandar Togel

স্মার্ট বাজেট ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি সময়ের দাবি


হীরেন পণ্ডিত: নতুন অর্থবছরের বাজেটে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতের জন্য। স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা ও প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। যে দেশ যত বেশি শিক্ষা ও প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে, সে দেশ তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। বাজেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ব্যয় করা হলে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে অনেক গবেষণা হবে। এর ফলে অনেক ভালো মানের শিক্ষক, গবেষক এবং বিজ্ঞানী তৈরি হবে, যাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে একটি স্মার্ট ও উন্নত দেশে পরিণত হবে।:
স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বর্তমান বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুতকরণের লক্ষ্যে সরকার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পাস কেরছেন, সেখানে উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন।
বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিতে খাতে বরাদ্দ
উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে শিরোনামে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট সংসদে পাশ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এটি প্রথম বাজেট। প্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। যা পরে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। সংশোধিত চূড়ান্ত বাজেটের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ গত অর্থবছরের চেয়ে ৫২৬ কোটি টাকা বেশি পেয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট জাতিতে পরিণত করতে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আকার দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এবার বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা।
কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পণ্য উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দেশে ল্যাপটপসহ কম্পিউটার পণ্য তৈরিতে ভ্যাট অব্যাহতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মূসক অব্যাহতি প্রদান ও বহাল রাখার ব্যবস্থা করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ, ইনজেক্ট কার্টিজ, কম্পিউটার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, ল্যাটপট, এআইও, ডেস্কটপ, নোটবুক, নোটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার, কিবোর্ড, মাউস, বারকোড-কিউআর কোড স্ক্যানার, র‌্যাম, পিসিবিএ, মাদারবোর্ড, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, মডেম, নেটওয়ার্ক ডিভাইস হাব, স্পিকার, সাউন্ড স্টিটেম, ইয়ারফোন, হেডফোন, এসএসডি, পোর্টেবল এসএসডি, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ, মাইক্রো এসডি কার্ড, ফ্লাশ মেমোরি কার্ড, সিসিটিভি, ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর, প্রজেক্টর, ইউএসবি ক্যাবল, ডেটাক্যাবল, ডিজিটাল ওয়াচ, ইরাইটিং প্যাড, লোডেড পিসিবি ও প্রিন্টেড সার্কিড বোর্ড এ ভ্যাট অব্যাহতি বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
দেশীয় সফটওয়্যার খাতের সুরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা সফটওয়্যার শুল্ক ও মূসক বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে বলা হয়, কিছু সংখ্যক সফটওয়্যার আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও অধিকাংশ সফটওয়্যারের বিপরীতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। তাই দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং মূসক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মার্কেটপ্লেস আলাদা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বর্তমান অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের সংজ্ঞায় শুধু রিটেইল খুচরা কেনাবেচাকে বোঝানো হয়েছে। এই সংজ্ঞায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। এবারের বাজেটে অনলাইনে পণ্য বিক্রির সংজ্ঞায় মার্কেটপ্লেস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে।
কমছে ইন্টারনেটের দাম এবারের বাজেটে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত অপটিক্যাল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অপটিক্যাল ফাইবারের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান এবং এ অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ কারণে ইন্টারনেটের দাম কমবে।
ভ্যাট বেড়েছে দেশে মোবাইল উৎপাদনে। মোবাইল ফোনের উৎপাদক কর্তৃক স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে শূন্য শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ, সংযোজন পর্যায়ে যথাক্রমে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আরোপপূর্বক প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে শর্ত যৌক্তিককরণ এবং নতুন শর্ত সংযোজনের প্রস্তাবও আনা হয়েছে। মোবাইল ফোনের উৎপাদক কর্তৃক স্থানীয় উৎপাদনের খরচ বাড়ার কারণে মোবাইলের দাম বাড়বে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মুঠোফোনে বিল চালান হিসাবে গণ্য করা হবে। বর্তমানে মুঠোফোনে এমএফএস-এর মাধ্যমে, ব্যাংক ও ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যায়। কিন্তু বিল প্রদানের পর এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ইনভয়েস অনেক ক্ষেত্রে চালান হিসাবে গ্রহণ করা হয় না। এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা বিলের ইনভয়েসকে চালান হিসাবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে এবারের বাজেটে।
ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে দেশে সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে প্রসারিত ও ত্বরান্বিত করতে আগামী অর্থবছরের মধ্যে একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কাজ করছে। ডিজিটাল ব্যাংকের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
বাজেটে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এসব সফটওয়্যার টুলস দেশে তৈরি হয় না। অপারেটিং সিস্টেম ও সিকিউরিটি সফটওয়্যার সব পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডেটাবেজ এবং ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যবহার করে সব ধরনের সফওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। তদুপরি, সফটওয়্যারের উৎপাদন ও কাস্টমাইজেশন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হারে শুল্ক এবং কর বৃদ্ধি পেলে সঙ্গত কারণেই দেশীয় সফটওয়্যার উৎপাদনসহ সব পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) এবং ডাটাবেজ সফটওয়্যার আমদানির ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। ওএস যদি আরও বেশি দামে কিনতে হয়, তাহলে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের দাম আরও বাড়বে।
বাজেটে মার্কেট প্লেসের ডেফিনেশন দেওয়া হয়েছে ফলে ডিজিটাল ব্যবসাগুলো ভ্যাটের সুবিধা পাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো সুবিধা পাবে। সবাই একটা ক্লারিটির জায়গা থেকে দাঁড়াতে পারবে। দেশে ক্যাবল উৎপাদনে যে সুবিধা রয়েছে কার্যত তা কোনো কাজে আসবে না। ফলে আমাদের গ্রাহককে সেবাদানে খরচ আরও বাড়বে। ২০২৩-২৪ কে বলা হচ্ছে স্মার্ট বাজেট। আর স্মার্ট বাজেটের চারটি মূল স্তম্ভ হলো, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট কানেক্টিভিটি ও স্মার্ট অর্থনীতি পরিশেষে স্মার্ট জনগণ। এ চারটি খাতে উন্নয়ন করতে হলে একজন নাগরিকের চাই সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য চাই স্মার্ট ডিভাইস। কিন্তু স্মার্ট বাজেট এর কথা বললেও স্মার্ট কানেক্টিভিটির অন্তরায় তৈরি করে বাজেটে হ্যান্ডসেট ডিভাইসের ওপর তিন থেকে পাঁচ শতাংশ কর নতুন করে আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আমদানির ওপর আগের ৫৮ শতাংশের সঙ্গে নতুন করে কর যুক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশের যেখানে এখনো ৪৪ শতাংশ নাগরিক ইন্টারনেট কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হতে পারেনি তাদের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
তবে সরকারের সময় উপযোগী উদ্যোগ ব্যবসা সহজসাধ্য করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। এর পাশাপাশি এ ব্যাখ্যা প্রদান করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহজে ভ্যাট প্রদানকরীকে শনাক্ত করতে পারবে, যা ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়াকে আরও জোরালো করবে।
আমাদের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা হতে পারে সেমিকন্ডাক্টর
শতাব্দীর পর শতাব্দী আমরা অনেক যুদ্ধের কথা শুনেছি। এই শতাব্দীতে এসেও আমরা অনেক যুদ্ধ দেখছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যেমন পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তেমনি চীন-তাইওয়ান যুদ্ধের ইঙ্গিত পৃথিবীকে আবারও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ হলে কার্যত পৃথিবী থেমে যাবে।
কারণ বর্তমান পৃথিবীর ইলেকট্রনিকস সুপারপাওয়ারের নাম হচ্ছে তাইওয়ান। তাইওয়ানের টিএসএমসি কম্পানি সিলিকন চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসার ৬৬ শতাংশ একাই নিয়ন্ত্রণ করে। ৯২ শতাংশ অ্যাডভান্স চিপ এই তাইওয়ানে তৈরি হয়। করোনার সময় এই কম্পানির উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় টেলিকমিউনিকেশন থেকে শুরু করে মেডিক্যাল সেক্টর পর্যন্ত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
টয়োটা, অ্যাপল, ফোর্ট, টেসলার মতো নামিদামি কম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজকের এই অবস্থানে তাইওয়ান কিভাবে গেল, তা বুঝতে হলে আমাদের সিলিকন চিপ নিয়ে একটু প্রাথমিক ধারণা নিতে হবে। বর্তমানে চিপ এখন ভূ-রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেমিকন্ডাক্টর বলতে অর্ধপরিবাহী বা অপরিবাহী পদার্থ, যার প্রধান উপাদান সিলিকন বা বালু। বালুকণায় সিলিকন ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকে। বালুকণা কোয়ার্টস দিয়ে গঠিত, যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে সিলিকন বা বালু। এ ধরনের অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়। সহজ ভাষায়, সিলিকনের মধ্যে ট্রানজিস্টরসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র উপাদান স্থাপন করে যে সার্কিট তৈরি হয়, সেটিকে বলা হয় ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি বা চিপ। এই চিপ তৈরিতে মেশিন, সফটওয়্যার এবং ডিজাইন দেয় যুক্তরাষ্ট্রেও কোম্পানি।
জাপান তৈরি করে প্রয়োজনীয় মেটাল ও কেমিক্যাল। নেদারল্যান্ডস ইউভি লেজার মেশিন তৈরি করে, যা দিয়ে (ওয়েফারস) চিপ বানানো হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান চিপ ডিজাইন করে তাদের বলা হয় ফেবলেস কম্পানি, আর যারা চিপ বানায় তাদের বলা হয় ফাউন্ড্রি। টিএসএমসি শুধু ফাউন্ড্রি করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি। ট্রানজিস্টর পৃথিবীর সেরা আবিষ্কারের মধ্যে একটি। একটি কম্পিউটার মাইক্রোপ্রসেসরে ১৯ বিলিয়নের বেশি ট্রানজিস্টর থাকে। ১৯৫৯ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার সিস্টেমে সিগন্যাল আদান-প্রদানের জন্য টন টন পরিমাণ তারের প্রয়োজন পড়ত। এই সময় দুজন আমেরিকান বিজ্ঞানী পৃথকভাবে ট্রানজিস্টরের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন যন্ত্রের মধ্যে কিভাবে তারবিহীন বিদ্যুৎ আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রিতভাবে করা যায়। ট্রানজিস্টরের ধারণা আবিষ্কারের পর থেকে পৃথিবীর ইলেকট্রনিকস পণ্যের বিশাল পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে ইন্টেল যে ৪০০৪ প্রসেসর এনেছিল, এতে দুই হাজার ২৫০টি ট্রানজিস্টর ছিল। গর্ডেন মুরে বলেছিলেন, প্রতি দুই বছরে প্রসেসরের আকার ছোট হবে আর ট্রানজিস্টর কাউন্ট দ্বিগুণ হবে। বাস্তবে গত এক দশকে এই সেক্টর এতই উন্নতি সাধন করেছে যে মাইক্রো আকার থেকে ন্যানো আকারে রূপান্তর ঘটেছে। এখন তো কত ক্ষুদ্র ও কত বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রানজিস্টর তৈরি করতে কোন দেশ বা কোন কোম্পানি সক্ষম তার একটি প্রতিযোগিতা চলছে। ১০ ন্যানোমিটারের চিপ ছিল পৃথিবীর জন্য একটি বিস্ময়, আর এখন ক্রমান্বয়ে সাত, পাঁচ, তিনভাবে ছোট হচ্ছে। বর্তমানে মানুষ তার নিজের সক্ষমতাকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করছে। তিন ন্যানোমিটারের চিপ তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে টিএসএসনি ও স্যামসাং তাদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছে। দুই ন্যানোমিটার চিপ নিয়েও পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ; যেমন আমেরিকা, জাপান ও চীন। তবে বাণিজ্যিকভাবে দুই ন্যানোমিটারের চিপ আসতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
একজন মানুষের চুলের ব্যাস ৯০ হাজার ন্যানোমিটার, একটি রক্তকণিকা সাত হাজার ন্যানোমিটার, একটি ভাইরাস ১৪ ন্যানোমিটার। একটি প্রমাণ সাইজের ডিএনএ ২.৫ ন্যানোমিটার। আর একটি চিপ দুই ন্যানোমিটারের চেয়েও ছোট। অর্থাৎ একেকটি চিপ কাগজের ১০ হাজার ভাগের এক ভাগ সমান পাতলা। আর এই চিপগুলো যে রুমে প্রস্তুত করা হয়, সেটি একটি অপারেশন থিয়েটারের চেয়ে ১০০ থেকে এক হাজার গুণ বেশি পরিষ্কার রাখা হয়। কারণ একটি নখের সমান চিপ মিলিয়ন ট্রানজিস্টর দিয়ে বানানো হয়। সেখানে একটি ছোট ধূলিকণাও পুরো সার্কিট নষ্ট করে দিতে পারে। চিপ তৈরির প্রক্রিয়াগুলো এতই জটিল ও সূ² যে এটি মাইক্রোস্কোপিক লেভেলে ঘটে। খালি চোখে দেখা যায় না। আমরা যে পাতলা চিপ দেখতে পাই তার ভেতরে সাত-আট লেভেলের ওয়্যারিং করা থাকে।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। আর তা যদি হয় কোনো উন্নত প্রযুক্তির কারখানায়, তাহলে তো আমাদের দেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে যথেষ্ট আগ্রহী। নতুন ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে নতুন ধরনের কারখানা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ভেতরে সরাসরি বিনিয়োগের ২১ শতাংশ আসছে নেদারল্যান্ডস থেকে। আমাদের শিল্পনির্ভর অর্থনীতিতে সরাসরি বিনিয়োগের অধীনে নেদারল্যান্ডসের সরকার বাংলাদেশের ভেতর একটি আন্তর্জাতিক মানের সেমিকন্ডাক্টর অ্যাডভান্স হাইটেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করবে। আর এই ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান এএসএমআর পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারার এবং ফিলিপস নেদারল্যান্ডসের একটি ইলেকট্রনিক কোম্পানি। তারাও এ প্রজেক্টে পার্টনারশিপ রোলে থাকার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর বাংলাদেশে তার পথচলা শুরু করেছে। তারা ভিএলএসআই ডিজাইন সেন্টার অফিস ঢাকায় স্থাপন করেছে। এ ছাড়া তারা যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও চীনে তাদের মার্কেটিং ও সেলস অফিস স্থাপন করেছে। এদিকে সিলিকনভিত্তিক কম্পানি ভেলকাসমী তাদের অপারেশন অফিস ঢাকা থেকে পরিচালনা করছে। তাদের কাছে ৩৫০-এর মতো দক্ষ জনশক্তি আছে। তারা বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি, যারা সেমিকন্ডাক্টরের ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে। নতুন করে ওয়ালটন ও এসিআই এই সেক্টরে বিনিয়োগের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। ওয়ালটন এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে জায়গা নিয়েছে। এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দক্ষ জনবলের প্রয়োজন আছে। দেশভেদে ১৫০ থেকে ৫০০ ডলারের এই জনবল আমাদের দেশে ১০০ ডলারে পাওয়া যেতে পারে, যা আমাদের নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন
কয়েক দশকে দেশের অর্থনীতি যে গতিতে সম্প্রসারণ হয়েছে, ডিজিটাল খাতের প্রসার ঘটেছে তার চেয়ে ধীরগতিতে। অর্থনীতির আকার ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল খাত এখনো সেভাবে প্রভাববিস্তারী ও দ্রæতবর্ধনশীল খাত হিসেবে সুনাম অর্জন করতে পারেনি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক হিসাব বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপিতে ডিজিটাল অর্থনীতির অবদান ৩ শতাংশেরও কম। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে বস্তুগত সম্পদের চেয়ে মেধাসম্পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতের জন্য মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে জিডিপিতে ডিজিটাল খাতের অবদান বাড়বে। তবে এটা ঠিক, সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই ডিজিটাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এর গতি অপেক্ষাকৃত ধীর। ডিজিটাল অর্থনীতির গতি বাড়াতে দক্ষ জনসম্পদ তৈরি ও অবকাঠামো উন্নত করা জরুরি।
মোট দেশজ উৎপাদনে ডিজিটাল খাতের অবদান বাড়াতে প্রথমে প্রয়োজন মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ তৈরি, যারা প্রয়োজনীয় ডিজিটাল টুলস বা প্রযুক্তি বা উপকরণ ব্যবহার কওে বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারে। যে দেশে মেধাবী মানবসম্পদ রয়েছে তারাই অর্থনীতিকে এখন ডিজিটাল করতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একসময় কৃষির অবদান ছিল ৮০ শতাংশ। অথচ তখন ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। এখন কৃষির অবদান কমে এসেছে মাত্র ১৯ শতাংশে। তার পরও বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়তির দিকে। মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে এটাই ডিজিটাল অর্থনীতির প্রাথমিক রূপ। এরপর কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, আইওটি ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষি অর্থনীতিকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে। আবার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য মেধা ও প্রযুক্তির ব্যবহারই হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতি। উৎপাদনশীলতাকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আধুনিক বিশ্বে মেধাভিত্তিক সম্পদ যাদের বেশি রয়েছে তারা কিন্তু কৃষি, শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা খাতসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে। যার কারণে অনেক শিল্পোন্নত দেশের কৃষি উৎপাদন কৃষিভিত্তিক দেশের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৩৭ ভাগ অবদান রাখছে মেধাভিত্তিক সম্পদ। চীন, ভারত এখন মেধাভিত্তিক সম্পদ গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।
২০২২ সালে চীনে ডিজিটাল অর্থনীতির পরিমাণ ৫০ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ডিজিটাল অর্থনীতি চীনের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ও অর্থনীতির রূপান্তর বেগবান করার গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। চীনে ডিজিটাল অবকাঠামোর আকার অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বড় সুবিধা হচ্ছে, তারা দ্রæত আপগ্রেড টেকনোলজি নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারে। দেশে বর্তমানে ১৮ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল সংযোগ আছে এবং অন্তত ১৫ কোটি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এখন ৫ মিনিট ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়বে তা চিন্তাও করা যায় না। অথচ আজ থেকে ১০ বছর আগে ইন্টারনেটের কোনো প্রভাবই অর্থনীতিতে ছিল না। ফেসবুক ব্যবহার করে হাজার হাজার তরুণ নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ফেসবুক থেকে সরাসরি জিনিসপত্র বেচাকেনা হচ্ছে। ইন্টারনেটে জিনিস পছন্দ করে অর্ডার দিলেই তা বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে। মূল্য পরিশোধ করে ভোক্তা তা গ্রহণ করতেও পারছে।

সরকারের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি ইতিবাচকভাবে বিকাশমান। বিপুল পরিমাণ ফ্রিল্যান্সার গড়ে উঠেছে। যাদের মাধ্যমে অর্জন অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে বসেই বাংলাদেশের অনেক নারী-পুরুষ ফ্রিল্যান্সার পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিষ্ঠানের আওতায় স্থায়ীভাবে কাজ করছে। এ অর্জনগুলো এখনো পুরোপুরি দৃশ্যমান হচ্ছে না। ঋণপত্র খোলা থেকে শুরু করে পণ্য জাহাজে ওঠা ও তার বিপরীতে অর্থপ্রাপ্তির মাধ্যমে রফতানির ক্ষেত্রে কার্যক্রমগুলো যতটা দৃশ্যমান, একজন ফ্রিল্যান্সারের কার্যক্রমগুলো সেই তুলনায় দৃশ্যমান হতে পারেনি। তবে দৃশ্যমান না হলেও জিডিপিতে তাদের অবদান প্রকাশ পাচ্ছে। এভাবে ডিজিটাল অর্থনীতির ব্যাপ্তিও বাংলাদেশে বাড়ছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল জিডিপি কমেনি। মোট জিডিপির আকার অনেক বেড়েছে, সেখানে ডিজিটাল জিডিপির অংশ কম দেখা যাচ্ছে। করোনাকালে সামগ্রিক কর্মকাÐ কিছুটা বিঘিœত হয়েছে, এর কিছু প্রভাব ডিজিটাল জিডিপিতে পড়তে পারে। এছাড়া আমাদের পেমেন্ট গেটওয়েগুলো নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে ইনফরমাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়ছে। মূল কথা হলো, মোট জিডিপিতে ডিজিটাল জিডিপি যতটা দৃশ্যমান হওয়ার কথা ততটা হচ্ছে না। আদতে ডিজিটাল জিডিপি কমছে না বরং বাড়ছে।
পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং যুগোপযোগী করা দরকার। মানবসম্পদের ৯০ শতাংশই এখনো কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাদের যদি মেধাভিত্তিক সম্পদে পরিণত করা যায়, তাহলে সত্যিকার ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। থাইল্যান্ডের জাতীয় নীতিমালা হচ্ছে, তারা যা-ই উৎপাদন করুক না কেন এর মাধ্যমে ১৫ শতাংশ সৃজনশীলতার মাধ্যমে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে। এ মূল্য সংযোজন বাড়াতে হলে মেধাবী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। সৃজনশীলতা বাড়ানো এবং মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। দেশে ৪০টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। এখান থেকে যারা পাস করে বের হচ্ছেন তারা যে খুব ভালো করতে পারছেন এমনটাও নয়। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া শতকরা পাঁচজন ছাত্রছাত্রীকে প্রোগ্রামার হিসেবে পাওয়া যায় না। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সৃজনশীলতা বাড়ানোর কোনো সংযোগ নেই। যার কারণে উচ্চশিক্ষার হার বাড়লেও মেধাবী মানবসম্পদের পরিমাণ বাড়ছে না। বাংলাদেশে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে যাওয়ার পথে বড় বাধা।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনলাইন শ্রমশক্তির সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে গৃহিণীরা এ খাতে যেভাবে যুক্ত হচ্ছে, পর্যাপ্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে এ খাতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে সরকার যে কাজটি করতে পারে তা হচ্ছে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা, তরুণ-তরুণীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সহজ করা। যদি শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এসব সুবিধা নির্বিঘœ করা যায়, তবে খাতটি দ্রæত এগিয়ে যাবে। এ খাতের সুবিধা হচ্ছে, খুব বেশি পুঁজি লাগে না। বাসায় বসে কম্পিউটার বা যে কোনো স্থানে মোবাইলে কাজ করা যায়। এর জন্য অফিস বা আলাদা জায়গার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ফ্রিল্যান্সাররা ১০ কোটি ডলার আয় করছে। ক্রমেই এ আয় বাড়বে এবং অর্থনীতির একটি শক্তিশালী খাতে পরিণত হবে। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মূলত সেলস ও মার্কেটিংয়ে পারদর্শী। অন্যদিকে ভারতের ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে। এদিকটিতে বাংলাদেশের তরুণ ও যুবশ্রেণী পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ পেলে দ্রæতই অগ্রসর হতে পারবে। এতে আয়ও বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে যে হারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে তাতে স্ব-উদ্যোগ ও স্বনিয়োজিত আউটসোর্সিং হতে পাওে বেকার সমস্যা নিরসন এবং অর্থনীতির অন্যতম খাত। বলার অপেক্ষা রাখে না, মেধাবিকাশ এবং সম্মানজনকভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাতটি নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। অনেক শিক্ষিত নারী যারা চাকরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, তারা এ কাজে বেশি যুক্ত হতে পারে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনেক শিক্ষিত নারী এ খাতে যুক্ত হয়েছেন। নিজের সংসার খরচ চালানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। আউটসোর্সিংয়ের খাতটি এমনই যে প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও তা করা যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ৬৫ শতাংশ তরুণ যাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এ বিপুল তরুণ শ্রেণীর ওপরই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নির্ভর করছে। তবে তাদের সিংহভাগ ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়টি অবগত নয়। তাদের অবহিত করে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ খাতে নিয়োজিত করতে পারলে দেশের অর্থনীতির গতি আরো বাড়বে।

ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সাভারে
বিজ্ঞান প্রযুক্তির এক অপার বিস্ময় ন্যানো টেকনোলজি। বাংলাদেশে কৃষি, চিকিৎসা এবং বস্ত্রশিল্পে ন্যানো টেকনোলজি প্রয়োগ করতে চায় সরকার। এজন্য এ বিষয়ে গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সাভারে স্থাপন করা হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। সেখানে ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস তৈরি ও ক্যারাক্টারাইজেশনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ন্যানো টেকনোলজিতে দক্ষ জনবল তৈরি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ইনস্টিটিউট অব ন্যানো টেকনোলজি’ শীর্ষক প্রকল্পটি ৩৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সাভারের গণকবাড়িতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনস্টিটিউটটি স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

slot qris

slot bet 100 rupiah

slot spaceman

mahjong ways

spaceman slot

slot olympus slot deposit 10 ribu slot bet 100 rupiah scatter pink slot deposit pulsa slot gacor slot princess slot server thailand super gacor slot server thailand slot depo 10k slot777 online slot bet 100 rupiah deposit 25 bonus 25 slot joker123 situs slot gacor slot deposit qris slot joker123 mahjong scatter hitam

sicbo

roulette

pusathoki slot

orbit4d slot

pusatmenang slot

https://www.firstwokchinesefood.com/

orbit4d

https://www.mycolonialcafe.com/

https://www.chicagotattooremovalexpert.com/

fokuswin

slot bet 200

pusatmenang

pusatplay

https://partnersfoods.com/

https://www.tica2023.com/

https://dronesafeespana.com/

https://mrzrestaurants.com/

slot server luar