বেনিফিট অফ ডাউট মাতৃভূমি এবং মানবতার বিরুদ্ধে যেন না যায়


হীরেন পণ্ডিত: বেনিফিট অফ ডাউট যেন প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চলে না যায়, মানবতার বিরুদ্ধে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের এটিই কর্তব্য। তাহলেই আমাদের দেশের জনগণের মঙ্গল হবে, আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিজ মাতৃভূমিকে সম্মানের ও গৌরবের আসনে রাখা যাবে।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আবার আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এবারের আলোচনার সূত্রপাত একটি বিবৃতিকে কেন্দ্র করে। এই ১৬০জন বিশ্ব নেতার বিবৃতি সংগ্রহেরও মূল কারিগর তিনি নিজে এমনটা মনে করছেন সবাই। প্রায় ২২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই বিবৃতি সংগ্রহ করা হয়েছে এবং গত মার্চ মাসে এরকম ৪০ জনের বিবৃতি সংগ্রহ করতেও ২০ লাখ ডলার খরচের বিষয়গুলো গণমাধ্যমে উঠে এসেছিলো। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা ১৬০ জনের একটি খোলাচিঠি গণমাধ্যমে খবর হওয়ায় শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে বাদ-প্রতিবাদ।
ড. ইউনূসের নোবেল বিজয়ে হিলারির ভূমিকার কথা সর্বজনবিদিত। হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটনের ফাউন্ডেশনে ইউনূসের বিরাট অঙ্কের অর্থদানের কথাও আগে শোনা গিয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এ চিঠি প্রকাশ করা থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজস্ব বোর্ড আয়করের মামলা করার আগে সাত-পাঁচ অনেক ভাবে, আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে থাকে। ঘটনার পেছনে সারবস্তু না থাকলে রাজস্ব বোর্ড অবশ্যই এমন একজন বিশ্ববিখ্যাত এবং আমাদের গর্ব নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে মামলা করত না। আইন নিজস্ব গতিতে চলছে, কোনো বিবৃতিতে মামলার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। ড. ইউনূস মামলায় জিততে পারেননি বারো কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে নির্ধারিত বয়সের বেশি বয়সেও অধিষ্ঠিত থাকা নিয়েও তিনি শেষ পর্যন্ত লড়েছেন এবং শেষে হেরেছেন।

এসব সম্মানিত বিশ্ব নেতারা একটি স্বাধীন দেশের আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে এভাবে বিবৃতি দিয়ে কতটা ভালো করলেন, সে প্রশ্নও সামনে আসতে পারে। বিবৃতিদাতারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি সাধারণ আহ্বান জানালেই হতো। সংশ্লিষ্টরা বেশি সচেতন হতো।
অর্থ পাচারের অভিযোগে এবং ড. ইউনূস কর্মীদের বঞ্চিত করার মতো মামলা থেকে নিজেকে বাঁচানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ড. ইউনূস বর্তমানে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। বাদীর আইনজীবীরা বলছেন, মামলায় বাধা সৃষ্টি ও বিচার এড়াতে এ ধরনের বক্তব্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র।
গত ২৮ আগস্ট, শ্রম আদালত তার প্রাক্তন কর্মচারীদের ১৮ জন তাদের ন্যায্য শেয়ার চেয়ে দায়ের করা মামলায় অর্থ পাচারের অভিযোগে ড. ইউনূসকে সমন জারি করে। এ ছাড়া তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
মামলার সঙ্গে জড়িত সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠিটি বিচার বিভাগে সরাসরি হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, “বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের আইন ও বিচার বিভাগ না জেনেই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করছেন। আমি বুঝতে পারছি না কেন তারা এই বিষয়ে এত সোচ্চার”। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে কোনো নেতিবাচক ধারণা না রাখার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জনাব খুরশীদ ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান। “বাংলাদেশে আসুন এবং দেখুন ড. ইউনূসের বিচার কতটা স্বচ্ছভাবে চলছে। শুধুমাত্র ড. ইউনূসের কথার উপর ভিত্তি করে আপনার পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত নয়।”
মা মাটি মাতৃভ‚মি এবং আমাদের স্বাধীনতা একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ও সম্পর্কযুক্ত। একটিকে বাদ দিলে আরেকটির অস্তিত্ব একেবারেই অসম্ভব। আমরা পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে প্রথমেই স্থান পাই মায়ের কোলে। মায়ের কারণেই সুশীতল পৃথিবীর সুন্দর মুখখানি দেখতে পাই। শিশু হয়ে জন্মগ্রহণের পর এই বিশাল ও সুন্দর পৃথিবীর বুকে নিজেকে খুব অসহায় মনে করি। সুন্দর নীল আকাশের নীচে নিজেকে দুর্বল ভেবেছি ও অসহায় বোধ করেছি। তাই মায়ের আদর, যতœ ও ভালোবাসার উপর ভর করে ধীরে ধীরে বড় হয়েছি। অন্যান্য শিশুর মতো ধীরে ধীরে পৃথিবীর আলো বাতাস, তাপ গ্রহণ করে একজন শিশু বড় হয় আমরা সবাই সেভাবেই বড় হয়েছি।
চারদিকের নীল আকাশ, শস্য, শ্যামল, শ্যামলিমা, বন, বনানী, সবুজ মাঠ, সবুজের সমারোহ, ফসলের মাঠ এবং সামগ্রিক সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের সবসময় মুগ্ধ করে রাখে। সবার মতো আমরা চার পাশের প্রকৃতিকে মায়ের মত ভালোবাসতে শুরু করি। দেশের মাটিতেই লালিত পালিত হয় বলে সবার কাছেই এই মাটি মায়ের মত প্রিয় এবং মায়ের মতই সে মাটিকে আমরা ভালোবাসি। একজন মা যেমন সন্তানের কাছে বিপদের বন্ধু, সুখ-দুঃখের আশ্রয়স্থল, অত্যন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র, এক কথায় পূজনীয়। তাই মা ও মাটির সাথে, দেশের সাথে নাড়ির টান ও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মাকে আমরা যেমনভাবে ভালোবাসি, মাতৃভূমিকেও ও আমরা সেইভাবেই ভালোবাসি। বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকবৃন্দ প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বর্গের সাথে তুলনা করেছেন, তুলনা করাও স্বাভাবিক- কারণ জন্মইতো এই প্রিয় পবিত্র মাতৃভূমির উপর, তাই স্বর্ণের চেয়েও পবিত্র বিশুদ্ধ রক্ত দিয়ে তৈরী প্রিয় মাতৃভূমি। মাতৃভূমিকে সবাই করেছেন সম্মানিত, পৃথিবীর মানচিত্রে নিজেদের মাতৃভূমিকে করেছেন গৌরবান্বিত। কবিরা, সাহিত্যিকরা এবং বিশিষ্টজনেরা তাঁদের মাতৃভূমির ভাবনা তাঁদের কথায়, তাঁদের ভাষায়, তাঁদের উচ্চারণে, তাঁদের লেখায় ব্যবহার করেছেন। কখনো কখনো ও তাঁদের কাছে মাতৃভূমিই তাদের কাছে প্রেরণার উৎস বা প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। এই বাঙালি জাতি মহান জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। তাই জন্মদাত্রী জননী আমাদের কাছে যত প্রিয়, ভালোবাসার, যত আপন, জননীকে আমরা যত ভালোবাসি, যেভাবে ভালোবাসি, মাতৃভূমি ও আমাদের মহান স্বাধীনতাকেও আমরা ততোটাই ভালোবাসি। আমাদের কাছে আমাদের স্বাধীনতা ততোটা ভালোবাসার দাবী রাখে।
মাতৃভূমি ও জন্মস্থানের প্রতি মানুষের এ দুর্নিবার আকর্ষণ বা ভালোবাসা, ভালো লাগা, গভীর আবেগ-অনুভূতি ও মমত্ববোধকেই বলে দেশপ্রেম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কিছু করা গৌরবের বিষয়। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিবেদিত মানুষ সমাজের চোখে যেমন সম্মানিত, তেমনি সবার কাছে অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার অধিকারী। দেশপ্রেম একধরনের পরিশুদ্ধ ভাবাবেগ, যা মানুষকে কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্ব সচেতন করে তোলে। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ত্যাগ স্বীকারে উদ্বুদ্ধ করে এবং দেশের জনগণের সেবায় উৎসাহী করে তোলে। দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধের অভাব মানুষের মনুষ্যত্বের মৃত্যু ঘটায়, দেশকে যারা ভালোবাসে না, তারা চরম অকৃতজ্ঞ, তাদের দ্বারা কখনো দেশের মঙ্গল সাধিত হয় না। আর যারা অকৃতজ্ঞ তারা প্রকৃতপক্ষে মানুষ নয়।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যাঁরা দেশের কল্যাণে কাজ করে তারাই প্রকৃত মানুষ। দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করে পারস্পরিক সদাচরণ করতে শেখায়। দেশের মানুষের বিভিন্ন দলমত, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পরস্পরের প্রতি বিরোধ, সংঘর্ষ-সহিংসতা ও প্রতিহিংসার পরিবর্তে একে অন্যের সহযোগিতা, সহানুভূতি ও পৃষ্ঠপোষকতার ভাবধারা গড়ে তোলার জন্য পরমতসহিষ্ণুতার শিষ্টাচার গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ ও স্বদেশের প্রতি মমতা অনেক অন্যায় ও অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে পারে। তাই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করতে হলে অবশ্যই দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। স্বদেশের প্রতি অনুগত থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বাংলাদেশের মানুষ হলে বাংলাদেশকে স্বীকার করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকে মানতে হবে এবং অন্তরে ধারণ করতে হবে। আপনি সরকারের সমালোচনা যত খুশি করতে পারেন। কিন্তু দেশ, মা, মাটি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান বা ছোট করতে পারেন না। সরকার আর রাষ্ট্র এক বিষয় নয়। সরকারের সমালোচনা করা যায় কিন্তু রাষ্ট্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোন কথা বলার বা মন্তব্য করার কোন সুযোগ নেই।
যে কোন পেশা এবং এর মান মর্যাদা রক্ষা সবার দায়িত্ব। এমন কোন কাজ করা কারো উচিত নয় যা দেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ও সার্বভৌমত্বে বিরুদ্ধে যায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতাকে হেয় করা হয় এমন কাজ কারো করা উচিত নয়। বিভিন্ন মহল এটি করতে চাইবে তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কারো ফাঁদে আপনি পা দেবেন কিনা। আমরা যেন কোন মহলের ক্রীড়নক না হয়ে উঠি সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে মা-মাটি-মাতৃভূমি ও দেশমাতৃকার স্বাধীনতাকে হেয় প্রতিপন্ন না করি সেটা সবার মনে রাখতে হবে। সেটা রাখাই অত্যন্ত জরুরি।

তার সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি, যা এ ধরনের বিবৃতি দাবি করে। তবে ড. ইউনূস বাংলাদেশে কী ধরনের কার্যক্রমের সাথে জড়িত আছেন, সে বিষয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই অবগত আছেন। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ১/১১ সেনাসমর্থিত সরকারের সময় প্রধান দুই দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি, ক্ষমতার মধ্যমণি হতে চেয়েছিলেন। সবাই কেবল ক্ষমতায় যেতে চায়। সে সময় গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে ঘুরেফিরে এসেছে ড. ইউনূসের নাম
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি একসময় দারিদ্র্য দূর করার প্রচেষ্টার কারণে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার জন্য বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করার অভিযোগ আসা, কর ফাঁকি, দাতা তহবিলের অবৈধ স্থানান্তর, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিদেশ ভ্রমণ বিধি লঙ্ঘন ইত্যাদি অভিযোগ থাকার কারণে বাংলাদেশে তাঁর বিতর্কিত ভূমিকার ফলে তার খ্যাতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উঠেছে যে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ইউনিয়ন শ্রমিক ও কর্মচারীদের দায়ের করা ১১০টি মামলা কোটি কোটি টাকায় বেআইনিভাবে নিষ্পত্তি করেছেন। ২০১৫ সালেও তিনি বিতর্কিত হয়েছিলেন যখন বাংলাদেশের রাজস্ব কর্তৃপক্ষ ১.৫১ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ কর পরিশোধ না করার জন্য তাকে তলব করা হয়েছিলো।
এসব খবর, এইসব বিবৃতি প্রদানকারী বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। কারণ ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত এবং বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যক্তিরা তাঁর বন্ধু-বান্ধবী বা বেনিফিশিয়ারি। মার্চ ২০১১ সালে, ইউনূসকে দেশের অবসর আইনের লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ব্যাংকের সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে যে অবসরের বয়স ৬০। ইউনূসের বয়স তখন ৭০ বছর। দেশের সর্ববৃহৎ কাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সরে যাবার পেছনে ড. ইউনূসের হাত ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিলো। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালত কর্তৃক কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ হবার পর বাংলাদেশের সবাই এটিকে একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করে।
আর্ত মানবতার সেবায় নিবেদিত অনেক ব্যক্তিই পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতনের শিকার মানুষ রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ড. ইউনূস সামান্যই আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ড. ইউনুসকে অবশ্যই পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে এবং বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী কোনো বিতর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে। ডাউট অব বেনিফিট যেন দেশ মাতৃকার এবং দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চলে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের এটিই কর্তব্য। তাহলেই আমাদের দেশের জনগণের মঙ্গল হবে, আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিজ মাতৃভূমিকে সম্মানের ও গৌরবের আসনে রাখা যাবে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *