আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ও জনগণের প্রত্যাশা


হীরেন পন্ডিত: একটি শোষণমুক্ত গতিশীল সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজ করা খুবই জরুরি। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে দ্রম্নততম সময়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।
আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্স্নোগানকে সামনে নিয়ে আসে গত বছরের সম্মেলনে। এরপর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশকে সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কথা বলতে থাকেন দলের সংশ্লিষ্টরা। আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের বক্তৃতায় স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা প্রচার করছেন। এর মাধ্যমে জনগণকে স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসা এবং জনমত নিজেদের পক্ষে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই পরিকল্পনা পূর্ণতা পাবে এটাই প্রত্যাশা সবার। সেই সঙ্গে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হোক মূল লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তো থাকবেই। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, মূল লক্ষ্য হবে খাতভিত্তিক যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে গত ১৫ বছরে, আগামী ৫ বছরে এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই রূপ দেওয়া। এর সুফল যাতে দেশের সব মানুষ পায় এবং বাংলাদেশকে একটা কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করতে যা যা পদক্ষেপ দরকার, খাতভিত্তিক সেই পদক্ষেপগুলোর নেওয়ার ক্ষেত্রে অঙ্গীকার গ্রহণ করাতে হবে এই ইশতেহারে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালির মুক্তির জন্য যে লক্ষ্য ছিল, আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ সব ক্ষেত্রে সেটিকে গুরুত্ব সহকারে, চেতনা হিসেবে তা গ্রহণ করতে হবে।

নির্বাচনী ইশতেহারের কয়েকটি লক্ষ্য থাকবে বলে জানা যায়, এর মধ্যে একটা হলো ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য। ডেলটা পরিকল্পনা বা ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনা। আরও থাকতে হবে চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়ার পরিকল্পনা। আওয়ামী লীগের ভিশন হলো আবার যদি সরকার গঠন করতে পারে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সোসাইটির ওপর ভিত্তি করে। পাশাপাশি প্রতিটি গ্রামকে একটি শহরে রূপান্তর করার ওপর আরও জোর দিতে হবে।

অতীতের ইশতেহারগুলোর সঙ্গে এবারের ইশতেহারে অনেক পার্থক্য থাকবে বিশেষ করে ২০১৮ সালে করোনা মহামারির কথা কেউ ভাবেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো কোনো যুদ্ধ হবে, সেটিও কারও ভাবনায় ছিল না। বিশেষ করে করোনা মহামারি, যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্থবিরতা, বিদেশিদের অভ্যন্তীরণ বিষয়ে নাক গলানো, অহেতুক পরামর্শ দেওয়া, বিদেশিদের কাছে নালিশ জানানো, অপপ্রচার, গুজব, সরকারের উন্নয়ন কোনো কোনো সুশীল সমাজের চোখে না পড়া, সবকিছু নিয়েই রাজনীতি ও অপরাজনীতি করা, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, দক্ষ যুবশক্তি তৈরি করা, বৈদেশিক বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক শ্রমবাজারের জন্য নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করা ও রিজার্ভের পতন ঠেকানোসহ এসব বিষয়কে মাথায় রাখতে হচ্ছে। তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ইশতেহারে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে, আগামী কয়েকটি প্রজন্মের জন্য।

এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার দেওয়া হবে। এর লক্ষ্য হবে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এতে দক্ষ নাগরিক তৈরির পাশাপাশি স্মার্ট অথনীতি, স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট শিল্পনীতিসহ দেশবাসীর স্মার্ট সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিয়ে সরকার সাধুবাদ কুড়িয়েছে। তবে, মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। কৃষিপণ্য উৎপাদনেও এসেছে বড় ধরনের সাফল্য- তা ধরে রাখতে হবে। তবে, কৃষিতে প্রযুক্তিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টিও সরকারের দিক থেকে সাফল্যের নতুন মেরুকরণ।

দুর্নীতির বিষয়টি ঘুরে ফিরে আলোচনার শীর্ষে এসেছে। অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল দ্বিতীয় কিন্তু কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হয়নি। মানুষের জীবনযাত্রার মান এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে।

বিদু্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে। শিল্পে নতুন বিদু্যৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দু’টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং দু’টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার ঘটনাও সরকারের জন্য স্বস্তির ঘটনা। তবে, দফায় দফায় তেল ও ছয় দফায় বিদু্যতের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। অগ্রাধিকারের বিষয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমনের বিষয়টি বেশ ইতিবাচক।

তবে, এবার নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ সজাগ দৃষ্টি নিয়ে আছে। নির্বাচনে অনিয়মের আলামত দেখলে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাঁয়তারা করছে। আর তা হবে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই বিপর্যয়কর। অথচ আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় গতিশীলতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কিছু অনিয়ম, দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন ও পুঁজি পাচারের অভিযোগ সেসব অর্জনকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জনগণের বিবেচনায় ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়েছে, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করোনার কারণে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির সুবিধাগুলো বজায় রাখার জন্যই বাংলাদেশ এ অনুরোধ করে। অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। যেমন- পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু করা, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ প্রকল্প, রামপাল বিদু্যৎ প্রকল্প, বাঁশখালী বিদু্যৎ প্রকল্প।

দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছেই জনগণের সব প্রত্যাশা। এর মূল কারণ, এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক চর্চার বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলটি বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছে। এই দল জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে। অনেক উন্নয়ন উপহার দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি। দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং সরকার করোনা মহামারিকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে।

এছাড়া আরও অনেক ইতিবাচক অর্জনও রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি রয়েছে। আসলে মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই। জনগণ মানবিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার এবং দেশ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাছে প্রত্যাশা করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৪২ বছর এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নানাবিধ সংকট ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে সংগঠিত করেছেন, ক্ষমতায় এনেছেন। শুধু দলই নয়, সারাদেশ ও দেশের মানুষকে তিনি জানেন এবং সবাইকে বুঝতে চেষ্টা করেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের রয়েছে তার ওপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। সভাপতি শেখ হাসিনা দলের হাল ধরে আছেন। আমরা বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির কথা শুনি। আর্থিক অনিয়ম দূর করতে আওয়ামী লীগকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আরও মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে দাঁড়ানো, গণতান্ত্রিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার বিশেষ করে এই তিনটি ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যাশা থেকে একটু দূরে।

মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই স্থান পূরণ করতে হবে এবং এটাও সম্ভব নয় যে, অন্য দল এসে সব রাতারাতি পরিবর্তন করবে। তবে, প্রত্যাশা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান রয়ে গেছে। এটা সামাজিক এবং মানবিক মর্যাদা সম্পর্কে, এটা নির্বাচন সম্পর্কে। সরকার এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। জনগণের প্রত্যাশা সরকার পূরণ করবে এবং এই সমস্যাগুলো দূর করতে সচেষ্ট হবে।

কাজ করলে সমালোচনা আসবে, ষড়যন্ত্র থাকবে, গুজব অপপ্রচার থাকবে, কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে রাখা ছিল। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য তাদের বাজেট থেকে সরাসরি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। এটি সত্য যে- যা ভালো কিছু অর্জন শুধু স্বাধীনতা অর্জন বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব চিরস্থায়ী ও টেকসইকরণ এবং এর অর্থনীতির মজবুত ভিত্তিমূল জাতির পিতা তৈরি করে গেছেন। জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা ও মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পথনকশা ও নির্দেশনা তিনি দিয়ে গেছেন।

আওয়ামী লীগের অতীতের ইশতেহারে সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়নের পথনকশা ছিল। এটি সত্য যে, গণমানুষের দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ইশতেহার কেবল একটি দলীয় ইশতেহার নয়, এটি প্রকৃত অর্থে গোটা জাতির অগ্রগতির ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইশতেহার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে সেটি গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের কিছু কার্যক্রম ও নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা উলেস্নখ করা যায়। জাতীয় অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক দলের ভূমিকা অপরিহার্য। যদিও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কতগুলো বিষয়ে নজর দিতে হবে। তা হলো মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিশ্রম্নতি ছিল। প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হলেও আরও গতি বৃদ্ধি করতে হবে। শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে তার একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

এ ছাড়া যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমৃদ্ধি ও ২০৪১ সারের স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করার জন্য আরও উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। আগামী দিনের জন্য প্রতিশ্রম্নতির পাশাপাশি বিগত সময়ের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও ১৫ বছরের উন্নয়ন চিত্রও তুলে ধরা প্রয়োজন ইশতেহারে। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এতে স্থান পেয়েছিল ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার। এগুলোর বর্ণনা ছিল। ২০০৮ সালের ‘দিন বদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ২০১৮ সালের ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’।

২১টি বিশেষ অঙ্গীকারে ছিল: আমার গ্রাম-আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রম্নত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদু্যৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষিব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বস্নু-ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়নসহ নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা প্রদানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ও অটিজম কল্যাণ এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নসমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এগুলোতে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে বা অঙ্গীকারগুলোকে আবারও পর্যালোচনা করে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, আরও কতটুকু কাজ করা প্রয়োজন সেগুলো অবশ্যই ভাবতে হবে।

একটি শোষণমুক্ত গতিশীল সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজ করা খুবই জরুরি। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে দ্রম্নততম সময়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

দেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথমে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময় অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ বছর পরপর জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের প্রিয় দলকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। জনপ্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান কিছু থেকেই যায়। বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করতে যা যা পদক্ষেপ দরকার সেগুলো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

হীরেন পন্ডিত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *