Togel Online

Situs Bandar

Situs Togel Terpercaya

Togel Online Hadiah 4D 10 Juta

Bandar Togel

বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে

হীরেন পণ্ডিত: এশিয়ার দেশগুলোয় ব্যবসা করা জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলে উল্লেখ করেন জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা। তিনি বলেন, অন্য দেশ থেকে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান হোন্ডা বাংলাদেশে কারখানা খুলেছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিজেআইটি এ দেশে উৎপাদন শুরু করেছে। বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসবে।

গত এপ্রিলে টোকিও সম্মেলনে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আগের বিস্তৃত সম্পর্ক থেকে কৌশলগত সম্পর্কে পৌঁছেছে উল্লেখ করে নিশিমুরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ ও দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে বিদ্যমান ব্যবসায়িক পরিবেশ উনয়নের পরামর্শ দেন।

জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উনয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় সম্প্রতি এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ৩ টি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের শিল্প-উন্নয়ন, জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানান্তর ও বাস্তবসম্মত জ্বালানি ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টোকিও ইতোমধ্যে জাইকার মাধ্যমে বাংলাদেশে বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করে যাচ্ছে। গত এপ্রিলে জাইকা বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়ন সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। জাইকা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নেও সহায়তা করছে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে পরিচিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ঢাকার মেট্রোরেল আংশিকভাবে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মোট বিনিয়োগ ৩৮০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৫ শতাংশ চায় ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) হোক।

২০২২ সালে বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। এটি একটি রেকর্ড। গত এক দশকে বাংলাদেশে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ গুণ বেডছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে উভয় দেশ এখন ইপিএর জন্য কাজ করছে। ২০২৬ সালের আগেই ইপিএ সই হতে পারে। সে বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।

জাপানি ব্যবসায়ীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন সেজন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। বাংলাদেশে চিকিৎসা, কৃষি, ও জ্বালানির মতো অনেক সম্ভাবনাময় খাত আছে যেখানে জাপানি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারেন।’

বিডার বেশিরভাগ সেবা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে আমরা নিশ্চিত করতে যাচ্ছি যে সব পরিষেবা এক জায়গা থেকে দেওয়া হবে।

সুপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর দক্ষতা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়নের ও অগ্রগতির স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করবে। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে ২০২৬ সালে, তাই আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার করে, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন করে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখে এবং সর্বোপরি দুর্নীতি রোধ করে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগ আকর্ষণ হতে পারে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ৭১ শতাংশ জাপানি কোম্পানি সন্তুষ্ট নয়। সম্প্রতি জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হলে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণে উদ্যোগী হবে। গত বছরের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন ৭৪টি কোম্পানি তাদের মতামত দিয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশে তারা অসন্তুষ্ট। ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা কিছুটা অসন্তুষ্ট। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি আছে এমন কোম্পানি ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।

ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও জেট্রোর জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে থাকা জাপানি কোম্পানিগুলোর ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ আগামী এক-দুই বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। জাপানি ব্যবসায়ীদের এমন মনোভাবের ক্ষেত্রে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া। তবে কিছুটা এগিয়ে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। জাপানি কোম্পানিগুলোর ৭২ শতাংশ ভারতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়।

অবকাঠামো উন্নয়ন, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা, সামষ্টিক অর্থনীতির সক্ষমতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, ব্যবসায় গতিশীলতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি আমাদের প্রচেষ্টাকে সাফল্যের সীমনায় পৌঁছে দিতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায় ঝুঁকির দিক বিবেচনায় সরকারি লাইসেন্স বা অনুমোদন, বিনিয়োগের অনুমতি, কর সম্পর্কিত বিষয় এবং ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে জাপানি কোম্পানিগুলো মনে করে।

জাপানি কোম্পানিগুলো ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অপছন্দের শীর্ষে রেখেছে দু’টি ক্ষেত্রে। প্রথমটি ব্যবসার অনুমোদন ও সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি, দ্বিতীয়টি কর ব্যবস্থার অদক্ষতা। প্রায় ৮০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি মনে করে, এ দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আর ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ জাপানি কোম্পানি মনে করে, কর ব্যবস্থার অদক্ষতা ব্যবসার ক্ষেত্রে এ দেশে বড় বাধা। এছাড়া বিদেশী মূলধনের আইনি কাঠামো বা ভিত্তি তৈরি এবং বিদেশীদের ভিসা ও কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) প্রাপ্তির জটিলতাও বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। যদিও এ দু’টি ক্ষেত্রে মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ।

জরিপে ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোথায় এবং কেন এগিয়ে রয়েছে। জবাবে জাপানি কোম্পানিগুলো চারটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পছন্দের তালিকায় রেখেছে। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে সস্তা শ্রম, শ্রমিক ও কর্মচারীর সহজ প্রাপ্তি, বিশেষায়িত জনশক্তি ও প্রকৌশলীর সহজ প্রাপ্তি এবং বিদ্যমান বাজার। জরিপে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি ‘সস্তা শ্রমের’ জন্য বাংলাদেশকে ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে শীর্ষে রেখেছে।

গত বছর বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে জাপানিদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল শুল্ক ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার দামের অস্থিরতা। ২০২১ সালে ছিল দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি ও মজুরি বৃদ্ধি। জরিপে অংশ নেয়া ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, প্রথম চ্যালেঞ্জ শুল্কায়ন ব্যবস্থার জটিলতা। আর ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ কোম্পানি বৈদেশিক মুদ্রার দামের অস্থিরতাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছে।

সার্বিকভাবে জরিপে জানতে চাওয়া হয়, পণ্য উৎপাদন খরচ কোন দেশে কেমন। এর জবাবে দেখা যায়, জাপানে যে পণ্য উৎপাদনে খরচ ১০০-তে ১০০, সেখানে বাংলাদেশে সেই পণ্য উৎপাদনে খরচ ৬০ শতাংশের কম। বাংলাদেশের চেয়ে পণ্য উৎপাদনে খরচ কম পড়ে শুধু কম্বোডিয়া ও লাওসে। বাংলাদেশের জন্য জাপানের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে, সেগুলো দূরীভূত করার ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশীদের কাজের অনুমতিপত্র বা ওয়ার্ক পারমিট যাতে তিনদিনের মধ্যে দেয়া যায় সে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ভিয়েতনামের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে যাতে ব্যবসাসংক্রান্ত সেবার অনুমোদন চূড়ান্ত করা যায়, সেই কাজও করছে বিডা। বাংলাদেশে এখনো কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অনেক ধরনের কাগজপত্র চায়। সময় লাগে বেশি, খরচও অনেক দেশের তুলনায় অধিক। শুল্কায়ন জটিলতা কমাতে জাপানি কোম্পানিগুলোকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর বা এইও সুবিধা ব্যবহারের আহ্বানও জানানো হয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা মানেই বিদেশী বিনিয়োগ চলে এসেছে এমনটি নয়, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হলে প্রণোদনা দিতে হবে। এটিকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন।

মোটা কথা, নতুন একটি উদ্যোগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি আমাদের দেশে বিরাজ করে তা বিদেশীদের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান হলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে না। এজন্য বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এটি শুধু জাপানিদের জন্য নয়, সব দেশের বিনিয়োগকারীর জন্যই প্রযোজ্য।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ)। প্রতিষ্ঠার পর হাই-টেক শিল্পের বিকাশে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে খাতটিতে কিছু দেশী বিনিয়োগ মিললেও কাক্সিক্ষত বিদেশী বিনিয়োগের দেখা মেলেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় দশকের বেশি সময়ে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ১৮ কোটি ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন।

বিদেশী বিনিয়োগ কেন আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখনো ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। যে কারণে কাক্সিক্ষত বিদেশী বিনিয়োগ পাওয়া যায়নি। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ বেশ সম্ভাবনাময় দেশ। যথাযথ পরিকল্পনা ও বিশ্বমানের দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ভবিষ্যতে বিদেশী বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব হবে।

এজন্য সুনির্দিষ্ট পন্থায় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সামনে এগোতে হবে। কেননা প্রযুক্তিজ্ঞানে সীমাবদ্ধতা, দক্ষ জনশক্তি ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রযুক্তি খাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন হচ্ছে না বলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা মনে করছেন। তাদের ভাষ্যমতে, বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতি ও বিশ্বের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা। এক্ষেত্রে আমাদের আরো বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে।

এক্ষেত্রে বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে কমপক্ষে ২০ বছরের বিজনেস প্রবৃদ্ধি মডেলও দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বর্তমান সময়ে বিদেশীদের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। অন্যদিকে যথাযথ দক্ষতা না থাকায় অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম মূল্যে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য সময়োপযোগী প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। প্রযুক্তি খাতের বিস্তারে শিক্ষিত তরুণদের কাজে লাগানো প্রয়োজন।

চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটি যেন বাস্তবায়ন হয় সে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের সফরও যেন ফলাফল বয়ে আনতে পারে সেদিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করা দরকার। এরই মধ্যে বিদেশী কোম্পানিগুলো অ্যাসেম্বল করছে, যা ইতিবাচক। এটি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা আরো প্রসারিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

কয়েক বছর ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্মিত হাই-টেক পার্কে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব পার্কে খুব সামান্য পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম। এদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। এজন্য প্রশিক্ষণযোগ্য বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে গড়ে তুলতে হবে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ অনলাইন ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে চাইলে খুব সহজে এবং দ্রুত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। এছাড়া বিনিয়োগের পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে বলেও কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৬০০ ধরনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয়। তৈরি পোশাকের ২৯২ ধরনের পণ্য থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে। বাকি ১৩ শতাধিক পণ্য থেকে আসে মাত্র ১৫ শতাংশ আয়। কিন্তু এই এক হাজার ৩০০ পণ্যের মধ্যে প্রচুর পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বাজার অনেক বড় এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখী করতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে একদিকে এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে মোট রপ্তানি আয় বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। তাদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। আমদানি, রফতানি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিবিধ ব্যবসা দিনে দিনে বাড়ছে। এতে সরকারগুলো সহায়তা করছে। সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ, চীন, ইন্ডিয়া ও মিয়ানমার (বিসিআইএম) তৈরি হয়েছে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করার জন্য। দেখা যাচ্ছে এসবের ফলে লাখ লাখ বাংলাদেশী-ভারতীয় পর্যটনে, চিকিৎসা পর্যটনে উৎসাহিত হচ্ছে। বাড়ছে আমাদের রফতানি। দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আমাদের রফতানি বাড়বে, রাজস্ব আয় বাড়বে। অবকাঠামো গড়ে উঠবে। তবে, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

slot qris

slot bet 100 rupiah

slot spaceman

mahjong ways

spaceman slot

situs togel

aplikasi togel

togel online sydney