হীরেন পণ্ডিত: চাকুরীর সৌজন্যে অনেক জায়গা দেখার সুযোগ হলো। এবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আমন্ত্রণে ফিলিপাইনের ম্যানিলা শহরে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের এক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে ফিলিপাইন যাওয়া।
ট্রাভেলারদের জন্য স্বর্গতুল্য কয়েকটি দেশের মধ্যে ফিলিপাইন অন্যতম। দেশটির সাদা বালির সমুদ্র সৈকত, মন-মাতানো সাগরতট, আজীবন মনে রাখার মতো সূর্যাস্ত আর সৌজন্যতায় ভরপুর স্থানীয় মানুষজন ফিলিপাইনকে পরিণত করেছে জনপ্রিয় স্থানে।
ফিলিপাইনের সবচেয়ে দামী এলাকা ম্যানিলা। ম্যানিলায় সাধারণ পর্যটকরা খাওয়া-দাওয়া আর পানীয় কেনার ক্ষেত্রে প্রচুর টাকা খরচ করে থাকেন। তাই ম্যানিলায় ঘুরতে যাবার আগে দরকার হলে খেয়ে নিন আগেভাগেই, এতে খাবার খরচ কমে যাবে অনেকাংশেই।
আন্তঃদেশীয় প্রচুর ফ্লাইট আছে ফিলিপাইনে। ওয়ান স্টপ এসব ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা পৌছাতে সময় লাগে সাড়ে ৮ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৯ ঘণ্টার মত। ফিলিপাইনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কম খরচে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো বাস আর ফেরী। সব জায়গায় এই দুই মাধ্যমের সমন্বয়ে যাতায়াত করলে খরচ হবে নামমাত্র।
ম্যানিলা ফিলিপাইনের অন্যতম পর্যটন স্থান। ম্যানিলায় আছে অসামান্য দর্শনীয় অনেক স্থান, যা আপনার সৃজনশীল মনকে নতুন করে ভাবাবে। ম্যানিলা শুধুমাত্র এশিয়ার অন্তর্গত শহরগুলোর মধ্যে নয়, সারা বিশ্বের এটি একটি দুর্দান্ত শহর। এখানে আপনি দেখবেন ফোর্ট সান্তিগো, পিন্টো আর্ট মিউজিয়াম, সান আগস্টিন চার্চ প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান।
ম্যানিলা শহরের মল অফ এশিয়া, রবিন্সনস গ্যালেরিয়া, প্লাজা মিরিন্ডা, ও সালসেডো সেন্টারে কেনাকাটার জন্য অনেক কিছু খুঁজে পাবেন। আবার ব্যাকলারান, গ্রিন হিলস, এস এম মলস ও কুবাও তে সস্তার মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। আর টুরিস্ট স্পটের মধ্যে, ফোর্ট সেন্টিগোতে বাইরে যাওয়ার গেটের সাথে বেশ কিছু গিফট শপ খুঁজে পাবেন।
ফিলিপাইনের ভিসা পেতে হলে আপনার ভারতসহ এশিয়ার যে কোন আরেকটি দেশে ভ্রমণ থাকা ভাল, এতে ভিসা প্রাপ্তি সহজ হয়। ভ্রমণের অন্তত ১ মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করা ভালো। ভিসা প্রসেসিং ফি অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি বাবদ আপনার খরচ হবে ৭৫০০ থেকে ৮০০০ টাকার মত। সাধারণত ৯ থেকে ১২ কর্ম দিবসের মধ্যে ভিসা প্রসেসিং এর কাজ সম্পন্ন হয়।
ফিলিপাইন ৭,১০৭টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। এদের মধ্যে ১১টি বড় দ্বীপ মোট আয়তনের ৯৪% বহন করছে। ফিলিপাইনের মোট আয়তন ২৯৯৭৬৪ বর্গ কিমি।
তাগালগ ভাষা ও ইংরেজি ভাষা ফিলিপাইনের সরকারি ভাষা। তাগালগ ভাষা ফিলিপাইনের প্রায় ৪০% লোকের মাতৃভাষা। প্রায় ৫০% লোক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষাতে কথা বলতে পারেন । এছাড়া ফিলিপাইনে প্রায় ১০০টি স্থানীয় ভাষা আঞ্চলিক উপভাষা আছে।
ফিলিপাইনের লুজন দ্বীপের একটি উপকূলীয় শহর ম্যানিলা । একসময় স্পেন, আমেরিকা ও জাপানের অধীনে থাকা রাজধানী ম্যানিলা শহরে ভিন্ন ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও বেশ কিছু ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে। আর তাই ইতিহাস আঁকড়ে রাখা এই শহরকে “প্রাচ্যেও রোম” বলা হয়। তবে ঐতিহাসিক স্থাপনা ছাড়াও ম্যানিলা শহরে সুন্দর পার্ক ও বিনোদনের নানা আয়োজনসহ অসংখ্য পর্যটন স্থান রয়েছে। আর তাই তো জনপ্রিয় এই পর্যটন শহরে দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমায়।
ম্যানিলা শহরের ইতিহাস ও তাদের সংস্কৃতির ব্যাপারে জানার জন্য পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণীয় স্থান এই পুরাতন স্প্যানিশ দুর্গ। ১৫৯৩ সালে স্প্যানিশ নাবিক ও গভর্নর মিগুএল লপেজ দে লেগাজপি দুর্গটি নির্মাণ করেন। ফোর্ট সেন্টিগো দুর্গ ম্যানিলা শহরের অভ্যন্তরীণ প্রাচীরগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় প্রায় কয়েকশ আমেরিকান কয়েদি এই দুর্গের অন্ধকারে দমবন্ধ হয়ে ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা গিয়েছিলো। এখানের সুসজ্জিত গ্রাউন্ড এবং কর্নারের প্রতিটি কাঠামো যতেœর সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে আর প্রাচীন কেল্লাসহ অন্যান্য স্থাপনা ও প্রতিটি নিদর্শন যেন প্রাচীন ইতিহাস ধারন করে আছে। এখানে ফিলিপাইনের জাতীয় নেতা জোস রিযেলের জাদুঘর পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।
প্রায় ১৪৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা রিযেল পার্ক ম্যানিলা শহরের একটি জনপ্রিয় স্থান। “লুনেটা পার্ক” বা শুধু “লুনেটা” নামেও পরিচিত এই পার্ক ফিলিপাইনের একটি ঐতিহাসিক নগর উদ্যান। পার্কের ভিতরে একটি ভাস্কর্যের বাগান আছে যা ফিলিপাইনের জাতীয় নেতা জোস রিযেলের সম্মানে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এখানের স্মৃতিস্তম্ভ ও ল্যান্ডমার্কগুলোর শিলালিপি পড়লে ফিলিপাইনের ইতিহাস অনেকাংশে জানা যাবে। বাগানের চারদিকে ছড়িয়ে থাকা মিউজিক স্পিকারে শুনতে পারবেন লো বিটের মিউজিক। আর ইচ্ছে হলে ঘোড়া ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। অনেকেই বিকালের দিকে এখানে হাঁটতে আসে। আর রাতের বেলায় এখানের রঙ্গিন ঝর্ণার বর্ণিল সজ্জা নজরে পরার মতো। তবে রিযেল পার্কে বসার জায়গার তুলনায় পর্যটকদের ভিড় অনেক বেশী। বিশেষ করে সন্ধ্যা ৬ টার সময় মিউজিকাল ঝর্ণা দেখার জন্য রিযেল মনুমেন্টের সামনে বেশ ভিড় হয়।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিনোদনের একটি উপযুক্ত জায়গা এই পার্ক যেখানে সারাদিন আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারবেন। এখানে বিশাল বড় একুরিয়ামে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীদের দেখা মিলবে। এছাড়াও নানা প্রজাতির মাছ, পাখি ও সরীসৃপ প্রাণী দেখার পাশাপাশি পানির নিচে শার্কের সাথে সাঁতার কাটারও সুযোগ হবে। ম্যানিলা ওশেন পার্কে জনপ্রতি ১২৮২ টাকায় (ফিলিপাইনের হিসেবে ৩০০ পেসো) ৩ ঘণ্টা ঘুরে বেরানো যাবে।
ম্যানিলার অভ্যন্তরীণ শহরে অবস্থিত রোমান ক্যাথলিক সান অগাস্টান চার্চ ফিলিপাইনের সবচেয়ে প্রাচীন একটি চার্চ। চার্চটি পূর্বে ম্যানিলা শহরের প্রতিষ্ঠাতা ও নগরীর প্রথম জেনারেল
জাতীয় জাদুঘরের অধীনে পরিচালিত ন্যাশনাল প্লানেটারিয়াম মূলত একটি প্ল্যানেট থিয়েটার। ১৬ মিটার লম্বা গম্বুজ আকৃতির এই থিয়েটার পাদ্রে বুরগোস এভিনিউয়ের জাপানিজ গার্ডেন ও চাইনিজ গার্ডেনের মাঝে রিযেল পার্কে অবস্থিত।
ফিলিপাইনের ফাইন আর্ট, উদ্ভিদ বিদ্যা ও প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহের সাথে সাথে ফিলিপাইনদের শিল্পীদের বিভিন্ন চিত্র শিল্পের প্রদর্শনী করা হয়েছে এই জাদুঘরে।
ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্স, ক্যাথে প্যাসিফিক বা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে যেতে পারবেন ফিলিপাইন এর ম্যানিলাতে। তবে সরাসরি কোনও ফ্লাইট নেই তাই ট্রানজিটে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুরে থামতে হয়। সেই ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স ও ট্রানজিটের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ থেকে ম্যানিলা যেতে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
ম্যানিলা শহরের এস এম মল অফ এশিয়া, রিযাল পার্ক, এস এম ম্যানিলা, চায়না টাউন ও ইন্ট্রামুরোসে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের এপার্টমেন্ট, হোটেল, গেস্ট হাউজ ও হোম স্টে আছে।
ম্যানিলা শহরে খাবারের ভিন্নতা চোখে পরার মতো। আর ভিন্ন ভিন্ন রেস্টুরেন্টের মধ্যে বার পিন্টোক্সস, বø্যাক বার্ড,বাইট, সাবরোসো কমফোর্ট ফুডে বেশ ভালো মানের খাবার পাবেন। ম্যাক্সিকান ফ্রাইড চিকেন, কিনিলাও (মাছ, পিয়াজ, কোকোনাট
ম্যানিলা শহরের মল অফ এশিয়া, রবিন্সনস গ্যালেরিয়া, প্লাজা মিরিন্ডা, ও সালসেডো সেন্টারে কেনাকাটার জন্য অনেক কিছু খুঁজে পাবেন। আবার ব্যাকলারান, গ্রিন হিলস, এস এম মলস ও কুবাও তে সস্তার মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। বিকাল বেলা ফোর্ট সেন্তিগোতে ঘুরতে বেশী ভালো লাগে আর তখন নদীর ধারে বসে সন্ধ্যার সুন্দর ভিউ দেখার সুযোগ হবে।