বঙ্গবন্ধু ভবন যেন বাংলাদেশের হৃদয়


হীরেন পণ্ডিত: ইতিহাসঘেরা এ বাড়িটি ১৯৮১ সালের ১০ জুন পর্যন্ত সামরিক কর্তৃপক্ষ দখল করে রাখে। পরে ১৯৮১ সালেই বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে ফিরে আসার পর বাড়িটি ফিরিয়ে দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠনের পর বাড়িটিকে ট্রাস্টের অধীনে দেয়া হয়। পরে ট্রাস্ট বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এর উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট।
বঙ্গবন্ধু ভবন, বাড়িটি এখন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সাক্ষী। এই বাড়ি বঙ্গবন্ধুর। ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি বাংলাদেশ জন্ম ইতিহাসের সূতিকাগার। বাড়িটিকে একখণ্ড বা এক টুকরো বাংলাদেশও বলা যায়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাড়িটি চেতনার সূতিকাগার হিসেবেই বিবেচিত হবে।
কেউ যদি বলেন, তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাচ্ছেন, তাহলে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া মানেই বাংলাদেশের কাছে যাওয়া। ৬০-এর দশক থেকে বাড়িটি বাঙালি জাতির জন্য একটি নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছে। আর সে প্রতীক হচ্ছে সাহস, দৃঢ়তা ও দ্রোহের। এই বাড়ি অর্জন করেছে অমরত্ব। এই বাড়ি সম্পর্কে জানলে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস অনেকটাই জানা হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে এই বাড়িতে বসবাস করেন।
এই বাড়িকে অবলম্বন করেই স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত। আর এ বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা দেশের মানুষ প্রতিটি রাজনৈতিক নির্দেশনার জন্য তাকিয়ে থাকত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই বাড়িটির দিকে।

১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনের সময় এই ৩২ নম্বরের সামনে ভিড় জমে যেত। সবাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুণতেন। কখন বঙ্গবন্ধু পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন সেই প্রত্যাশায় দিন কাটত মুক্তিপাগল বাঙালির। যেন বাঙালির প্রাণভোমরা এখানেই, এই বাড়িতে। বাঙালির প্রাণের উৎস, প্রেরণার উৎস যে এই বাড়িটি তা খুব ভালো বুঝেছিল স্বাধীনতার শত্রুরা। তাই ১৯৭৫-এ এই বাড়িতেই হামলা করে তারা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

শিশু রাসেলও রক্ষা পায়নি ঘাতকদের হাত থেকে। ঘাতকরা মনে করেছিল বা জানত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একজন সদস্য বেঁচে থাকলে তাদের চক্রান্ত ভেস্তে যাবে। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কিন্তু শেষে হত্যা ও চক্রান্তকারীদের বিচার হয়েছে।

এই বাড়িটির সবচেয়ে বড় গুরুত্ব বাড়ে ১৯৭১ সালে। তখনকার অসহযোগ আন্দোলন এ বাড়িকে ঘিরেই পরিচালিত হচ্ছিল। ৩২ নম্বরের বাড়িটি জাতির স্পন্দনের কেন্দ্রে ছিল। বঙ্গবন্ধুর বাড়িটিকে ৩২ নম্বর যাতে না বলা যায় সে জন্য বাড়ির নম্বর বদলে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ৩২ নম্বর বললে মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাড়িকেই বোঝে। মানুষ বঙ্গবন্ধুকেই মনে রেখেছে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না।

১৯৬৬ সালের দিকে যখন ৬ দফা জোরালো হতে থাকে তখন থেকেই বাড়িটির ভাবমূর্তি আরও বাড়তে থাকে। তখন মানুষ ওই বাড়ির সামনে এসেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করত। ১৯৭০ সালের পর ওই বাড়ির গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যায়। সকাল-বিকাল-রাত সবসময়ই জনসমাগম থাকত।

সেই ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন এসব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পরিকল্পনা, নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সবই করেছেন এই বাড়িতে। ১৯৭১-এর উত্তাল দিনগুলোয় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরাও জাতির পিতার সঙ্গে দেখা করার জন্য এখানে ভিড় করতেন।

এ ছাড়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের রূপরেখাও এ বাড়িতেই তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৩২ নম্বরের বাড়িটি ছিল দেশের মানুষের জন্য অবারিত দ্বার। সাধারণ মানুষ সবসময়ই তার কাছাকাছি যেতে পারত। তিনি সবার দুঃখকষ্ট মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, রাজনৈতিক বিভিন্ন মিটিং সব তিনি এখানে থেকেই করতেন। এই বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে অসংখ্যবার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

ইতিহাসঘেরা এ বাড়িটি ১৯৮১ সালের ১০ জুন পর্যন্ত সামরিক কর্তৃপক্ষ দখল করে রাখে। পরে ১৯৮১ সালেই বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে ফিরে আসার পর বাড়িটি ফিরিয়ে দেয়া হয়।

১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠনের পর বাড়িটিকে ট্রাস্টের অধীনে দেয়া হয়। পরে ট্রাস্ট বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এর উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট। জাদুঘরের পেছনের অংশে রয়েছে সম্প্রসারিত নতুন ভবন। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট এ অংশটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র রয়েছে আর পঞ্চমতলায় পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র।

বাড়িটির মূল কাঠামোর কোনো পরিবর্তন না করেই এখানে গড়ে তোলা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে জাদুঘর। আছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র। বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে জানতে হলে দেশের সব নাগরিককে একবারের জন্য হলেও এখানে আসতে হবে।

তিনতলা বাড়ির ভবনে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। অর্ভ্যথনা কক্ষ। একতলার প্রথম কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তোলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এ ছবির মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এ তলায় আরও আছে পরিবারের নিহত অন্য সদস্যদের তৈলচিত্র। এর পাশের কক্ষটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পড়ার ঘর। এখান থকেইে ৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আরও আছে দেখা ও জানার মতো অনেক কিছু।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ভোরে এ ঘরেই বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল এবং শেখ কামাল ও শেখ জামালের দুই নববধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালের দেহ পড়ে ছিল। একটু সামনে এগোলেই বাড়ির মূল সিঁড়ি; জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের স্থান। গুলির চিহ্নগুলো আজও ধারণ করে আছে সিঁড়ির প্রতিটি স্তর।

সিঁড়িটির চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়াও জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সজ্জিত। বিভিন্ন সময় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। ঘরে বঙ্গবন্ধুর কোরআন শরিফ, টুপি, তসবিহ, চশমা, মুজিব কোট, ব্রাশ এবং বহুল ব্যবহৃত পাইপ সংরক্ষিত আছে। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে এই কোরআন তেলাওয়াত করতেন। কারা কর্তৃপক্ষ জেল থেকে বঙ্গবন্ধুর লেখা চিঠিগুলো কেটে বেগম মুজিবের কাছে পাঠাতেন। সেই চিঠিগুলোও সংরক্ষিত আছে।

১৫ আগস্ট রাতে, ঘাতকদের বুলেটে ছিঁড়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর পায়জামা এবং শেখ রাসেলের শার্ট রাখা আছে। বঙ্গবন্ধুকে আরও জানতে ও চিনতে সবাইকে অন্তত একবার এখানে আসতে হবে।

এই বাড়িটি কখনও এতটা শান্ত এবং নির্জন ছিল না। বঙ্গবন্ধু উপরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং প্রায়ই মুখে হাসি নিয়ে মানুষকে সম্বোধন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বাড়িতে প্রচুর ভিড় ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দেয়ার কথা ছিল। ঘাতকদের সরাসরি আক্রমণের কিছুক্ষণ আগে, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যে, কিছু অস্বাভাবিক ঘটতে চলেছে।

বাড়ির লাল টেলিফোনে, তিনি অনুগত অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তোমরা কিছু করো।’ কিন্তু কিছুই করা হয়নি, দেশের রাষ্ট্রপতি, এ দেশের মানুষের প্রিয় বঙ্গবন্ধু, কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন যখন তার পরিবার অসহায় ছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনা ধানমন্ডিতে ৩২-এর এই বাড়িতে প্রবেশ করেন ১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট। বাড়িতে প্রবেশ করেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শেখ হাসিনা, তিনি বলেছিলেন, “এই বাড়িতেই আমার মা, ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রীদের একসাথে হত্যা করা হয়েছিল। খুনিরা আমার চাচা শেখ নাসেরকে বাথরুমে হত্যা করে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে বাড়িটা ধুলোবালি, জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরের মতো দাঁড়িয়েছিল। সে সময় বাড়িটি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেয়া হয়েছিল। এরপর প্রায় প্রতিদিনই মিলাদ করা হতো। ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কী হয়েছিল? সেই ভয়াবহ রাতে বাড়িতে কী ঘটেছিল তা দেখার জন্য সবাই খুব আগ্রহী ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সাংবাদিকদের জন্য ঘরটি খোলা হয় ১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট। সেদিন শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের স্বাগত জানান। জোহরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী এবং আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

যে ছেলেটি ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিল এবং কাজ করত তার নাম রমা। সেদিন সে মরচেধরা চাবি নিয়ে একটি ছোট টিনের বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে দরজা খুলে দেয় সাংবাদিকদের জন্য। এই রমা সেই ভয়াবহ রাতের হত্যার সাক্ষী। সে কোনোভাবে পালিয়ে গিয়ে বেঁচে যায়। সাংবাদিকরা সবাই তার কাছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার স্থানটি দেখতে চেয়েছেন। দর্শকরা যদি নিচ থেকে সিড়ি বেয়ে উপরে যেতে পারতেন, প্রথম দেখাতেই সিঁড়ির মোড় দেখতে পাবেন, সিঁড়ির একেবারে শেষপ্রান্তে দুই-তিন ধাপ এগিয়ে জাতীয় পতাকা, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এই বাড়িতে কী ভয়ংকর দৃশ্য অপেক্ষা করছে তা তখনও সাংবাদিকরা বুঝতে পারেননি। সিঁড়ির শেষে চশমার ভাঙা শেল ও লেন্সের টুকরো রাখা। সেদিন উপরে তাকিয়ে সবার চোখ ছল ছল করে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দুই তলায় আসেন। বাইরের জানালায় দাঁড়িয়ে, ভিতরে সহিংসতার স্থবির দৃশ্যের দিকে তাকিয়েছিলেন। একটি ছোট শোকেসে ভাঙা জিনিস। বামদিকে রঙিন মাছের অ্যাকোরিয়ামে মৃত মাছ, মেঝেতে ধুলো, দেয়ালে ধ্বংসের সমস্ত চিহ্ন-যেন মনে হয়েছিল ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর গভীর রাত এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রমার গল্পে সেই ভয়াবহ রাতের বর্বরতার কথা ।

সেদিন ঘাতকরা শেখ কামালকে হত্যা করে সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। গোলাগুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু ছুটে গেলেন সিঁড়িতে। স্বাভাবিক আওয়াজে আঙুল তুলে তিনি জানতে চাইলেন, ‘তোমরা কী চাও?’ বুলেটের গুলিতে তারা সেই কথার উত্তর দিয়ে চলে যায় ভেতরের দিকে। বঙ্গবন্ধু সেখানেই পড়ে রইলেন। সিঁড়ির ওপরে উঠে দরজার সামনেই বঙ্গবন্ধুর ঘরের দরজা। সেখানে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন বেগম মুজিব, ধরন দেখে মনে হয়েছিল তিনি ছুটে বেরিয়ে আসছিলেন, প্রথমেই তার পায়ে গুলি লেগেছিল।

গোলাগুলির শব্দ শুনে সবাই বঙ্গবন্ধুর রুমে এস জড়ো হন। সবাইকে এই রুমেই হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা পুরো বাড়িতেই হামলা চালায়। বিছানা, বালিশ, গদি, আলমারি, সুটকেস ভাঙচুর করে। বঙ্গবন্ধুর বড় বিছানার পাশে থাকা তিনটি টেলিফোনের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাইডওয়ালে রক্ত জমাট বাঁধা কালো হয়ে ছিল। আলনার জায়নামাজ এই হত্যাকাণ্ডের নীরব সাক্ষী ছিলেন।

সেই রাতে ৩২-এর বাড়িতে কী ঘটেছিল তা নিয়ে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করেছে। কিছু জানা যেত না কারণ এই বাড়িতে প্রবেশ সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। মিরপুর রোডের ৩২ নাম্বার সড়কে প্রবেশের পথে যানবাহন চলাচলের অনুমতি ছিল না। বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন ঘরের দিকে তাকিয়ে ভয় পেতেন যখন দেখেন রক্ষীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সজ্জিত। বাড়ির দেয়ালে গুলির চিহ্ন।

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কী ঘটেছিল সেদিন? বঙ্গবন্ধুকে নয়, শুধু একটি পরিবারকে নয়, সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করার জন্য হত্যা করা হয়েছিল? বঙ্গবন্ধুর হত্যা কি খুনিদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, নাকি তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করা এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করা?

এভাবে একটি পরিবার, একটি দেশ এবং একটি জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। কিন্তু চিরকাল এমন অন্ধকার থাকতে পারে না; আলো অবশ্যই সেখানে উজ্জ্বল হবে, এই ছিল দেশবাসীর কামনা। তাই আলো জ্বলছে সেখানে, আবারও শত শত কণ্ঠে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিত হচ্ছে ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে। সেই চেতনায় সিক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো বিএনএনআরসি।

10 thoughts on “বঙ্গবন্ধু ভবন যেন বাংলাদেশের হৃদয়

  1. When I initially commented I seem to have clicked the -Notify me when new comments are added- checkbox and from now on every time a comment is added I receive 4 emails with the exact same comment. Perhaps there is a means you can remove me from that service? Kudos!

  2. Nice post. I learn something new and challenging on blogs I stumbleupon every day. Its always useful to read through content from other writers and use a little something from their websites.

  3. This is the perfect website for anyone who wants to understand this topic. You know a whole lot its almost tough to argue with you (not that I actually would want toÖHaHa). You definitely put a fresh spin on a topic which has been discussed for years. Excellent stuff, just great!

  4. A motivating discussion is worth comment. I think that you should write more about this subject, it might not be a taboo matter but generally people do not speak about such topics. To the next! Many thanks!!

  5. Im extremely pleased to find this web site. I want to to thank you for your time for this particularly wonderful read!! I definitely savored every part of it and i also have you book-marked to see new information in your web site.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *